খোকসায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেপ্তার
Published: 3rd, April 2025 GMT
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গোপগ্রাম ইউনিয়নের খদ্দোসাধুয়া গ্রামে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আফজাল কাজী (৬৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার প্রায় ২০ ঘণ্টা পর জানাজানি হলে রাতেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
আটক আফজাল কাজী খদ্দোসাধুয়া গ্রামের মৃত ইমান আলী কাজীর ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ৮ বছর বয়সী ওই শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে পেঁয়াজ কাটার জন্য আফজাল কাজী তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। অন্য শিশুরা বাড়ি ফিরলেও ওই শিশুটি সেখানে রয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে শিশুকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন আফজাল কাজী। পরে তাকে নিয়ে রওনা হয়ে রাস্তার পাশে নির্জন স্থানে ধর্ষণ করেন আফজাল কাজী।
পরদিন বুধবার দুপুরে শিশুটি পেটের ব্যথায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এরপর ধর্ষনের ঘটনা জানাজানি হয়। খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী আফজাল কাজীর বাড়ি ঘেরাও করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে।
শিশুটির চাচা বাদী হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
শিশুটির চাচা জানান, আফজাল কাজী সম্পর্কে শিশুটির দাদা। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মঈনুল ইসলাম বলেন, পুলিশের গাড়িতে করে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে ওই শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় বুধবার রাতেই তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, খবর শোনার পর সেদিন রাতেই অভিযুক্ত আফজাল কাজীকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। শিশুটির চাচা বাদী হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
ছবি: খোকসা (কুষ্টিয়া) পুলিশের হাতে আটক ধর্ষক আফজাল কাজী।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।