কোন এক প্রাক-বসন্তে এভাবেই কয়েকটা
পরিণামহীন আর কোলাহলবর্জিত লোকালয় পেরিয়ে
আমরা দু’জনে হাত ধরাধরি করে
এক প্রহেলিকাপূর্ণ সূর্যাস্তের বুলন্দ দরওয়াজার
পাদদেশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম।
তোমার সবুজ মায়াবী জুতোর গায়ে
সুগন্ধি পাথর খোদাই করা–
বসরাই এবং সুবর্ণগ্রামের বাণিজ্যপথের উপঢৌকন;
তোমার হাতের আঙুলে জড়ানো মসলিন
ক্রমশ প্রসারিত হয়েছিল এক সুডৌল, প্রেতযৌবনা শঙ্খে।
শিহরনে সমর্পিত হয়েছিলাম, হয়তো তুমিও;
রক্তে-ঘামে লেখা হয়েছিল বুঝি আমাদের যৌথ ললিতকাব্য।
অবশেষে, আমারই ইশারায় আর তোমার বিলম্বিত সম্মতিতে
এক জটিল পথ পরিক্রমার পরিকল্পনা করেছিলাম যখন
তোমার নিজস্ব বিশ্বাসকে তুমি ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছিলে।
তোমার সেই স্খলনকে এক অতিপ্রাকৃত, প্রেত-তাড়িত প্রেম
বলে শনাক্ত করতে পেরেছিলাম।
মসলিন-আবৃত, প্রসারিত বাহু তোমার কোমল নখরে
আমাকে রক্তাক্ত করার সম্মতিও দিয়েছিলাম।
সে এক আশ্চর্য চৈত্রের দহনের স্মৃতি।
অতঃপর,
আলোকস্পৃষ্ট পতঙ্গ আমরা
চক্রাকার কাল-সমুদ্রে
পাক খেতে খেতে
বাঁক ঘুরে ঘুরে
মন্দ্রসপ্তকে সঞ্চারমান এক মোহন কামারশালার
সামনে এসে পৌঁছেছিলাম।
যেন ঋষ্যশৃঙ্গের গুল্ম-গ্রন্থিল আশ্রমের প্রবেশমুখে
প্রার্থনারত নিঃসন্তান দম্পতি।
হাতুড়ি-ছেনির দ্বৈরথ মিথুন আমাদের দু’জনকেই প্রত্যক্ষ করতে হলো;
অবশেষে, প্রাচীন এক তাম্রলিপিতে শিহরিত হলো আমাদের নাম;
এভাবেই আমরা বিস্মরণীর নখর হতে মুক্ত হতে চেয়েছিলাম।
শুধু আমি জানি
সেই রাতে তুমি তোমার নিজস্ব ঈশ্বরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলে।
তারপর ফিরে আসা
ফিরে যাওয়া
ফিরে দেখা
ফিরে চাওয়া
ঘুরে ঘুরে সেই
বক্রিম চঞ্চল পথ
স্পর্শালোকিত তোমার।
আজও শুনি সেই শঙ্খের হ্রেষা রব
পুরোনো পৃথিবীর পথ চিনে নেবার,
যদিও ফাটল ধরেছে তার
বাহু, কবন্ধ, হাড়
বৃথা আক্রোশে কেবল অনুতপ্ত হাওয়ায়,
বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলে।
অথচ চেয়ে দেখো–
এই তো যেন স্পর্শ করছি
তোমার খয়েরি চোখ, চৌচির বল্লভ
তোমার সমুদ্র শ্লোক, মন্থর বিজ্ঞান
তোমার প্রাচীন প্রস্তর জ্ঞান,
লুপ্ত সভ্যতায় বিস্মৃত দেবতার হাহাকার।
এসবই আজ
আমাদের যূথস্মৃতিতে অস্তিত্বমান
কেবল পিছু ফিরে তাকাবার পাপে
অদৃশ্য সেই দরওয়াজা– জানি আর কখনও খুলবে না।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান