৫৪ বছর ধরে হারমোনিয়াম বানান রতন, তাঁর হাতেই ওঠে প্রথম সুর
Published: 25th, April 2025 GMT
৫৪ বছর ধরে কাঠের হারমোনিয়াম তৈরির কাজ করছেন যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রতন বিশ্বাস। তাঁর হাতেই নতুন হারমোনিয়ামে প্রথম সুর ওঠে। পুরোনো হারমোনিয়াম মেরামত করে সুর তুলে দেওয়ার কাজও তিনিই করেন।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বি কে সড়কে ‘অপূর্ব মিউজিক’ নামে হারমোনিয়াম তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন রতন বিশ্বাস। একমাত্র ছেলেকেও এই পেশায় যুক্ত করেছেন। বাবা-ছেলে মিলে কাজ করেন।
রতন বিশ্বাস বলেন, করোনা পরিস্থিতির পর, অর্থাৎ ২০২০ সালের পর থেকেই হারমোনিয়াম বেচাকেনা কমে গেছে। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০টি হারমোনিয়াম বিক্রি হতো। এরপর সেটা কমে ৫ থেকে ৬টায় নামে। এখন মাসে ২ থেকে ৩টা বিক্রি হচ্ছে। ১৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মানের হারমোনিয়াম তৈরি করে বিক্রি করেন তাঁরা। দাম কমবেশির সঙ্গে সুরের কোনো হেরফের হয় না। আকারে ছোট-বড় অনুযায়ী দাম কমবেশি হয়।
রতন বিশ্বাসের বাবা লক্ষণ বিশ্বাস ছিলেন কৃষক। ঝালকাঠির বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। সত্তরের দশকে রতনের এক ভাই মন্মথ বিশ্বাস ঝালকাঠি শহরে হারমোনিয়াম তৈরির দোকান দেন। রতন শখের বশে হারমোনিয়াম তৈরির কাজ শিখতেন তখন। পরে বরিশাল শহর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে হারমোনিয়াম তৈরির কাজটি আরও ভালোভাবে শেখেন। দুই বছর কলকাতায় থেকে দেশে ফিরে আবার ভাইয়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। পরে নিজেই ঝালকাঠি শহরে একটি দোকান দেন।
রতন বিশ্বাস বলেন, বিয়ে করেন, সংসার হয়। ঝালকাঠির দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। জীবনের প্রয়োজনে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে ১৯৮৬ সালে বাড়ি ছাড়েন। কলকাতা যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, পরে যশোর শহরে এসে থামেন। এখানকার বেজপাড়া পূজার মাঠের পাশে হারমোনিয়াম তৈরির দোকানে কাজ নেন। অগ্রিম ৩০০ টাকা বেতন নিয়ে বাসা ঠিক করে হাঁড়িপাতিল কিনে ঘরসংসার শুরু করেন। দেড় বছর ওই দোকানে কাজ করেন। পরে ‘অপূর্ব মিউজিক’ নামে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
রতন বিশ্বাসের একমাত্র ছেলে অপূর্ব বিশ্বাস মাধ্যমিক পাস করে বাবার সঙ্গে হারমোনিয়াম তৈরি ও মেরামতের কাজ শুরু করেন। দুই মেয়ে লেখাপড়া করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার এখন আর চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। ১৪ বছর বয়স থেকে হারমোনিয়াম তৈরির কাজের সঙ্গে আছি। এখন বয়স ৬৮ বছর। ৫৪ বছর ধরে এই কাজ করছি। যশোর মেডিকেল কলেজের পাশে তিন শতাংশ জমি কিনেছি। সেখানেই বাড়ি করব ভাবছি।’ রতন বিশ্বাস আরও বলেন, ‘মনে শান্তি থাকলে মানুষ গানবাজনার চর্চা করে। ব্যবসা হয়। মনে শান্তি না থাকলেও তো গানবাজনা হবে না। ব্যবসাও হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন রতন ব শ ব স ঝ লক ঠ ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?