‘ধান বেচে আলু গাড়চি (রোপণ করা) বাহে। এ্যালা ঘরোত ধানও নাই, ক্ষ্যাতের আলুর দামও নাই। আলু আবাদ করি এবার হামার সর্বনাশ হইচে। বউ-ছাওয়া নিয়া ঈদের দিনটা পার করমো তারও কোনো বুদ্দি নাই।’ রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুর হাটে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এমনই বর্ণনা দিলেন চরগ্রাম ইছলী এলাকার কৃষক আহাম্মদ আলী। তিনি জানান, প্রতিবছর উৎপাদিত আলু বিক্রির লাভের টাকায় পরিবারের ঈদের কেনাকাটাসহ সংসার খরচ চলে। কিন্তু লাভ দূরের কথা, আলুতে এবার ষোল আনাই লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুধু আহাম্মদ আলীই নন, আলু উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত রংপুরের গঙ্গাচড়াসহ আট উপজেলার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকের এবার একই অবস্থা। ঈদের আমেজ নেই গ্রামের কৃষক পরিবারে।
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। শেষ সময়ে বিভাগীয় শহর রংপুরে যখন ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ, ঠিক তখনই উল্টো চিত্র বিরাজ করছে জেলার গ্রামাঞ্চলে। সেখানে উপজেলা পর্যায়ের হাটবাজারগুলোতেও জমেনি ঈদের কেনাকাটা। রংপুরের গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। কৃষকরা জানান, কাটা-মাড়াই শেষে রোপা আমন ধান বিক্রি করে লাভের আশায় তারা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ধানের ওই জমিতে আলু চাষ করেন। চড়া দামে বীজ কেনাসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়ায় এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে অন্তত ২২ টাকা। সেখানে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। আলুর বাজারে ধস নামায় বিশাল অঙ্কের টাকা লোকসান শুনতে হচ্ছে তাদের। গঙ্গাচড়ার হাবু গ্রামের কৃষক শওকত আলী জানান, আমন ধান বিক্রিসহ একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় তিন বিঘা জমিতে এবার আলু চাষ করেছেন। আলু উত্তোলনের পর দাম না থাকায় বিক্রি করতে পারেননি। হিমাগারে নেওয়াও সম্ভব হয়নি। এখনও সেই আলু মাঠে নিয়ে বিপাকে আছেন তিনি।
শুক্রবার ছিল তারাগঞ্জে হাটের দিন। এই হাটে আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। বিকেলে হাটে ঘুরে দেখা যায়,  দুয়েকটি দোকানে কয়েকজন ক্রেতার দেখা মিললেও, প্রায় সব দোকানে অলস সময় পার করছেন অধিকাংশ কর্মচারী। কাউনিয়া উপজেলা সদরে সাদমান ক্লথ স্টোরের সামনে কথা হয় মীরবাগ এলাকার কৃষক আবদুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই, আমার মেয়ে দুইটা বায়না ধরচে, বাধ্য হয়া ১০ টাকা কেজিতে লোকসান করি আলু বেচে হাটোত আসনু ছাওয়াগুলার নতুন জামা কেনার। তয় যে দাম, জামাত হাতে দেওয়া যাওছে না।’ ওই  স্টোরের মালিক নুরুজ্জামান বলেন, ‘এবার ব্যবসা খুবই খারাপ। মানুষের হাতে টাকা না থাকায় ঈদের কাপড়-চোপড় কেনার আগ্রহ নেই কারও। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল ঈদ র ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে বিবাহবিচ্ছেদের চার দিনের মাথায় লাউখেত থেকে নারীর লাশ উদ্ধার

পঞ্চগড়ে স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর সন্তানদের রেখে গোপনে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলেন এক নারী। দ্বিতীয় বিয়ের প্রায় এক মাস পর বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় বাড়ির পাশের লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের ধামোর মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম তানজিনা আক্তার (৩৫)। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানজিনার দ্বিতীয় স্বামী মিনাল হোসেনের বাবা দিলু হোসেনকে (৫৫) হেফাজতে নিয়েছে আটোয়ারী থানার পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তানজিনা আক্তারের প্রথম স্বামী মজিবর রহমান প্রায় দুই বছর আগে মারা যান। তাঁদের দুটি ছেলে আছে। এর মধ্যে প্রায় এক মাস আগে স্থানীয় যুবক মিনাল হোসেনকে (২৭) গোপনে বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। এর পর থেকেই মিনালকে ছেড়ে দিতে তানজিনার ওপর চাপ দিতে থাকে মিনালের পরিবার। গত ৩০ অক্টোবর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই মিনালকে এলাকায় দেখা যায়নি।

পুলিশ জানায়, আজ সকালে ধামোর-মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেতে কয়েকজন লাউ তুলতে গিয়ে এক নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। এ সময় স্বজনেরা সেখানে গিয়ে লাশটি তানজিনার বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে বারঘাটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও আটোয়ারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক সুরতহালে ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ