দীর্ঘ ১৮ বছর পর বগুড়ায় এবার পয়লা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করাসহ জমজমাট আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদ্‌যাপন করছে বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গ–সংগঠন। বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা ছাড়াও তারা সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। শোভাযাত্রায় ছিল হাতি, ঘোড়া, টমটম, পালকিসহ আবহমান বাংলার চিরায়ত নানা লোকজ ঐতিহ্য। ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচেগেয়ে তারা বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানায়।

বর্ষবরণে সকালে বগুড়া জেলা প্রশাসন, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ আলাদাভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। অন্যবার জেলা প্রশাসনের ব্যানারে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ লেখা থাকলেও এবার লেখা ছিল ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এবং পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের পর বাংলা বর্ষবরণে কোনো আয়োজন ছিল না বগুড়া বিএনপির। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিজাতীয় সংস্কৃতি ঠেকাতে দেশীয় সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে জমজমাট আয়োজনে বর্ষবরণ করা হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, বাংলা বর্ষবরণে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে বর্ষবরণ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, ছাত্রদল, মহিলা দল ছাড়াও জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) ব্যানার নিয়ে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় যোগ দেন। শোভাযাত্রাটি সাতমাথা-ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ থেকে শহর প্রদক্ষিণ করে।

ঢোলের তালে, বাঁশির সুরে হাতি, ঘোড়া, গরুর গাড়ি, পালকি, ঢেঁকি, মাছ ধরার জাল, পলো, কাস্তে, কোদাল, মাথালসহ লোকজ বাংলার হারিয়ে যাওয়া নানা তৈজসপত্র নিয়ে শোভাযাত্রায় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার লোকজ ঐতিহ্য তুলে ধরায় মুগ্ধ শহরবাসী। শোভাযাত্রার বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশু–পাখি, ফুল, হাতি, ঘোড়া, মাছ, পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, মোরগের লড়াই, প্যাঁচা—এসবের প্রতীক ও রকমারি মুখোশ বহন করা হয়। রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, লুঙিতে সাজে পুরুষ এবং কিশোর তরুণেরা। নারী আর কিশোরীদের পরনের রঙিন শাড়িতে শোভাযাত্রা আরও রঙিন হয়ে ওঠে। শহরের এডওয়ার্ড পৌর পার্কে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জাসাস।

সকালে বেলুন উড়িয়ে এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা এবং পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা। এ সময় অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোকজ সংস্কৃতি রক্ষায় ৪৩ বছর ধরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বগুড়া পৌরসভা, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় বগুড়া পৌর পার্কে বাংলা বর্ষবরণের বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে বগুড়া থিয়েটার। বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপনে থাকায় এবার বগুড়া থিয়েটার বৈশাখী মেলা আয়োজন করেনি। বগুড়া থিয়েটারের বদলে এবার বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে জাসাস।

সাত দিনের এ বৈশাখী মেলায় বাউল সংগীত, লোকজ নৃত্য, লাঠিখেলা, পালাগান,  মোরগ লড়াই, নাগরদোলা, চরকি, বানর খেলা, সাপের খেলা ছাড়াও নানা লোকজ আয়োজন রয়েছে। বৈশাখী মেলায় লোকজ ঐতিহ্যের নানা স্টল বসেছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকি, ট্রেন, নৌকাসহ নানা আয়োজন। মেলায় কদমা, খাজা, গজা, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা, নিমকিসহ হরেক লোকজ মিঠাই ছাড়াও শিশুদের খেলনার পসরা নিয়ে বসেছেন।

এদিকে শহরের সাতমাথায় বর্ষবরণ উৎসব পালন করছে ‘দিনবদলের মঞ্চ’। বগুড়া ইয়ুথ কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা তৌফিকুল আলম সকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। পুলিশ প্রথমে দিনবদলের মঞ্চের এ আয়োজনে বাধা দেয়। এ ছাড়া দিনবদলের মঞ্চের আয়োজন থেকে ঢালাওভাবে ইসলামবিদ্বেষী কোনো উসকানি না ছড়ানোর জন্য সকালে বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদের পেশ ইমামের নেতৃত্বে তৌহিদি জনতা দিনবদলের মঞ্চে এসে আয়োজকদের সতর্ক করে দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আনন দ শ ভ য ত র ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • হাবিব ও সজীবের জল্লারপাড় লেকে জমজমাট মাদক বানিজ্য
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ