বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের জনসমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘রাজনৈতিক সরকারকে আমরা বিশ্বাস করি না। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে এবং বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কৃষক–শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে কেউ কাজ করেনি।’

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে জনসমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন।

সমাবেশ শেষে ভূমিহীন আন্দোলনের পক্ষ থেকে কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগণের অধিকার আদায়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে সংস্কারের আশায় জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে কৃষক–শ্রমিক অংশ নিয়েছিলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর সেই আলোচনা স্তিমিত হয়ে আসছে। কৃষক, শ্রমিক ও প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষায় এই রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার জরুরি। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমরা মানব না।’

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে রাজনৈতিক সরকার আগের মতো ফ্যাসিবাদী আচরণের সুযোগ পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন।

শেখ নাসির বলেন, ‘বছরের পর বছর ভূমিহীনেরা নির্যাতনের শিকার। দেশের কৃষকদের ভালোমন্দ কেউ ভাবে না। আগেই জাতীয় সরকার নির্বাচন হলে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের বাইরে মেম্বার–চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন না। আমরা এই ধারণার পরিবর্তন চাই।’

তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভূমিহীনেরা সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ের নির্যাতিত মানুষ। তাদের সঙ্গে প্রশাসকের কোনো সম্পর্ক নেই। দ্রুত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন না হলে শ্রমিকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে না। আগে জাতীয় নির্বাচন হলে মেহনতি মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারবেন না৷ অতীতে আমরা এমনটিই দেখেছি। স্থানীয় এমপির বলয়ের বাইরে মেম্বার–চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল মজিদ বলেন, কৃষক ও শ্রমিকেরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা ভেবেছিলেন, এবার হয়তো নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। কিন্তু এখনো তার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকার যায় সরকার আসে, সবাই তাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মেটাতে ব্যস্ত। এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সবাই কথা বলছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে না হলে কৃষক আবারও বঞ্চিত হবে।

কবি জামাল শিকদার বলেন, ‘আমরা মেহনতি মানুষ। কিন্তু সেটার কোনো স্বীকৃতি নেই। ভূমিহীন কারা? আমাদের ভূমিহীন বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাদের? যাদের ভূমিহীন, শ্রমিক, চাষাভুষা বলে ছোট করছেন, তাঁরা ফসল না ফলালে আপনারা শহরের মানুষ খেতে পারতেন না। কাজেই এই ভূমিহীনদের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করুন।’

স্থানীয় পর্যায়ে নিয়োগ করা প্রশাসকদের সঙ্গে ভূমিহীনদের কোনো যোগাযোগ নেই উল্লেখ করে গণমাধ্যমকর্মী সাকিব প্রত্যয় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর একটি দল নতুন করে চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের দিয়ে জোর দখলে মেতেছে। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার–চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ভূমিহীনেরা তাঁদের দাবির কথা সরকারের কাছে বলতে পারেন। কিন্তু ফ্যাসীবাদি আমলের পর জনপ্রতিনিধির পরিবর্তে আমরা প্রশাসক দেখতে পাই। এদের দিয়ে কৃষক–শ্রমিকদের কোনো উন্নতি হচ্ছে না।’

জনসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের লবণচাষি বাবর চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ হাওর এলাকার প্রতিনিধি মো.

মুহসিন, গাইবান্ধার আলুচাষি সামিউল আলম, জামালপুরের কৃষক নেতা জিয়াউল ইসলাম, নোয়াখালীর হাতিয়া প্রতিনিধি সামসুউদ্দীন আহমদ, পাবনার পেঁয়াজচাষি মাসুদ রহমান খান, সাভারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লিটন কবিরাজ, সচিবালয় এলাকার রিকশাচালক শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে ৭ দিনে ৫ জনের করোনা শনাক্ত, সতর্কতা মানছেন কি পর্যটকেরা

কক্সবাজারসহ সারা দেশেই বাড়ছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। জেলায় গত সাত দিনে পাঁচজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে এ নিয়ে উদাসীনই থাকছেন সৈকত শহরে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা।

ঈদের ছুটিতে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। বিশেষ করে সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে পর্যটকের ভিড়ে পা ফেলা দায়। কিন্তু মুখে মাস্ক পরছেন না কোনো পর্যটক। দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। তাতে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ৪ থেকে ১১ জুন—এই ৭ দিনে ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন স্থানীয়, অপর দুজন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শরণার্থী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে জড়ো হলেও তাঁদের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ নেই।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় বছরে জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩৪ জন।

মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, মাত্র দুই কিলোমিটার সৈকতে হাজারো পর্যটক এসেছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। কারণ জানতে চাইলে ঢাকার বাসাবোর ব্যবসায়ী সাইফুজ্জামান (৫৫) বলেন, দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলারও কোনো সুযোগ নেই।

সৈকতের বিভিন্ন পণ্য বিক্রির হকার, আলোকচিত্রী, ঘোড়ার কর্মচারী—কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাসে চলাচলকারী লোকজনের মুখেও মাস্ক ছিল না।

কক্সবাজারের কলাতলী হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, অতিথিদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হলেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীদেরও মাস্ক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণের জন্য কক্সবাজার এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানকার সৈকতে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। আবার উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। ঘনবসতির কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। করোনার সংক্রমণ রোধে জেলার নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিকভাবে দু-তিন শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। অচল যন্ত্রপাতিগুলোও ঠিকঠাক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলা; মুখে মাস্ক ব্যবহার; হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা; ব্যবহৃত টিস্যু ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিনে নিক্ষেপ; সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার; অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা; আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এগিয়ে চলা এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু কক্সবাজারে কোনোটিই ঠিকমতো হচ্ছে না। পাঁচ শতাধিক হোটেলের অধিকাংশটিতেই অতিথিদের জন্য মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা, মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিধিনিষেধ মেনে চলার ক্ষেত্রে পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করতে আজ দুপুর থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে করোনার সংক্রমণ রোধ, আইসোলেশন সেন্টার চালু ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

পাঁচজনের করোনা শনাক্ত

২৫০ শয্যার সরকারি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, ১ জুন হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৪, ১০ ও ১১ জুন ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষার করার জন্য কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক, সংক্রামক রোগ ও ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. শাহজাহান নাজির প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য কক্সবাজার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে। ২০২০ সালের পরের দেড় বছর কক্সবাজার পৌরসভা ছিল করোনা হটস্পট। ঘনবসতির কারণে রোহিঙ্গা শিবিরেও আক্রান্তের হার বেড়ে গিয়েছিল।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে দুজন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা আইসোলেশন সেন্টারগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে ৭ দিনে ৫ জনের করোনা শনাক্ত, সতর্কতা মানছেন কি পর্যটকেরা