যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর ডাকাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙতে ভাঙতে নদী এখন বিদ্যালয়ের ভবনের কাছে চলে এসেছে। দুই দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় বিদ্যালয়ের একমাত্র পাকা ভবনটি এখন যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে ভাঙন চললেও ২৮ মার্চ থেকে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে। নদীর ভাঙনে বিদ্যালয়টির আশপাশে অর্ধশত বসতঘর ও বিস্তীর্ণ জনপথ বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকি থাকায় বিদ্যালয়টির আশপাশের লোকজন বসতভিটা ভেঙে নিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

চর ডাকাতিয়াপাড়া এলাকার কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী শোয়েব হোসেন বলেন, চর ডাকাতিয়াপাড়া, মাগুরিহাট, ফারাজিপাড়া ও কিসের মোড় গ্রামের একমাত্র সরকারি বিদ্যালয়টি এটি। চারটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে পড়ালেখা করে। ভাঙন বিদ্যালয়ের পাকা ভবন থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে আছে। বৃষ্টি হওয়ার পর থেকে ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কিছুক্ষণ পর পর নদীর পাড় বিশাল আকার ধরে পানিতে ভেঙে পড়ছে। তাই ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপারের তিন শতাধিক পরিবার।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খোলাবাড়ি থেকে চরডাকাতিয়া হয়ে বড়খাল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন চলছে। ওই অংশের মধ্যে খোলাবাড়ি, হাজারী, মাগুরিহাট, চর মাগুরিহাট, খানপাড়া, মাঝিপাড়া, ডাকাতিয়া গুচ্ছগ্রাম, চরডাকাতিয়া ও চর ডাকাতিয়াপাড়ার গ্রামের কয়েক হাজার বসতভিটা ও শত শত একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। মাঝেমধ্যে কয়েকটি স্থানে পাউবো শুধু তীব্র ভাঙনের সময় কিছু জিও ব্যাগ ফেলেছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই সব গ্রামের অবশিষ্ট বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চর ডাকাতিয়াপাড়া বাসিন্দা হামিদুল হকের বসতবাড়ি গত বুধবার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি এখন ওই এলাকার এক আত্মীয়য়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, সব কৃষিজমি অনেক আগেই নদীর মধ্যে গেছে। শুধু বাড়ির ভিটাটুকুই ছিল। তা–ও নদী হয়ে গেল। নদীভাঙনে সব শেষ। এখন থাকার জায়গাও নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিয়ারসহ সুন্দর একটি পাকা ভবন নির্মাণ হয়। ভবনে অফিসসহ চারটি কক্ষ আছে। বিদ্যালয়ে ১০২ শিক্ষার্থী পড়ে। নদীভাঙনের আগে বিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন ৬ জন শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, নদীর ভাঙন বিদ্যালয় থেকে অনেক দূরেই ছিল। কয়েক মাস ধরে ভাঙতে ভাঙতে একদম বিদ্যালয়ের কাছে চলে আসে। বিদ্যালয়ের আশপাশে বহু বসতবাড়ি ছিল। সেসব বসতবাড়িও বিলীন হয়েছে। ভাঙন এখন বিদ্যালয়ের ভবনের একদম কাছে। মনে হচ্ছে না বিদ্যালয়টি ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

নকিবুজ্জামান খান বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনরোধে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের ভবনটি রক্ষায় সেখানেও জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, যাতে বিদ্যালয়টি রক্ষা পায়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ য লয়ট ব ল ন হয় হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক। 

 এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”

বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।” 

চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”

ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।” 

হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে। 

গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।

কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”

ঢাকা/রাঙামাটি/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে বসতবাড়ি নির্মাণ কাজে বাধা ও প্রাননাশের হুমকি
  • ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব