মিয়ানমারে জান্তার ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
Published: 2nd, April 2025 GMT
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার। আজ বুধবার (২ এপ্রিল) শুরু হয়ে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত এমআরটিভি এ খবর জানিয়েছে।
আজ রাতে সম্প্রচারিত এমআরটিভির বুলেটিনে বলা হয়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনকাজ সহজ করতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়। ১১ মিনিটের মাথায় ৬ দশমিক ৪ মাত্রার পরাঘাত হয়। এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জান্তা সরকারের আগে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চলাকালে গোষ্ঠীগুলো হামলা চালানো বা নতুন করে সংগঠিত হওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবে। অন্যথায় সেনাবাহিনী ‘প্রয়োজনীয়’ ব্যবস্থা নেবে।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়, সাগাইং, রাজধানী নেপিডোসহ কয়েকটি শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাজার ভবন, সেতু ভেঙে গেছে; ফাটল দেখা দিয়েছে সড়ক-মহাসড়কে।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা০১ এপ্রিল ২০২৫মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আজ ভূমিকম্পের পঞ্চম দিন রাজধানী নেপিডোর একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি শহরের একটি অতিথিশালা থেকে আরেক ব্যক্তিকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ উদ্ধারকারী দল কেবল মরদেহই পাচ্ছে।
এমআরটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩–এ পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৫০০। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করে।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে ১৭০ স্বজন–প্রিয়জনকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ ইমাম সোয়ে৮ ঘণ্টা আগে২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারে নতুন করে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গৃহযুদ্ধে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দেশটির প্রায় দুই কোটি মানুষের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দরকার। এ পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পে দেশটিতে মানবিক সংকট পরিস্থিতি আরও তীব্র হয়েছে।
আরও পড়ুনশক্তিশালী ভূমিকম্পের পরও এ বছর ৪ কোটি পর্যটক পাওয়ার আশা থাইল্যান্ডের০১ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা