বিষয়টিকে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’-এর সঙ্গে তুলনা করা মোটেই ঠিক হবে না; কিংবা এটি এই উপমহাদেশের চিরন্তন ভারতীয় ব্যাধি দীর্ঘসূত্রতা অথবা কালক্ষেপণের ক্ল্যাসিক্যাল উদাহরণও নয়। কিন্তু ঘটনা হলো, পেছাতে পেছাতে ভারতের ‘গগনযান’ (মহাকাশযান) পরিকল্পনা ২০২৬ সাল শেষ হওয়ার আগে সফল হতে পারছে না; যা ২০২২ সালে সফল হওয়ার কথা ছিল, এখনই তা চার বছর পিছিয়ে গেছে। কে কীভাবে এর ব্যাখ্যা করবে, তা অন্য বিষয়।

খবরটা অবশ্য ওই চার বছর লেট লতিফ সম্পর্কিত নয়। খবর অন্যত্র। তবে সে কথা বলার আগে গগনযান নিয়ে দু–চার কথা।

গগনযান হলো মহাকাশে ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর মিশন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট বড় মুখ করে এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন। মিশনটি সফল হলে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর ভারত হবে পৃথিবীর চতুর্থ মহাকাশচারী দেশ।

প্রকল্পটি চার বছর পিছিয়ে যাওয়ার অর্থ, যে তিন ভারতীয় মহাকাশচারী এই প্রকল্পে মহাকাশ পাড়ি দিতে প্রস্তুত, তাঁদের অপেক্ষার দিন আরও বেড়ে যাওয়া। এই সম্ভাব্য নভোচারীদের পরিচয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৪ সালের গোড়ায় দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িতই শুধু হবে না, জনতার সামনে এই মুহূর্তে তাঁরা আসতেও পারবেন না। সরকার তাঁদের পাদপ্রদীপের আড়ালে রাখতে চায়। খবর এটাই।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এই সেদিন ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিষয়টি স্পষ্ট করেন। তাঁর জবাবদিহির মধ্য দিয়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে, পাবলিক যাতে সম্ভাব্য নভোচারীদের ধ্যান ভঙ্গের কারণ না হয়, গণমাধ্যম যাতে আগেভাগে তাঁদের মাথায় না তুলতে পারে, সে জন্য এত বজ্র আঁটুনি। মন্ত্রী মশাই জানিয়েছেন, ওঁদের কঠোর প্রশিক্ষণ চলছে। সরকার চায় না, কোনোভাবে তাঁদের ফোকাস নড়ে যাক।

সম্ভাব্য নভোচারীদের পরিচয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০২৪ সালের গোড়ায় দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িতই শুধু হবে না, জনতার সামনে এই মুহূর্তে তাঁরা আসতেও পারবেন না। সরকার তাঁদের পাদপ্রদীপের আড়ালে রাখতে চায়।

কথাটা খুব একটা ভুল বলেননি জিতেন্দ্র। কারও কোনো সাফল্যে এই তল্লাটের আম আদমি যে রকম আদেখলেপনা করে থাকে। জিতেন্দ্র সিং তাই সোজাসাপটা জানিয়ে দিতে ভোলেননি, বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আগেভাগে হইহল্লা শুরু হলে মানুষকে লক্ষ্যচ্যুত হতে হয়। তাতে কাজের কাজে ব্যাঘাত ঘটে। টনক নড়ে যায়। কোনো স্বার্থই পূরণ হয় না। সরকার তাই সম্ভাব্য নভোচারীদের লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্ত্রী মশাই নিজে থেকে এই মন্তব্য করেননি। সদস্যদের কেউ কেউ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী যে হবু নভোচারীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের কারও টিকি পর্যন্ত কেন দেখা যাচ্ছে না। কাকপক্ষীও জানে না, তাঁরা কোথায়, কী করছেন।

গগনযানে মহাকাশে যাবেন তিনজন। তাঁরা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। সবাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন। প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছিলেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন, অঙ্গদ প্রতাপ। সেই সঙ্গে জানিয়েছিলেন আরও একটি নাম। শুভাংশু শুক্লা। তিনিও ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন।

‘গগনযান’-এ মহাকাশে যাবেন তিনজন। তাঁরা ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট। সবাই গ্রুপ ক্যাপ্টেন। প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছিলেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন, অঙ্গদ প্রতাপ।

শুভাংশু যাবেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস), যেখানে টানা ৯ মাস কাটিয়ে সুনীতা উইলিয়ামসরা সম্প্রতি মর্ত্যে ফিরেছেন।

শুভাংশু যাবেন ‘অ্যাক্সিওম মিশন ৪’ পরিকল্পনায়। এই মিশনে তাঁর সঙ্গী হবেন যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লজ উজনানস্কি ও হাঙ্গেরির টিবোর কাপু। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ১৪ দিন কাটিয়ে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। এখানে অবশ্য একটা বড় ‘যদি’ রয়েছে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে। সুনীতা আইএসএসে গিয়েছিলেন ৯ দিনের জন্য। ফিরেছেন ২৮৬ দিন পর।

প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন ও অঙ্গদ প্রতাপ হবেন গগনযানের যাত্রী।

অন্ধ্র প্রদেশের নেলোর জেলার শ্রীহরিকোটা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে গগনযানের ওড়ার কথা ছিল ২০২২ সালে। পেছাতে পেছাতে এখন তা দাঁড়িয়েছে ২০২৬ সাল। উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিটের মধ্যেই গগনযান ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে পৃথিবীকে পাক খেতে শুরু করবে। এই উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হবে ভারতের নিজস্ব জিএসএলভি এম কে-৩ রকেট। তিন মহাকাশচারী মহাশূন্যে থাকবেন তিন দিন। তারপর নির্বিঘ্নে সমুদ্রে অবতরণ।

এই সময়টাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, মহাকাশযান উৎক্ষেপণের চেয়েও কঠিন তাকে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো মহাকাশযান যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।

নাসার মহাকাশযান ‘কলম্বিয়া’ ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ১৫ দিনের জন্য সাতজন মহাকাশচারী নিয়ে মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারি অবতরণে যখন বাকি মাত্র ১৬ মিনিট, বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায় কলম্বিয়া। ৭ মহাকাশচারী চিরদিনের জন্য মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যান। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলা।

গগনযান বারবার পেছাচ্ছে। কারণ, ইসরো সব রকম সাবধানতা অবলম্বন করে এগোচ্ছে।

চার সম্ভাব্য মহাকাশচারীর প্রশিক্ষণ চলছে বেঙ্গালুরুর অ্যস্ট্রোনট ট্রেনিং ফেসিলিটিতে। তাঁদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার য়ুরি গ্যাগারিন কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারেও। ১৯৮৪ সালে সেখানেই ট্রেনিং নিয়েছিলেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা।

রাকেশ মহাকাশে গিয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘সয়ুজ টি-১১’–এর সওয়ারি হয়ে। প্রশান্ত নায়ার, অজিত কৃষ্ণন ও অঙ্গদ প্রতাপ মহাকাশে যাবেন দেশে তৈরি গগনযানে চেপে। এর আগে কারও মাথা যাতে না বিগড়োয়, সে জন্য অতি সতর্ক ভারত সরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র কর ছ ল ন মন ত র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ