ঢাকার কেরানীগঞ্জে যৌতুকের জন্য কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করে শরীরে ঢেলে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মিজান সরদার (৩৫) নামের একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাঁকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক মুন্সি মো. মশিউর রহমান আজ রোববার সকালে এ রায় দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এরশাদ আলম। রায় ঘোষণার পর মিজান সরদারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশে দিয়েছেন আদালত।

মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, মিজান সরদার তাঁর স্ত্রী–সন্তান নিয়ে কেরানীগঞ্জের কদমতলীতে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। এই দম্পতির একটি ছেলে (৭) আর মেয়ে (৬) রয়েছে। যৌতুকের জন্য মিজান বিভিন্ন সময় তাঁর স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। মিজানকে তাঁর স্ত্রীর পরিবার ২০ লাখ টাকা মূল্যের জমি কিনে দেয়; একই সঙ্গে ৭ লাখ টাকা দিয়ে দোকান করে দেওয়া হয়।

এরপরও নির্যাতন থামেনি। আরও যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন মিজান। আর্থিক অনটন থাকায় স্ত্রীর পরিবার মিজানকে আর কোনো যৌতুক দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের ৬ মে রাতে স্ত্রীকে মারধর করেন মিজান। পরে মিজানের স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

এ সময় মিজান কড়াইয়ে সয়াবিন তেল গরম করেন। পরে সেটা তাঁর স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দেন। দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মে মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি জবানবন্দি দেন।

এ ঘটনায় নিহত নারীর বাবা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মিজান সরদারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। পরে পুলিশ মিজানকে গ্রেপ্তার করে। তিনি স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করার কথা আদালতের কাছে স্বীকার করে নেন।

একই বছরের ৩১ জুলাই মিজানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১২ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আজ মিজানকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেন আদালত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ন সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ