৬ দাবিসহ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করবে আজাদ ফিলিস্তিন
Published: 7th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশনারকে তলব করাসহ জবাবদিহি চাওয়াসহ ছয় দফা দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম আজাদ ফিলিস্তিন।
একইসঙ্গে নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করাসহ মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করার ঘোষণা দিয়েছে প্লাটফর্মটি।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় এক বিবৃতিতে প্লাটফর্মটির সংগঠক ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, প্রশাসনের স্থগিত
স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে কাল ঢাবিতে সংহতি সমাবেশ
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, মার্কিন সহায়তায় চলমান গণহত্যার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত ইজরাইল এবং তার দোসর, বিশেষ করে আমেরিকার বিরুদ্ধে কোনো বিবৃতি দেয়নি। গণহত্যা বন্ধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয়ে আমরা রাষ্ট্রের ভয়াবহ গড়িমসি লক্ষ্য করছি।
এজন্য আগামীকাল ছয় দফা দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও, গাজায় চলমান গণহত্যার কুশীলব মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ এবং নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের কুশপুত্তলিকা দাহ করবো।
বিবৃতিতে আরো বলো হয়েছে, দাবিগুলো আদায় করা ব্যতিত শুধু আমেরিকান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের খুব বেশি কার্যকরিতা নেই। তাই আমরা প্রথমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে যাব। এরপর সেখান থেকে মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে মার্চ করব।
প্লাটফর্মটির ছয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে মার্কিন মদদে গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিন্দা জানাতে হবে এবং বৈশ্বিক পরিমন্ডলে ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গঠন ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে; আমেরিকান হাইকমিশনারকে তলব করে গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা করার জবাবদিহি চাইতে হবে; কালবিলম্ব না করে পাসপোর্টে পুনরায় ‘এক্সেপ্ট ইজরাইল’ কথাটি ফিরিয়ে আনতে হবে।
অন্য দাবিগুলো হলো, ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার অর্থের যোগানদাতা সকল পণ্য ও সেবাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বয়কট করতে হবে এবং তাদের দোসরদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে; ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ইজরাইল থেকে আড়িপাতার যন্ত্রসহ কেনা অন্য যেসব গোপন চুক্তি করেছে, তা শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে; ইজরাইলের মতো একই বর্বর কায়দায় গণহত্যা চালানোর দায়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলম ন গণহত য র প ল টফর ম
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব