মাদারীপুরে শ্রমিক দলের একটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের নতুন মাদারীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত শাকিল মুনশি (৩৩) নতুন মাদারীপুর এলাকার মোফাজ্জেল মুনশির ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর পৌর শ্রমিক দলে লিটন হাওলাদারকে সভাপতি করে একটি কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। এ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। জেলা কমিটির অনেক নেতা-কর্মী লিটনকে আওয়ামীপন্থী অভিযোগ করে পৌর শ্রমিক দলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ও কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

গতকাল দুপুরে শহরের একটি সড়কে অবস্থান নিয়ে পৌর শ্রমিক দলের কমিটি গঠন করায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। পৌর শ্রমিক দলের এই কমিটি নিয়ে লিটন হাওলাদারের সঙ্গে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি শাকিল মুনশির মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়।

পৌর কমিটি বাতিল করতে গতকাল রাতে শাকিল তাঁর কয়েকজন অনুসারী নিয়ে শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় একটি সভায় যাচ্ছিলেন। নতুন মাদারীপুর এলাকায় এলে শাকিলের ওপর হামলা চালান লিটন হাওলাদারের ভাতিজা আল আমিনসহ ১৫-২০ জন। এ সময় শাকিলকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। শাকিলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে কুপিয়ে আহত করা হয় আরও দুজনকে।

এদিকে শাকিলকে হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে দেশি অস্ত্র নিয়ে লিটনের অনুসারীদের সঙ্গে শাকিলের অনুসারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত শ্রমিক দলের নেতা শাকিলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত শাকিলের ভাই রনজু মুনশি বলেন, ‘বিতর্কিত ব্যক্তি লিটন হাওলাদারকে মাদারীপুর পৌরসভা শ্রমিক দলের সভাপতি হিসেবে সম্প্রতি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করেছিল শাকিল। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন লিটন। পরে লিটন তাঁর ভাতিজা আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে এই হামলা চালান। এ সময় শাকিলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই।’

লিটন হাওলাদার শহরের বিসিক শিল্পনগরী এলাকার মফেজ হাওলাদারের ছেলে ও লিটনের ভাতিজা আল আমিন হাওলাদার একই এলাকার আলমগীর হাওলাদারের ছেলে। ঘটনার পর থেকে দুজন পলাতক। অভিযোগের বিষয় জানতে লিটন ও আল-আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দুজনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ এল ক য় এ সময় শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসির ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠন করার নির্দেশ

বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ-সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এমন নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ।

এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফররাজ হোসেন ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে যে অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত করা এবং তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ

বৈঠকে কমিশন সদস্যরা জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’

‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাঁদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তাঁরা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তাঁরা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনা করেছেন, মতামত দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেখানেই গিয়েছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?” আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ