জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করেছে এনসিপি। এখানে আমি উত্তরাঞ্চলের ৩২টি জেলার মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পঞ্চগড়ের ছেলে হিসেবে আপনাদের সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কাজ শুরু করেছি। আমরা খুব শিগগিরই আপনাদের দ্বারে দ্বারে যাব।’

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের বিজয় চত্বরে আজ সোমবার দুপুরে এক পথসভায় সারজিস আলম এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন।

দেবীগঞ্জের ফার্মগেট মোড়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা–কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে সারজিস আলমকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি শহরের বিজয় চত্বরে পথসভায় বক্তব্য দেন। পরে তিনি শতাধিক গাড়িবহর (কার-মাইক্রোবাস) নিয়ে বোদা উপজেলার দিকে রওনা হন। এই গাড়িবহর নিয়ে তিনি পাঁচ উপজেলায় পথসভা করবেন বলে জানিয়েছেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েই শুধু নিজেদের উপস্থাপন করতে চাই না। আমরা কাজ করে দেখাতে চাই এবং সেই কাজের সুযোগ আপনাদের কাছে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী বাংলাদেশে যে নতুন বাংলাদেশ আসছে, এখানে দলের নাম দেখে কিংবা কোনো মার্কা দেখে কেউ আর ভোট দেবেন না। কোন লোকটা কেমন, কে কেমন কাজ করছেন, কার কথার সঙ্গে কাজের মিল কেমন, এসব দেখে আগামীর বাংলাদেশে মানুষ বিভিন্ন মার্কায় এবং দলে ভোট দেবেন।’

সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদের অনেকের সন্তানের মতো। অনেকের ভাইয়ের মতো, অনেকের নাতির মতো। আমরা ভুল করলে আপনারা শুধরে দেবেন। আমরা আপনাদের সেই কথাগুলো শুনতে সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আপনারা এটুকু নিশ্চিত করবেন যে আমরা এখন থেকে আর কোনো কোনো দলের, কোনো মার্কার অন্ধভক্ত হব না। যদি আপনি অন্ধভক্ত হন, তাহলে আপনার মূল্য আর কেউ দেবে না। আপনারা মনে রাখবেন, আপনাদের সন্তানেরা এখন তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আপনাদের সন্তনেরা এখন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সব সময় প্রস্তুত।’  

একপর্যায়ে স্থানীয় ভাষায় সারজিস আলম বলেন, ‘হামার দেবীগঞ্জের যে লোকলা আছেন তুমার (আপনাদের) সাথে খুব দ্রুত আমাদের দেখা হবে, দেবীগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রামে, ইউনিয়নে, রাস্তাঘাটে। হামরা হামার (আমাদের) মার্কা লেহেনে (নিয়ে) দলের নাম লেহেনে তুমার লগত (আপনাদের কাছে) ভোট চাহিবা অসিমো (চাইতে আসবো)। হামরা যদি কাজ করিবা পারি, যদি তুমার কথা রাখিবা পারি, তাহিলে ভোট দিবেন, নাহিলে দিবেননি। অন্যলার মতো হামরা কহিমোনি যে, হামাক দেন। এই কাথা কহিমোনি। যদি হামরা কাজ করিবা পারি, তুমার কাথা শুনি, ভোট ছাড়াও তুমার সামনোত যাই তাহিলে ভোট দিবেন।’  

সারজিস আলম আরও বলেন, ‘এত দিন ধরে সাধারণ মানুষকে নেতারা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। তারা খালি ভোটের আগের দিন ভোট চাইতে যায় আর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়। আর ভোটটা শেষ হওয়ার পর তার কাছে একটা একটা পিয়ন পদ, একাট ভিজিডি কার্ড, একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড যে কাজেই যান না কেন, কাজ হওয়ার আগেই তারা টাকার জন্য হাত পেতে বসে থাকে। এই নতুন বাংলাদেশে এগুলো আর হতে দেওয়া যাবে না। যে যেই জায়গা থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ না করে সাধারণ মানুষের কাছে লুটপাট করবে, তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আর এই বাংলাদেশে মেনে নেওয়া যাবে না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, পাঁচ বছরে এক দিন যদি আপনি তার কাছে কিছু নেন, বাকি পাঁচ বছর সে আপনার রক্ত চুষে খাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন দ র স ক জ কর উপজ ল আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ