রামুতে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তি নিহত, অস্ত্র উদ্ধার
Published: 31st, March 2025 GMT
কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ সীমান্তে চোরাই গরু পাচারকে কেন্দ্র করে দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মোহাম্মদ নবী (৪২)। তিনি ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী খামারপাড়ার মৃত আলী আকবরের ছেলে।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে চৌধুরী খামার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কয়েক শ গরু পাচার করছিলেন রামুর কাউয়ারখোপ, কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী। রাখাইন রাজ্য থেকে চোরাই পথে আনা গরুগুলো প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে রেখে পরে রামুর গর্জনিয়া-উখিয়ারঘোনা সড়ক দিয়ে কক্সবাজারের ঈদগাঁও, চকরিয়া পৌঁছানো হয়। সড়কপথে গরু পাচারের সময় কয়েকটি সশস্ত্র ডাকাত দলকে গরুপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে কমিশন দিতে হয়। কমিশন পেলে ডাকাত দলের সদস্যরা গরুগুলো সশস্ত্র পাহারা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়।
সোমবার সন্ধ্যার দিকে রাখাইন রাজ্য থেকে পাচার করে আনা শতাধিক গরু পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুটি ডাকাত দলের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান মোহাম্মদ নবী। গুলিবিদ্ধ হন উভয় পক্ষে আরও অন্তত চারজন।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের চোরাই গরু টানা পার্টির (সরবরাহকারী) লোকজনের মধ্যে গোলাগুলিতে মোহাম্মদ নবী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মোহাম্মদ নবীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। সন্ত্রাসীদের ধরতে এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। রাত ১০টার দিকে পুলিশ সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে দুটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সন্ধ্যায় মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা শতাধিক গরু গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়াকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ নবী বাহিনীর সঙ্গে আজিজুল হক বাহিনীর তর্ক হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। গুলিতে মোহাম্মদ নবীসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলি লাগে নবীর তলপেটে। আজিজুল হক বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন নিহত নবীর চাচাতো ভাই সন্ত্রাসী হোছন, হানিফসহ ১০-১৫ জন। এই দুজনের নেতৃত্বে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গরু পাচার করা হয়। নবী হত্যার ঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত রামু থানায় মামলা হয়নি। ওসি ইমন কান্তি চৌধুরী বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, টানা এক বছর ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের চোলাই গরু পাচারের কারবার চলছে। মাঝেমধ্যে বিজিবি ও পুলিশের অভিযান চালিয়ে কিছু গরু ও চোরাই পণ্য জব্দ করলেও অধিকাংশ ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা ১১ মাসের সংঘাত–লড়াইয়ে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ (২৭০ কিলোমিটার) এলাকা দখলে নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। শুরু থেকে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির কতিপয় প্রভাবশালী রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশ থেকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, জ্বালানি, মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ দিয়ে বিপরীতে সেখান থেকে দেশে নিয়ে আসছে হাজার হাজার গরুর সঙ্গে ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইস ও সোনার চালান। গরুসহ মাদকের চালান নিয়ে ডাকাত দলের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে চলেছে। গত এক বছরে গোলাগুলিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র খ ইন র জ য সশস ত র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং