গগনযানের নভোচারীদের নিয়ে কেন এত গোপনীয়তা রক্ষা করছে ভারত সরকার
Published: 1st, April 2025 GMT
বিষয়টিকে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’-এর সঙ্গে তুলনা করা মোটেই ঠিক হবে না; কিংবা এটি এই উপমহাদেশের চিরন্তন ভারতীয় ব্যাধি দীর্ঘসূত্রতা অথবা কালক্ষেপণের ক্ল্যাসিক্যাল উদাহরণও নয়। কিন্তু ঘটনা হলো, পেছাতে পেছাতে ভারতের ‘গগনযান’ (মহাকাশযান) পরিকল্পনা ২০২৬ সাল শেষ হওয়ার আগে সফল হতে পারছে না; যা ২০২২ সালে সফল হওয়ার কথা ছিল, এখনই তা চার বছর পিছিয়ে গেছে। কে কীভাবে এর ব্যাখ্যা করবে, তা অন্য বিষয়।
খবরটা অবশ্য ওই চার বছর লেট লতিফ সম্পর্কিত নয়। খবর অন্যত্র। তবে সে কথা বলার আগে গগনযান নিয়ে দু–চার কথা।
গগনযান হলো মহাকাশে ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর মিশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট বড় মুখ করে এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। মিশনটি সফল হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর ভারত হবে পৃথিবীর চতুর্থ মহাকাশচারী দেশ।
প্রকল্পটি চার বছর পিছিয়ে যাওয়ার অর্থ, যে তিন ভারতীয় মহাকাশচারী এই প্রকল্পে মহাকাশ পাড়ি দিতে প্রস্তুত, তাঁদের অপেক্ষার দিন আরও বেড়ে যাওয়া। এই সম্ভাব্য নভোচারীদের পরিচয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৪ সালের গোড়ায় দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িতই শুধু হবে না, জনতার সামনে এই মুহূর্তে তাঁরা আসতেও পারবেন না। সরকার তাঁদের পাদপ্রদীপের আড়ালে রাখতে চায়। খবর এটাই।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এই সেদিন ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিষয়টি স্পষ্ট করেন। তাঁর জবাবদিহির মধ্য দিয়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে, পাবলিক যাতে সম্ভাব্য নভোচারীদের ধ্যান ভঙ্গের কারণ না হয়, গণমাধ্যম যাতে আগেভাগে তাঁদের মাথায় না তুলতে পারে, সে জন্য এত বজ্র আঁটুনি। মন্ত্রী মশাই জানিয়েছেন, ওঁদের কঠোর প্রশিক্ষণ চলছে। সরকার চায় না, কোনোভাবে তাঁদের ফোকাস নড়ে যাক।
সম্ভাব্য নভোচারীদের পরিচয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৪ সালের গোড়ায় দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িতই শুধু হবে না, জনতার সামনে এই মুহূর্তে তাঁরা আসতেও পারবেন না। সরকার তাঁদের পাদপ্রদীপের আড়ালে রাখতে চায়।কথাটা খুব একটা ভুল বলেননি জিতেন্দ্র। কারও কোনো সাফল্যে এই তল্লাটের আম আদমি যে রকম আদেখলেপনা করে থাকে। জিতেন্দ্র সিং তাই সোজাসাপটা জানিয়ে দিতে ভোলেননি, বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আগেভাগে হইহল্লা শুরু হলে মানুষকে লক্ষ্যচ্যুত হতে হয়। তাতে কাজের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। টনক নড়ে যায়। কোনো স্বার্থই পূরণ হয় না। সরকার তাই সম্ভাব্য নভোচারীদের লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রী মশাই নিজে থেকে এই মন্তব্য করেননি। সদস্যদের কেউ কেউ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যে হবু নভোচারীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের কারও টিকি পর্যন্ত কেন দেখা যাচ্ছে না। কাকপক্ষীও জানে না, তাঁরা কোথায়, কী করছেন।
গগনযানে মহাকাশে যাবেন তিনজন। তাঁরা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। সবাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন। প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছিলেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন, অঙ্গদ প্রতাপ। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন আরও একটি নাম। শুভাংশু শুক্লা। তিনিও ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন।
‘গগনযান’-এ মহাকাশে যাবেন তিনজন। তাঁরা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। সবাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন। প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছিলেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন, অঙ্গদ প্রতাপ।শুভাংশু যাবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস), যেখানে টানা ৯ মাস কাটিয়ে সুনীতা উইলিয়ামসরা সম্প্রতি মর্ত্যে ফিরেছেন।
শুভাংশু যাবেন ‘অ্যাক্সিওম মিশন ৪’ পরিকল্পনায়। এই মিশনে তাঁর সঙ্গী হবেন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লজ উজনানস্কি ও হাঙ্গেরির টিবোর কাপু। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ১৪ দিন কাটিয়ে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। এখানে অবশ্য একটা বড় ‘যদি’ রয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। সুনীতা আইএসএসে গিয়েছিলেন ৯ দিনের জন্য। ফিরেছেন ২৮৬ দিন পর।
প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন ও অঙ্গদ প্রতাপ হবেন গগনযানের যাত্রী।
অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জেলার শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে গগনযানের ওড়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। পেছাতে পেছাতে এখন তা দাঁড়িয়েছে ২০২৬ সাল। উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিটের মধ্যেই গগনযান ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে পৃথিবীকে পাক খেতে শুরু করবে। এই উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হবে ভারতের নিজস্ব জিএসএলভি এম কে-৩ রকেট। তিন মহাকাশচারী মহাশূন্যে থাকবেন তিন দিন। তারপর নির্বিঘ্নে সমুদ্রে অবতরণ।
এই সময়টাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, মহাকাশযান উৎক্ষেপণের চেয়েও কঠিন তাকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো মহাকাশযান যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।
নাসার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’ ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ১৫ দিনের জন্য সাতজন মহাকাশচারী নিয়ে মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারি অবতরণে যখন বাকি মাত্র ১৬ মিনিট, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় কলম্বিয়া। ৭ মহাকাশচারী চিরদিনের জন্য মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যান। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলা।
গগনযান বারবার পেছাচ্ছে। কারণ, ইসরো সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করে এগোচ্ছে।
চার সম্ভাব্য মহাকাশচারীর প্রশিক্ষণ চলছে বেঙ্গালুরুর অ্যস্ট্রোনট ট্রেনিং ফেসিলিটিতে। তাঁদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার য়ুরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারেও। ১৯৮৪ সালে সেখানেই ট্রেনিং নিয়েছিলেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা।
রাকেশ মহাকাশে গিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘সয়ুজ টি-১১’–এর সওয়ারি হয়ে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন ও অঙ্গদ প্রতাপ মহাকাশে যাবেন দেশে তৈরি গগনযানে চেপে। এর আগে কারও মাথা যাতে না বিগড়োয়, সে জন্য অতি সতর্ক ভারত সরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র কর ছ ল ন মন ত র র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ