বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত
Published: 9th, April 2025 GMT
ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। ফলে ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না।
গত ৮ এপ্রিল জারি করা ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ‘২০২০ সালের ২৯ জুনের জারি করা সার্কুলার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তবে আগের সার্কুলারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশি কার্গোকে ভারতীয় অঞ্চল ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হবে।’
বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে পোশাক খাতের প্রতিবেশী বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের জন্য নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার ফলে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের মতো দেশে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য বাণিজ্য প্রবাহ বাধাহীন ছিল। ভারত ২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির এই সুবিধা দিয়েছিল।
আগের বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে যাওয়ার পথে দেশটির স্থল শুল্ক স্টেশন (এলসিএসএস) ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি কার্গো ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দেওয়া হতো। ভারতীয় বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সরকারের এই সিদ্ধান্ত পোশাক, পাদুকা, রত্ন এবং গহনার মতো কয়েকটি ভারতীয় রপ্তানি খাতের জন্য সহায়ক হবে।
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন এক সময়ে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দেওয়া সুবিধা বাতিল করল, যার কয়েক দিন আগে ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের (এফআইইও) মহাপরিচালক অজয় সাহাই বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন আমাদের কার্গো পরিবহনে অতিরিক্ত সক্ষমতা থাকবে। অতীতে রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কারণে বন্দর ও বিমানবন্দরে স্থান কম পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করতেন।’’
এপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেন, ‘‘প্রত্যেক দিন গড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পণ্যবাহী ট্রাক দিল্লিতে আসে। যা কার্গোর চলাচল ধীর করে দেয় এবং এয়ারলাইন্সগুলো এই ধীরগতির কারণে অযৌক্তিক সুবিধা নিচ্ছে।’’
‘‘এই সুবিধা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, ‘‘পূর্ববর্তী প্রক্রিয়ায় ট্রানজিটের সময় এবং ব্যয় হ্রাস করার লক্ষ্যে ভারতের ভেতর দিয়ে একটি বাধাহীন রুটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এখন এই সুবিধা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা লজিস্টিক বিলম্ব, উচ্চ ব্যয় এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে পারেন। এছাড়া নেপাল এবং ভুটান—উভয় দেশই স্থলবেষ্টিত। বাংলাদেশের সুবিধা বাতিল করায় এই দুটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে। বিশেষ করে এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।’’
অজয় শ্রীবাস্তব আরো বলেন, ‘‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী, স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর এবং সেসব দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যের অবাধ পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংস্থাটির সকল সদস্যের। এর অর্থ এই জাতীয় ট্রানজিট অবশ্যই বাধাহীন হতে হবে এবং এসব পণ্য অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ও ট্রানজিট শুল্ক মুক্তও থাকবে।
ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই জেনেভা-ভিত্তিক সংস্থাটির সদস্য। তবে ‘এই পদক্ষেপের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে বলে দাবি করে অজয় শ্রীবাস্তব বলেন। 'ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে সহায়তা করে এসেছে, তবে এই সিদ্ধান্তে বোঝা যাচ্ছে যে অর্থনৈতিক সুবিধা কখনও জাতীয় নিরাপত্তা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়,বাংলাদেশের লালমনিরহাটে একটি বিমানঘাঁটি চীনের সহায়তায় সচল করার উদ্যোগ ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের কাছাকাছি হওয়ায় এটি ভারতের ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।'
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই স দ ধ ন ত ব যবহ র কর এই স ব ধ ব ত ল কর র জন য হ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয় উড়োজাহাজের ভয়াবহ ১০টি দুর্ঘটনা
কোঝিকোড় দুর্ঘটনা (২০২০)
২০২০ সালের ৭ আগস্ট এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইট কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে ছিটকে পড়ে এবং দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে ২০জন নিহত হন, আহত হন বহু যাত্রী। খারাপ আবহাওয়া, কম দৃশ্যমানতা এবং টেবলটপ রানওয়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল।
ম্যাঙ্গালুরু দুর্ঘটনা (২০১০)২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ৮১২ ম্যাঙ্গালুরুতে অবতরণের সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে একটি খাদে পড়ে যায়। বিমানে থাকা ১৬৬ জনের মধ্যে ১৫৮ জন নিহত হন। রানওয়েটি ‘টেবলটপ’ হওয়ায় দুর্ঘটনার মাত্রা ভয়াবহ হয়। টেবলটপ রানওয়ে হলো এমন একটি বিমানবন্দর রানওয়ে, যা একটি পাহাড় বা উঁচু মালভূমির ওপর অবস্থিত এবং চারপাশে গভীর খাদ বা ঢাল থাকে।
পাটনা দুর্ঘটনা (২০০০)২০০০ সালের ১৭ জুলাই কলকাতা থেকে দিল্লিগামী অ্যালায়েন্স এয়ারের একটি ফ্লাইট পাটনার একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ৫৫ যাত্রী ও ভূমিতে থাকা ৫ জনসহ মোট ৬০ জন নিহত হন। অবতরণের সময় পাইলট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১২ জুন, ভারত