চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরে দেশে নতুন করে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসের ৯৫তম বার্ষিকীতে আজ শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের সামনে এক সমাবেশে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ দিবসকে ‘জাতীয় যুব দিবস’ ঘোষণার দাবিতে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন এই যুব সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

সমাবেশে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘একাত্তরে আমরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি; কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর দেশে সাম্প্রদায়িক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভাবাদর্শ পুনর্বাসিত হয়েছে। চব্বিশের অভ্যুত্থানের পরেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার নতুন উত্থান ঘটেছে। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।’

এ সময় শাহ আলম বলেন, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ প্রায় পৌনে ২০০ বছর লড়াই করেছে; কিন্তু সেই জাতীয় মুক্তি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ সফল হয়নি। কারণ, উপমহাদেশ সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। আজও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে পারেনি।

সমাবেশে মাস্টারদা সূর্য সেন ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বিপ্লবী চেতনা ধারণ করে আগামী দিনের ছাত্র ও যুব সমাজ দুর্বার সংগ্রাম গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। ১৮ এপ্রিলকে জাতীয় যুব দিবস ঘোষণা করারও দাবি জানান তিনি।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য ত্রিদিব সাহা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন ভূঁইয়া প্রমুখ।

সমাবেশের শুরুতে যুব বিদ্রোহ স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর চার দিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে লড়াই হয়। তিন ঘণ্টার সেই লড়াইয়ে ৮২ জন ব্রিটিশ সেনা নিহত এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের  নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 

ঢাকা/শরিফুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ