বাংলাদেশ চা বোর্ডের চারটি পদের লিখিত পরীক্ষার তারিখ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চা বোর্ডের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, গাড়িচালক, প্লাম্বার ও স্টোরকিপার (ভান্ডাররক্ষক) পদের লিখিত পরীক্ষা ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

সঠিক আবেদনকারীদের অনুকূলে ইতিমধ্যে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়েছে। কোনো যোগ্য প্রার্থী লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্র ১২ এপ্রিলের মধ্যে না পেয়ে থাকলে এই নম্বরে (০১৬৭৫-২৩১৫৭৮) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের শূন্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল, ২৮ আগস্ট ও ৩১ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রত্বের ভুয়া পরিচয় দেন সভাপতি, কমিটি ঘোষণার দিন শর্ট কোর্সে ভর্তি হন সম্পাদক

প্রায় চার বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালানোর পর গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ঘোষিত কমিটির চারজন নিয়মিত ও একজন এমফিলের ছাত্র হলেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বাকিরা নিয়মিত ছাত্র নন। ছাত্রত্ব দেখাতে তাঁদের কেউ কেউ সান্ধ্য মাস্টার্স ও ভাষাশিক্ষার শর্ট কোর্সে ভর্তি হওয়ার দাবি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

ঘোষিত কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী) বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার সাড়ে চার বছর পর আহ্বায়ক হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

রাহী বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থী হিসেবে গণমাধ্যমে নিজেকে পরিচয় দেন। তবে বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি এ বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী নন। তিনি ২০১৯ সালে সান্ধ্য মাস্টার্সে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভর্তি সম্পন্ন করেননি। তাঁর বাসা রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হোসেনিগঞ্জে।

নতুন দায়িত্ব পাওয়া সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলামের পড়াশোনাও শেষ হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছাত্রত্ব দেখাতে কমিটি ঘোষণার দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষার একটি শর্ট কোর্সে তিনি ভর্তি হয়েছেন। আগের কমিটিতে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বাসা পাবনার সাঁথিয়ায়।

ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্রের ৬.১-এর খ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক ও অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরাই কেবল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার উপরেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চলমান শিক্ষার্থীর বাইরে কাউকে নিয়মিত শিক্ষার্থী বলার সুযোগ নেই। যাঁরা সান্ধ্য বা ভাষাশিক্ষার কোর্সে ভর্তি আছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীর মতো মেডিকেল, আবাসিক হল, বাস বা সমাবর্তনের সুযোগ পান না।

১১ সদস্যের কমিটির ছয়জনেরই ‘ছাত্রত্ব’ নেই

নতুন কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে ৬ জনের নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। তাঁদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্ধযুগ আগে পড়াশোনা শেষ করেছেন। নতুন কমিটির সহসভাপতি মেহেদী হাসান ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এবং সাবিহা আলম (মুন্নি) আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহের রহমান ফারসি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা কেউই নিয়মিত ছাত্র নন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র নন, কিন্তু কমিটিতে পদ পেয়েছেন, এমন নেতারা ছাত্রত্ব দেখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সান্ধ্য মাস্টার্স ও ভাষাশিক্ষার শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন বলে দাবি করেছেন। সত্যতা জানতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে খোঁজ নেয় প্রথম আলো। সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম কমিটি ঘোষণার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের ইংরেজি ভাষাশিক্ষার একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি হন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ইনস্টিটিউটের পরিচালক এ এফ এম মাসউদ আখতার প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুনছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা, নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই সভাপতি ও সম্পাদকের৩০ জুলাই ২০২৫

কমিটির সহসভাপতি মেহেদী হাসান ভর্তি আছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুই বছর মেয়াদি সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সে। গত জানুয়ারিতে তিনি নতুন সেশনে ভর্তি হন। আরেক সহসভাপতি সাবিহা আলম বর্তমানে কোথাও ভর্তি নেই। তবে তিনি দাবি করেছেন যে সম্প্রতি এমফিলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজের একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন বলে দাবি করেছেন। তবে তিনি কোন সেশনে ভর্তি আছেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি। ইনস্টিটিউটে খোঁজ নিয়েও তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহের রহমান ফারসি বিভাগের ‘ফারসি জুনিয়র সার্টিফিকেট কোর্সে’ ভর্তি আছেন।

কমিটিতে জায়গা না পাওয়া পদপ্রত্যাশী এক ছাত্রদল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দীর্ঘ চার বছর পর কমিটি হলো। এতে আমাদের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই সন্তুষ্ট নন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা পেতে এই কমিটি খাপ খাওয়াতে পারবে না। সিনিয়রদের পুরস্কারস্বরূপ কমিটিতে বড় পদ দেওয়া হয়েছে। নতুন সভাপতি রাহী ভাইয়ের ওপর সব নেতা-কর্মীর ক্ষোভ আছে। তিনি অন্যান্য ছাত্রদল নেতার ভালো কাজের ক্রেডিট নিজের নামে ব্যবহার করে কেন্দ্রে নিজের অবস্থান দেখিয়েছেন।’

ছাত্রত্ব আছে পাঁচ নেতার

ঘোষিত কমিটির চার নেতা নিয়মিত এবং একজন এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন সহসভাপতি লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী জান্নাতুন নাঈম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সংগীত বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিন বিশ্বাস ও দপ্তর সম্পাদক আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী নাফিউল জীবন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মিঠু সম্প্রতি ‘মানবিক’ কারণ দেখিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেয়েছেন। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই সময় ড্রপ আউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন তিনি।

অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমফিলে ভর্তি হয়েছেন। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানতে চাইলে নতুন কমিটির সভাপতি সুলতান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কমিটিতে ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের নিয়মিত স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। তবে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এমফিল, সান্ধ্য মাস্টার্স ও শর্ট কোর্সে ভর্তি আছেন। তাই তাঁদের ছাত্রত্ব শেষ হয়নি। ছাত্রলীগের নিপীড়নের কারণে তিনি যথাসময়ে পরীক্ষায় বসতে পারেননি। রাজপথে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের পুরস্কার হিসেবে তাঁদের কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কমিটিতে নিয়মিত চার শিক্ষার্থীও পদ পেয়েছেন।

অছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আমাদের এই কমিটি দেওয়া হয়েছে। সাতজনের নিয়মিত ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়টি আমরা অবগত নই। তবে কয়েকজনের নিয়মিত পড়াশোনা শেষ হয়েছে। তাঁরা এখন অন্যান্য কোর্সে ভর্তি আছেন। এই কমিটি খুব স্বল্প সময়ের জন্য বিশেষ কারণে করা হয়েছে। দ্রুতই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ