শিশুর কান্না শুনে ছেলেধরা সন্দেহে অতি উৎসাহী জনতা এক বাবাকে বেধড়ক মারধর করেছে। রোববার বিকেল ৩টার দিকে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের রামদী ইউনিয়নের তাতারকান্দা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত সোহেল মিয়াকে (৩০) পুলিশ উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। 

সোহেল মিয়া কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের হারুয়া সওদাগর পাড়ার জজ মিয়ার ছেলে। ঘটনার সময় তিনি ৩ বছরের শিশু সন্তান লাইসাকে নিয়ে অটো রিকশাযোগে আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছিলেন। পরে শিশুটি চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন ছেলেধরা সন্দেহে অটোরিকশার গতিরোধ করে তাকে মারধর করে। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাদের দুইজনকে নিয়ে যায়।

উপজেলার রামদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.

জামাল উদ্দিন বলেন, শিশুটির বাবাকে ছেলেধরা সন্দেহ করে লোকজন মারধর করেছে।

পুলিশ জানায়, প্রায় ১০ বছর পূর্বে সোহেল তার প্রতিবেশী লালন মিয়ার মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। তার সংসারে সজিব (৮), লাইসা আক্তার (৩) এবং ৭ মাসের আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে। 

কুলিয়ারচর থানার উপ-পরিদর্শক শুভ আহমেদ বলেন, উদ্ধারের পর সোহেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি জানান, সোহেলের স্ত্রী কোলের সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় ভৈরবে তার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন স্ত্রীর খোজে। 

সোহেলের প্রতিবেশীরা জানায়, স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকে। ঝগড়া করে তার স্ত্রী সাবিনা প্রায়ই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাসায় আশ্রয় নেয়। আগে নৈতিক সমস্যা থাকলেও এখন সোহেল ভালো হওয়ার চেষ্টা করছে। ফেরি করে বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করে। 

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল আলম শামীম বলেন, এক সময় সোহেল মাদক এবং ছিচকে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সোহেল ও তার মেয়ে লাইসাকে রাত ৯টার দিকে জিডি মূলে তার মা, বাবা ও ভাই-বোনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকজন ভুল বুঝে তাকে মারধর করেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ