হামরা কাজ করিবা পারিলে ভোট দিবেন, নাহিলে দিবেননি : সারজিস আলম
Published: 24th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ‘ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করেছে এনসিপি। এখানে আমি উত্তরাঞ্চলের ৩২টি জেলার মুখ্য সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পঞ্চগড়ের ছেলে হিসেবে আপনাদের সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কাজ শুরু করেছি। আমরা খুব শিগগিরই আপনাদের দ্বারে দ্বারে যাব।’
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরের বিজয় চত্বরে আজ সোমবার দুপুরে এক পথসভায় সারজিস আলম এ কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন।
দেবীগঞ্জের ফার্মগেট মোড়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা–কর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে সারজিস আলমকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি শহরের বিজয় চত্বরে পথসভায় বক্তব্য দেন। পরে তিনি শতাধিক গাড়িবহর (কার-মাইক্রোবাস) নিয়ে বোদা উপজেলার দিকে রওনা হন। এই গাড়িবহর নিয়ে তিনি পাঁচ উপজেলায় পথসভা করবেন বলে জানিয়েছেন।
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েই শুধু নিজেদের উপস্থাপন করতে চাই না। আমরা কাজ করে দেখাতে চাই এবং সেই কাজের সুযোগ আপনাদের কাছে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী বাংলাদেশে যে নতুন বাংলাদেশ আসছে, এখানে দলের নাম দেখে কিংবা কোনো মার্কা দেখে কেউ আর ভোট দেবেন না। কোন লোকটা কেমন, কে কেমন কাজ করছেন, কার কথার সঙ্গে কাজের মিল কেমন, এসব দেখে আগামীর বাংলাদেশে মানুষ বিভিন্ন মার্কায় এবং দলে ভোট দেবেন।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা আপনাদের অনেকের সন্তানের মতো। অনেকের ভাইয়ের মতো, অনেকের নাতির মতো। আমরা ভুল করলে আপনারা শুধরে দেবেন। আমরা আপনাদের সেই কথাগুলো শুনতে সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু আপনারা এটুকু নিশ্চিত করবেন যে আমরা এখন থেকে আর কোনো কোনো দলের, কোনো মার্কার অন্ধভক্ত হব না। যদি আপনি অন্ধভক্ত হন, তাহলে আপনার মূল্য আর কেউ দেবে না। আপনারা মনে রাখবেন, আপনাদের সন্তানেরা এখন তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আপনাদের সন্তনেরা এখন যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সব সময় প্রস্তুত।’
একপর্যায়ে স্থানীয় ভাষায় সারজিস আলম বলেন, ‘হামার দেবীগঞ্জের যে লোকলা আছেন তুমার (আপনাদের) সাথে খুব দ্রুত আমাদের দেখা হবে, দেবীগঞ্জের প্রত্যেকটি গ্রামে, ইউনিয়নে, রাস্তাঘাটে। হামরা হামার (আমাদের) মার্কা লেহেনে (নিয়ে) দলের নাম লেহেনে তুমার লগত (আপনাদের কাছে) ভোট চাহিবা অসিমো (চাইতে আসবো)। হামরা যদি কাজ করিবা পারি, যদি তুমার কথা রাখিবা পারি, তাহিলে ভোট দিবেন, নাহিলে দিবেননি। অন্যলার মতো হামরা কহিমোনি যে, হামাক দেন। এই কাথা কহিমোনি। যদি হামরা কাজ করিবা পারি, তুমার কাথা শুনি, ভোট ছাড়াও তুমার সামনোত যাই তাহিলে ভোট দিবেন।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘এত দিন ধরে সাধারণ মানুষকে নেতারা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছে। তারা খালি ভোটের আগের দিন ভোট চাইতে যায় আর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়। আর ভোটটা শেষ হওয়ার পর তার কাছে একটা একটা পিয়ন পদ, একাট ভিজিডি কার্ড, একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড যে কাজেই যান না কেন, কাজ হওয়ার আগেই তারা টাকার জন্য হাত পেতে বসে থাকে। এই নতুন বাংলাদেশে এগুলো আর হতে দেওয়া যাবে না। যে যেই জায়গা থেকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ না করে সাধারণ মানুষের কাছে লুটপাট করবে, তাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে আর এই বাংলাদেশে মেনে নেওয়া যাবে না। একটা জিনিস মনে রাখবেন, পাঁচ বছরে এক দিন যদি আপনি তার কাছে কিছু নেন, বাকি পাঁচ বছর সে আপনার রক্ত চুষে খাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন দ র স ক জ কর উপজ ল আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভবিষ্যতে কেউ স্বৈরাচার হলে পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “ভবিষ্যতে যদি কেউ স্বৈরাচার হয়ে ফিরে আসে, তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে৷ পতিত সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের নদীবন্দর থেকে শুরু করে প্রাণ-প্রকৃতিসহ সবকিছু বর্গা দিয়েছিল৷”
বুধবার (৩০ জুলাই) রাত ৯টার দিকে সাভার উপজেলার বাইপাইলে এক পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ পথসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “আমরা বর্তমান সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, ভারতের সঙ্গে যেসব অসম চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের জন্য, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য সেসব অসম চুক্তি বাতিল করতে হবে৷ ভারতের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছিল, তা জনগণের সামনে নিয়ে আসতে হবে৷ আমরা যদি সেসব চুক্তি জনগণের সামনে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে জনগণের সামনে উন্মোচন হবে—ভারত কি আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ছিল, নাকি আমাদের শোষণ করেছে?”
আরো পড়ুন:
হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ
মানুষ পরিবর্তন চায়, এনসিপিকে চায়, নরসিংদীতে নাহিদ
তিনি বলেন, “কাঁটাতারে ফেলানির লাশ ফেলে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের জনতার ওপর যে ধরনের নিপীড়ন চালানো হয়েছে, আধুনিক সভ্যতার কোনো রাষ্ট্র এমন নির্যাতনের শিকার হয়নি৷ আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভারতীয় যে নাগরিক বিল রয়েছে, শেখ হাসিনা সেখানে মোদি সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানকার বাঙালি মুসলমানদেরকে রাতের বেলায় বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷”
ভারত সরকারের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান এনিসিপির এই নেতা।
তিনি বলেন, আমরা ভারত সরকারকে বলব, আমরা ভারতীয় জনগণের বিরোধী নই৷ আমরা আপনাদের সতর্ক করে দিতে চাই, দ্রুত বাংলাদেশের সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিন। কারণ, সে খুন করে পালিয়েছে। আমাদের শহীদদের মায়েরা শেখ হাসিনার বিচারের জন্য এখনো অপেক্ষারত রয়েছে৷ বাংলাদেশে যতদিন শেখ হাসিনার বিচার না হবে, ততদিন ভারত সরকার থেকে যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, শহীদী পরিবার বিচারের আগে বাংলাদেশে নির্বাচন মানবে না৷”
পথসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন—এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, এনসিপির ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও ঢাকা জেলার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মেহরাব সিফাত প্রমুখ।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় পথসভা শুরু করার কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থলে আসেন রাত ৯টার দিকে। সন্ধ্যা থেকেই নেতাকর্মীরা সভাস্থলে যোগ দিতে থাকেন। সভা শুরুর পর ২ শতাধিক নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। এ সময় সভাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য, এপিবিএন ও র্যাব সদস্যদের অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা যায়।
ঢাকা/সাব্বির/রফিক