সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত, মদ্যপ পরিচালক গ্রেপ্তার
Published: 7th, April 2025 GMT
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে ছয়জনকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলকাতার নাট্যনির্মাতা সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টোর বিরুদ্ধে। পরে আহতদের মধ্যে একজন মারা গিয়েছেন।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, রবিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঠাকুরপুকুর বাজারের কাছে ডিএইচ রোডে সিদ্ধান্তের গাড়ি বেশ কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়।
কলকাতা পুলিশের ডিসি দক্ষিণ-পশ্চিম (বেহালা) রাহুল দে ভারতীয় গণমাধ্যমে জানান, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাজারের মধ্যে ঢুকে যায় একটি গাড়ি। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন ছয়জন। তাদের মধ্যে চারজনকে স্থানীয় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
আরো পড়ুন:
কবে বিয়ে করবি, কবে বাচ্চা হবে, দেবের কাছে মায়ের প্রশ্ন
সুদীপ-পৃথার অসম বিয়ে ভেঙে গেল
বাকি দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয় ডায়মন্ড হারবার রোডের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। গাড়িটির চালকের আসনে ছিলেন সিদ্ধান্ত। আশঙ্কাজনক দু’জনের মধ্যে একজন মারা গেছেন। তারপরই গ্রেপ্তার করা হয় সিদ্ধান্তকে। সোমবার (৭ এপ্রিল) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।
শনিবার রাতে কলকাতার প্রথম সারির একটি পানশালায় উল্লাসে মেতেছিলেন পরিচালক সিদ্ধান্ত। তার সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, অভিনেত্রী ঋ সেনগুপ্ত, প্রযোজক শ্রিয়া বসু, অভিনেতা-ইউটিউবার স্যান্ডি সাহা। তারা প্রত্যেকে সান বাংলার নতুন ধারাবাহিক ‘ভিডিও বৌদি’-এর সঙ্গে যুক্ত।
নতুন কাজ উদযাপনের জন্যই পানশালায় গিয়েছিলেন তারা। রাতভর মদ্যপানের পর সকালে আলাদা আলাদা দু’টি গাড়িতে ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। সিদ্ধান্তের গাড়িতে ছিলেন অভিনেত্রী ঋ এবং শ্রিয়া।
দুর্ঘটনার একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পরও শ্রিয়া এমনই মাতাল ছিলেন যে, সোজা হয়েও দাঁড়াতে পারছেন না। পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় বেসামাল হয়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি।
ঋ সেনগুপ্ত বলেন, “আমি পরিচালকের গাড়িতে থাকলেও দুর্ঘটনার আগে নেমে যাই। ফলে এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। খবরটি জানার পর খুব খারাপ লাগছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”
মদ্যপান না করার দাবি করে ঋ বলেন, “ভিডিও বৌমা’ ধারাবাহিকে অভিনয় করছি। ফলে সৌজন্যতার খাতিরে রাতপার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমি মদ্যপান করিনি, কোনোরকম নেশাই করি না।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ