সাকিবের আ.লীগে যোগদান শুধু ভুল সিদ্ধান্ত নয়, নৈতিক ব্যর্থতাও বটে: প্রেস সচিব
Published: 17th, April 2025 GMT
ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে যোগদানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল পছন্দের সিদ্ধান্ত কেবল ভুল পদক্ষেপ ছিল না, বরং এটি নৈতিক ব্যর্থতাও বটে।
বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ মন্তব্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
দীর্ঘ ওই পোস্টে শফিকুল আলম লেখেন, ‘সাকিব আল হাসানের রাজনীতিতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। একজন নাগরিক হিসেবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ার অধিকার তার রয়েছে। সাকিব রাজনীতিতে যোগদান করেছেন, সেটি সমস্যা নয়, বরং বড় প্রশ্ন হলো, রাজনীতিতে যোগ দিতে গিয়ে তিনি কাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।’
প্রেস সচিব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যখন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত—যেমন গণহত্যা, গুম, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার, বিরোধীদের নামে মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, পদ্ধতিগত দুর্নীতি, এমনকি ব্যাংক ডাকাতির মতো অপরাধও অন্তর্ভুক্ত, তখন সেই দলে সাকিবের যোগদানের সিদ্ধান্ত নৈতিকভাবে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কেবল এটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ ছিল না, এটি ছিল আন্তর্জাতিক মহলের কড়া নজরদারির মধ্যে থাকা শাসন ব্যবস্থার প্রতি মৌন সমর্থন।
তিনি আরও লেখেন, একদলীয় কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবিদের কথা মনে পড়ে না, যিনি স্বেচ্ছায় এমন একটি সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
শফিকুল আলম উল্লেখ করেন, সাকিব কেবল দেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে ভুল করেছেন তা নয়—তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতা উপেক্ষা করেছেন। এর থেকে দুটি বিষয় বোঝার ইঙ্গিত দেয়, হয় তিনি রাজনৈতিকভাবে ভীষণ অজ্ঞ বা সরল অথবা খারাপ কিছু যা ব্যক্তিগত লাভের জন্য এক ধরনের সুবিধাবাদী পদক্ষেপ।
প্রেস সচিব আরও বলেন, বড় উদ্বেগের বিষয় সাকিবের কাছ থেকে কার্যকর জনসংযোগ বা কৌশলগত যোগাযোগের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সাকিব চাইলে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টস ও ইমেজ ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির পরামর্শ নিতে পারতেন, যারা বিশ্ববিখ্যাত সেলিব্রিটিদের কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। তারা নিশ্চয়ই তাকে এমন একটি সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখত, যা এখন তার মর্যাদা ও ব্র্যান্ড উভয়কেই কলুষিত করেছে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ সময়ে তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। তাই প্রফেশনাল পিআর পরামর্শ নেওয়া কখনো তার নাগালের বাইরে ছিল না।
তিনি বলেছেন, তবে যেটি এই সব কিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিকটুভাবে চোখে পড়ে, তা হল তার নীরবতা। বিশেষ করে তার সরকার এবং তার নিজের শহর মাগুরায় তার সমর্থকদের দ্বারা সংগঠিত সহিংসতা এবং হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। মাগুরায় বেশ কয়েকজন বিরোধী কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তবুও সাকিব কিছুই বলেননি। কোনও নিন্দা নেই, ন্যায়বিচারের জন্য আহ্বানও অনুপস্থিত। কোনও ক্ষমা প্রার্থনা নেই। তার নীরবতা কেবল হতাশাজনক ছিল না, এটি বধির ছিল।
প্রেস সচিব লেখেন, সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার হতে পারেন। কিন্তু প্রতিভা ও জাতীয় দলের হয়ে পারফর্ম করা কিন্তু দায়মুক্তি দেয় না। একটি সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে—যাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে—তিনি দেশের ইতিহাসের কিছু অন্ধকার অধ্যায়কে বৈধতা দিয়েছেন।
শফিকুল আলম লেখেন, এই মুহূর্তে, তার কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা হল লোভ। তার রাজনৈতিক পদক্ষেপে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বদের সাথে তার সম্পর্ক সবকিছু একই দিক নির্দেশ করে। সেটি হলো ব্যক্তিগত লাভ, জনসেবা নয়।
প্রেস সচিব পোস্টের শেষ অংশে লেখেন, একদিন সাকিবকে ফিরে আসতে হতে পারে। সম্ভবত তখন তিনি অবশেষে সত্যের মুখোমুখি হবেন আর জানবেন আওয়ামী লীগে তার যোগদানের সিদ্ধান্ত কেবল একটি ভুল পদক্ষেপই ছিল না, বরং একটি বিশ্বাসঘাতকতা ছিল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন র জন ত ক র জন ত ত পদক ষ প র র জন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা হবে: আপ বাংলাদেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত না হলে তা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। এ সময় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচন চায় ছাত্রশিবির
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
দাবিগুলো হলো— আসন্ন জকসু নির্বাচন ২৭ নভেম্বরেই অনুষ্ঠিত করতে হবে; নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে; সব সংগঠনকে সমান সুযোগ দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে; অরাজনৈতিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জবির প্রধান সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যখন জকসুর দাবিতে অনশন করছিলাম, তখন প্রশাসন ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একটি মহল নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে।”
তিনি বলেন, “ডিসেম্বর মাসে ভর্তি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় ওই মাসে নির্বাচন অসম্ভব। তাই ২৭ নভেম্বরই জকসু নির্বাচনের উপযুক্ত সময়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা জানতে চাই, নির্বাচন পেছানোর মধ্য দিয়ে জকসু নির্বাচন ভণ্ডুল করার কোনো প্রক্রিয়া চলছে কিনা। পুরান ঢাকাকে অস্থিতিশীল করে একটি মহল নির্বাচন পণ্ড করতে চায়। শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম ভোট হবে জকসু নির্বাচন—তা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী