মৌন ভঙ্গি
মাসুদুর রহমান মাসুদ
দেয়ালে তৈলচিত্র–
ফুলমুখী শত ডানার প্রজাপতি।
মৌনতার ভঙ্গিতে শালিক
নম্রতা মেখে শ্যেন দৃষ্টিতে।
আকাশে একঝাঁক শকুন,
বক্রতা ভেঙে পৃথিবী দাপিয়ে চলে।
সকালের রেখার মতো কিছু শান্তিকামী।
নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন বুনে,
শকুনের চোখ থেকে ঝরে পড়ে আগুন!
ভস্ম হয় নতুন স্বপ্ন।
অভিমানে পোড়াও ফাগুন তুমি
নিষাদ আফসারী খানম
বোশেখেও কাটে না আমাদের জ্বর
নরক-ঈশ্বরী কি আমি তবে
তাই কি সাজবে না কবিতার বাসর!
কদম ছুঁয়ে কবিতা লিখিনি এখনও
বর্ষা এখনও আসেনি এখানে
চৈত্রের খরা সয়ে যাচ্ছি
আগুনে পুড়ছে বাসর।
পলাশ ফুলে নিবেদিত হয়েছি,
কদম কেশর মাখিনি এখনও
জারুল বনে কি আগুন লেগেছে!
খরতাপে পুড়ছে ফাগুন, বোশেখী
বর্ষায়ও সিক্ত হয় না মন-প্রাণ, দেহ
শীতলতা নামে না মনে।
আসন্ন শ্রাবণে হোক সবকিছু সুন্দর
কবিতা ছুঁয়ে সাজাও বাসর কাব্যিক ঈশ্বর,
বর্ষার জলে কবিতার গায়ে প্রাণ ঢেলে দাও তুমি!
অচেনা কেউ
শফিকুল মুহাম্মদ ইসলাম
সেদিন অচেনা কেউ কাছে এসে বলে
নীলাদ্রির রূপে এই গগনের তলে!
ভোরের নদীর মতো নীরব নিথর;
বাংলার মাঠ-ঘাট ও ঘাসের ভেতর।
দোয়েলের শিস আর কোকিলের সুর,
শুনেছ কি কেউ থেকে বহুদূর।
তারপর শুধুই আঁধার
শারমিন নাহার ঝর্ণা
হাঁটছি আঁধারের সিঁথি বেয়ে
আকাশে জোছনার আলো নেই
নক্ষত্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
গভীর অরণ্য ঘন আঁধার,
চোখে পড়ছে না হিংস্র হায়েনার হাসি।
অকস্মাৎ সারি সারি জোনাকির আলো
আলোর রশ্মি ধরে হাঁটতে চেয়েছিলাম বহুদূর।
বৈরী দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল জোনাকি
তারপর শুধুই আঁধার!
জানি না কবে উঠবে জোছনা আবার।
কেন আড়ালে থাকো
মহসিন আলম মুহিন
আশা দিয়ে তুমি আড়ালে চলে গেলে,
কীসের ছুতায়, কী দোষ খুঁজে পেলে।
ভরা ভাদ্রে বলো কেন আছো দূরে সরে,
নদী যৌবনা, তবুও মিশে না কেন সাগরে।
নয়নের জলে বেদনারা ভিজে ভিজে সিক্ত–
ফল নাহি মেলে, সবই লাগে যেন রিক্ত।
ফুল আসে, কেন ফল নাই গাছের ডালে,
ঘুঙুর পরা পাখিরা বসে না কেন চালে।
কেন আড়ালে থেকে বিরহের দাও জ্বালা,
তোমারই বিহনে অন্তর পুড়ে হলো কালা।
মেঘে ঢাকা চাঁদ যায় না দেখা চোখ ভরে,
বিষাদ লাগে, সারাক্ষণ মনটা শুধুই পোড়ে।
বিশৃঙ্খল বেঁচে থাকা
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়
বেঁচে থাকা আজকাল; বিশৃঙ্খলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হৃদয়ের বেদি ব্যথা, ঘুমের অসুখ, আহারের অরুচি,
বিছানায় ছন্নছাড়া অনিয়মের ছড়াছড়ি–
বয়সের ক্লান্ত লোমে বেড়ে চলেছে ক্রমাগত।
দিনরাত কবিতার টেবিলে তৈরি হচ্ছে
তোমাকে নিয়ে বাঁচার গল্প!
তবুও স্বপ্নের মধ্যে জেগে থাকার স্মৃতি
তোমার নেপথ্যে নিশীথের হট্টগোল।
ভাঙা চুড়ির আওয়াজ, মোলায়েম স্পর্শ,
দুঃখের ভরসমেত একটি শরীর–
আর বলো ক’জন নারীই বা নিতে চাইবে?
সস্তা প্রেমের মূল্য দিয়ে বলো, আজকাল আর
ক’জন প্রেমিকা দামি দামি স্বপ্ন কিনে?
কে জানে–
কবে শেষ হবে আমার এ দুর্ভেদ্য জীবন!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা