চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ছেলে জোনায়েদ হোসেন সিকদারের সঙ্গে হাটহাজারীর মেয়ে মোরশেদা জাহান মিমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবার মেনে নিলে আজ শনিবার তাদের বিয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বিয়ের পোশাকের পরিবর্তে তাদের দু’জনের গায়ে উঠল কাফন। ঘুরতে বের হয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে তাদের দু’জনের প্রাণ গেছে।

বিকেল ৪টায় মিমকে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সময় রাউজানের গহিরা বটতল এলাকায় চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে বাইক দুর্ঘটনায় তারা গুরুতর আহত হলে প্রথমে গহিরা জে কে মেমোরিয়াল হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে বাইকের সংঘর্ষে জোনায়েদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসলিম সিকদার। 

২০ বছরের জুনায়েদ শিকদার রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভবন এলাকার আকবর সিকদারের ছেলে। আর ১৭ বছরের মিমের বাড়ি হাটহজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। 

এদিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী মা ও তাঁর শিশুসন্তান নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক স্বামী ও মেয়েসহ দু’জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার পাটকেলঘাটা থানার সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কদমতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– খুলনার পাইকগাছা থানার কপিলমুনি এলাকার অপূর্ব সাধুর স্ত্রী রিতা সাধু (২৬) ও তাদের শিশুসন্তান সৌরভ সাধু (২)। আহতরা হচ্ছেন– স্বামী অপূর্ব সাধু (৩২) ও মেয়ে সুর্বণা ওরফে সুমি সাধু (৫)। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মাহমুদুল ইসলাম জানান, অপূর্ব সাধু তাঁর স্ত্রী রিতা সাধু, মেয়ে সুর্বণা ওরফে সুমি ও শিশুসন্তান সৌরভ সাধুকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন। তারা পাইকগাছার কপিলমুনি থেকে পাটকেলঘাটা হয়ে যশোরের সাগরদাঁড়ী গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পাটকেলঘাটার সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কদমতলা এলাকায় পৌঁছলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সাতক্ষীরাগামী ইমাদ পরিবহনের বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। 

মিরসরাইয়ে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় আবুল কাশেম (৭২) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাদি ফকিরহাট বাজারের উত্তর পাশে ঢাকামুখী লেইনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কাশেম খইয়াছড়া ইউনিয়নের উত্তর গাছবাড়িয়া গ্রামের মৃত এবাদুল রহমানের ছেলে ও হাদি ফকিরহাটের ব্যবসায়ী। 

নাটোরের গুরুদাসপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুর রশিদ (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর আঞ্চলিক সড়কে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ওই এলাকার মৃত দারোগ আলীর ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানে বেড়গঙ্গারামপুর আসছিলেন আব্দুর রশিদ। এ সময় নাজিরপুর থেকে আসা একটি মোটরসাইকেল বেপোরোয়া গতিতে ছুটে এসে ভ্যানের সামনে ধাক্কা দেয়। এতে আব্দুর রশিদ গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান। 

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাউজান (চট্টগ্রাম), গুরুদাসপুর (নাটোর), মিরসরাই (চট্টগ্রাম) ও কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি)

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত দ ই দ র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

কেরানিগঞ্জে ৩ জনকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড, খুনি গ্রেপ্তার

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে ঢাকার কদমতলী থানাধীন জুরাইন রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

হত্যার শিকার তিন জন হলেন- নুপুর (২৫), বিথী আক্তার (২৪) ও তার শিশু পুত্র রাফসান (৪)। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল জাহাঙ্গীর আলম। 

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি জানান, গত ২৫ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় নুপুরের মস্তক ও হাত-পা বিহীন দেহের খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ২৭ এপ্রিল হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীর সংলগ্ন ভাসমান অবস্থায় মৃতদের তিনটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। খণ্ডিত অংশের মধ্যে ছিল একটি পা ও দুইটি উরু। 

পরে ঘটনাস্থলের পাশের একটি সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে রাজধানীর জুরাইন রেললাইন এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, নিহত বিথী আক্তার তার কারখানায় চাকরি করতো। চাকরির সুবাদে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তার সাথে ২০১৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

বিষয়টি তার আগের স্ত্রী রুমা জানতে পারলে সে পুনরায় বিথী আক্তারের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। এতে বিথী আক্তার রুবেল নামে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে। ওই ঘরে তার রাফসান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। ঘাতক মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল পরে জানতে পেরে আবারো বিথী আক্তারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং তাকে বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে মীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তার সাথে সংসার করতে থাকেন। 

মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল তার প্রথম স্ত্রী রুমাসহ রাজধানীর কদমতলী থানার জুরাইনে একটি বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে। এই ঘটনাটি পরে তার প্রথম স্ত্রী আবার জানতে পেরে তার সাথে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিথী আক্তার মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুলকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

এ অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল সকালে মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল বিথী আক্তারের বাসায় চলে যায়। এসময় তার সাথে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন হাওলাদার শিমুল গামছা দিয়ে বিথী আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় বিথীর শিশু সন্তান রাফসানকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। 

এসব ঘটনা দেখে ফেলে ওই ফ্ল্যাটের সাবলেটে ভাড়া থাকা নুপুর চিৎকার করলে তাকেও গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। পরে মৃতদেহগুলো বাথরুমে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সে। রাফসানের ছয় টুকরা লাশ বস্তা বন্দি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারা এলাকায় একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। 

নুপুরের খণ্ডবিখণ্ড লাশ রাতে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে ফেলে দেয়। বিথীর খণ্ডবিখণ্ড লাশ বস্তা বন্দী করে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় ব্রিজের উপর থেকে নদীতে ফেলে দেয়। পরে স্বাভাবিক অবস্থায় সে তার জুরাইনের বাসায় চলে যায়। 

তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী রোববার রাতে শিশু পুত্র রাফসানের খণ্ডিত লাশ পেয়ারা পূর্ব পাড়া জৈনক মিন্টু মিয়ার জমির ঝোপঝাড়ের মধ্য থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিথী আক্তার ও নুপুরের মস্তক এখনো উদ্ধার করা যায়নি। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাজাহারুল ইসলাম।

ঢাকা/শিপন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেরানিগঞ্জে ৩ জনকে হত্যার পর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড, খুনি গ্রেপ্তার