অর্থ সংকটের কারণে দেশে ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১০ মাস ধরে অনেক কেন্দ্রে বিনামূল্যের ওষুধ মিলছে না। বন্ধ আছে সন্তান প্রসবের আগে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রেগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এসব কেন্দ্রে বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ সেবা নেন। বর্তমান সংকট চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করেছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় কৌশলগত পরিকল্পনার (ওপি) মাধ্যমে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রেগুলো এর আওতায় পরিচালিত হয়। এর অর্ধেক ব্যয় সরকার বহন করে, বাকি অর্থ আসে দাতা সংস্থাগুলো থেকে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মানুষ সেবার জন্য যেত। এ হিসাবে প্রায় পৌনে সাত কোটি মানুষ ওষুধ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবামূলক কার্যক্রম চলে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) মাধ্যমে। এর চতুর্থ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর জুনে। জুলাইয়ে নতুন করে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি শুরু হওয়ার কথা ছিল। নানা জটিলতায় ১০ মাসেও এ কর্মসূচির অনুমোদন মেলেনি। পরে দেড় বছরের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। তাতেও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমান সংকটের মূল কারণ এটি। 

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’। 
ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা (কিশোর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা) দেওয়ার কথা। আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, কৃমিনাশক, প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, পেন্টোনিক্স-২০, হিস্টাসিনসহ ২৮ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। 
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.

মো. আবু জাফর বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করতে আগামী মাসের মধ্যে সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। 

সমকালের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ৬ মাস ধরে রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও রয়েছে। নারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির সংকটও আছে। সন্তান প্রসবের আগে জরুরি পরীক্ষা সেবাও বন্ধ। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের হার কমছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জনকে সেবা না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে। এসব রোগীর শুধু পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে বারবার চিঠি দিচ্ছেন। 
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা একই রকম। তিন মাস ধরে বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ। মনিরামপুর সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) শ্রাবন্তী দাস বলেন, ‘কৃমিনাশক বড়ি ছাড়া কোনো ওষুধ নেই। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কোনো ওষুধ বরাদ্দ পাইনি। ওষুধ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রোগীরা জেনে গেছেন। এ জন্য সেবা নিতে লোকজন কম আসেন। যারা আসেন তাদের রোগ সম্পর্কে মৌখিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’ 
রোহিতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক রিনা পারভেজ বলেন, ‘নভেম্বরের পর আর ওষুধ আসেনি। ওষুধ না থাকায় রোগীরাও এখন আর আসেন না। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি। বাকি সময় অলস বসে কাটাতে হচ্ছে।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনেক কেন্দ্র থেকে ওষুধের জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও বন্ধ। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল ১০ মাস বকেয়া। সবচেয়ে বড় বিষয়, এসব কেন্দ্রে সেবা নেন নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের বেসরকারিভাবে চিকিৎসা করানোর সক্ষমতা নেই। সংকট দেখা দিয়েছে পরিবার পরিকল্পনার উপকরণেও।
স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ। দেশে শিশুমৃত্যুর হার কমছে না, বরং বাড়ছে। ২০২৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএসএস) প্রতিবেদন বলছে, আগের তুলনায় দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০২১ সালে দেশে ১ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২২ জন; ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫। এ ছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুও আগের চেয়ে বেড়ে ৩১ জন হয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে এই হার ছিল ২৮ জন। 

শিশুমৃত্যু বাড়লেও দেশের মাতৃমৃত্যু কিছুটা কমেছে। প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে মাত্যৃমৃত্যু কমে ১৫৬ জন হয়েছে, ২০২১ সালে যা ছিল ১৬৮ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, এখনও ৫০ শতাংশের বেশি শিশুর জন্ম হয় বাড়িতে। অপ্রশিক্ষিত মানুষের হাতে সন্তান প্রসবের কারণে অনেক সময় মা ও শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও নিরাপদ প্রসব বাড়াতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলো বড় ভূমিকা রাখছিল। 
আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, এখনও দেশে ৫ বছরের কম বয়সে শিশুমৃত্যুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মারা যায় জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ নবজাতক অবস্থায়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা বন্ধ হলে এর প্রভাব পড়বে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এ দুটি লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রসব র র জন য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্নে হলো দেখা

কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে। 
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়। 
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র‍্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র‍্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের পাল্টা আঘাতে কাঁপল ইসরায়েল
  • জাফলংয়ের পাথর কোয়ারিতে এখনও রাজনৈতিক ছায়া
  • আলীকদমে ২ পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্টের’ বর্ষা গ্রেপ্তার
  • ইরানে এখনও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল: আইডিএফ
  • স্বপ্নে হলো দেখা
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে