‘বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমি সুইজারল্যান্ডে একটি তামিল সিনেমার গানের শুটিং করছিলাম। রাস্তার মাঝখানে নাচছিলাম, আর তখনই দেখি, এক সুইস কৃষক আমাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সঙ্গে কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। সেদিন আমি মনে মনে বলেছিলাম, তুমি চেন্নাইয়ে আসো, আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব আমি কে। তবে খুবই অপমানিত বোধ করেছিলাম সেদিন। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, আমি আসলে অন্যদের ইচ্ছেমতো নাচ করছি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই, কিছুদিন বিরতি নেব,’ বললেন বলিউড ও দক্ষিণি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা আর মাধবন। ৪ এপ্রিল মুক্তি পেতে পাচ্ছে মাধবন অভিনীত সিনেমা ‘টেস্ট’। ছবিটি মুক্তির আগে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিরতি নেওয়ার প্রসঙ্গটি আনেন। জানালেন, কেন দীর্ঘ চার বছর সিনেমা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন।

এক-দুই বছর নয়, টানা চার বছর কাজ করেননি মাধবন। এ নিয়ে বলিউড থেকে দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রি—শোরগোল কম হয়নি। সে সময় এ নিয়ে তেমন কিছু না বললেও এই সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি সব কথা বললেন। জানালেন এতগুলো বছর নিজের প্রিয় কাজ থেকে দূরে থাকার কারণ।
অনেকেই ক্যারিয়ার থেকে ব্রেক নেন, নিজেকে সময় দেন। নিজেকে তৈরি করেন বা প্রস্তুতি নেন নতুন কাজের জন্য। সেটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মাধবন ব্রেক নিয়েছিলেন অন্য কারণে। পছন্দের চরিত্র না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। একটি ঘটনার কথাও শেয়ার করেন। জানান, সুইজারল্যান্ডে একটি তামিল গানের শুটিং করছিলেন। সেখানে তাঁকে কমলা রঙের প্যান্ট ও সবুজ শার্ট পরে নাচতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

সেদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মাধবন জানান, তাঁর স্ত্রী অভিযোগের সুরে জানিয়েছিলেন, যেভাবে কাজ চলছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। কথাটি শুনে মাধবনেরও মনে হয়েছিল, সত্যিই তাই। এখন বিরতি নেওয়া উচিত। এভাবে আর কত! এ যুগেও এসব চলে!

এই চার বছরে মাধবন শুধু সিনেমা নয়, কোনো বিজ্ঞাপনেও কাজ করেননি। ছেড়ে দিয়েছিলেন সব অফার। লুক পরিবর্তন করে ভারতের নানা প্রান্তে শুধু ঘুরে বেড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দেখেছেন। রিকশাচালকদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, তাঁদের সংগ্রাম দেখেছেন। অভিনেতার মতে, এই চারটা বছর তাঁকে অনেক কিছু নতুন করে শিখিয়েছে। এই চার বছরে শিখে নেওয়া সবকিছু তাঁকে নতুনভাবে গড়তে সাহায্য করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ