সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাট বাজারে অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়ে প্রতি সপ্তাহে লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে। বাজার ইজারার শর্তের বাইরে ওয়াকফ এস্টেটের মালিকীয় সম্পত্তি দখল করে এই পশুর হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। 

অভিযোগ উঠেছে, বিএনপিপন্থী বাজার ইজারাদার সাইফ উদ্দিন শামীমের নামে রশিদ ছাপিয়ে গরু ছাগলেরর হাট বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে এ বাজার থেকে।

এদিকে, অবৈধ দখলদারিত্ব ও পশুর হাট সরানোর দাবিতে হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটের (সরকারি ইসি নং ১১৩৩৩) মোতওয়াল্লী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।

জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় লোকজন অবৈধ গরু বাজার বসাত, যা এখনও চলমান রয়েছে। আমাদের ওয়াকফ এস্টেট বা রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটে সরকারিভাবে কোনো পশুর হাট ছিল না, নেইও। সোনাগাজী উপজেলা প্রশাসন রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাট তোহা বাজার উল্লেখ করে ইজারার দরপত্র আহ্বান করে এবং সেই অনুযায়ী ইজারাদারের সাথে চুক্তি করে। এরপরও একটি চক্র সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে পশুর হাট চলমান রেখে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের ওয়াকফ এস্টেট এবং তোহা বাজারের পেরি-ফেরি আলাদা। এরপরও ইজারাদার তোহা বাজারের সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের ওয়াকফ এস্টেটে অবৈধভাবে পশুর হাট বসিয়েছে। আমরা কোনো প্রকার লাভবান হচ্ছি না। পাশাপাশি আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পশুর হাট বসানোয় বাড়ির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অবৈধ পশুর হাট বন্ধে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে, যা এখনও সুরাহা হয়নি। বর্তমানে বিষয়টি সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তার লুবনার নিকট তদন্তাধীন রয়েছে।”

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটের দরপত্রে ‘তোহা বাজার’ (গন্ডি বাজার) নামে উল্লেখ থাকলেও সেখানে পশুর হাট বসানোর কোনো অনুমোদন ইজারাদারকে দেওয়া হয়নি। চুক্তিপত্রেও পশুর হাট/গরু বাজারের কথা উল্লেখ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এ বাজারে অবৈধ পশুর হাট বসিয়ে অন্তত ৮৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আরেকটি চক্র প্রতি সপ্তাহে বাজার থেকে প্রায় লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নতুন দরপত্র আহ্বান করেন। এতে রিয়াজ উদ্দিন মুন্সীর হাটকে ‘তোহা বাজার’ ‘গন্ডি বাজার’ হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়। বিএনপি-ঘনিষ্ঠ সাইফ উদ্দিন শামীম প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে ইজারা নেন এবং এরপর থেকেই ওয়াকফ এস্টেটের মালিকীয় জায়গায় নতুন করে পশুর হাট বসানো হয়।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই, প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার গরু ছাগলের এ হাট থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আসন্ন কোরবানির মৌসুমে চাঁদা আদায়ের পরিমাণ বাড়বে আরও কয়েকগুণ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, পশুর হাটকে লক্ষ্য করে শামীম প্রচলিত সরকারি ইজারার মূল্য থেকে চার গুণ বেশি দিয়ে ইজারা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ইজারার টাকা উঠানোর জন্য তোহা বাজারে টোল বৃদ্ধি এবং গরু-ছাগলের হাসিল বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সামনে কোরবানির মৌসুমে এ অবৈধ পশুর হাটকে ঘিরে আরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে তার।

এ বিষয়ে বাজার ইজারাদার সাইফ উদ্দিন শামীম বলেন, “বাজারটি ‘তোহা বাজার’ ও ‘পশুর হাট’ নিশ্চিত হয়েই আমি ইজারা নিয়েছি। সরাসরি দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ করে এক বছরের জন্য বাজার ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। শুধুমাত্র তোহা বা গন্ডি বাজার ১০ লাখ টাকা ইজারা নেওয়ার মতো পাগল আমি না। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাকে যে চুক্তিপত্র দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘পশুর হাট’ বসানোর অনুমতি দেওয়া আছে। এছাড়া ওয়াকফ এস্টেটের যে সম্পত্তির মধ্যে বাজার মিলানো হচ্ছে, তার জন্য হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেট জামে মসজিদকে প্রতি মাসে ৫০০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম বলেন, “রিয়াজ মুন্সিরহাট বাজারটি অনেক পুরোনো একটা বাজার। বাজারটি ইতোমধ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। দরপত্রে বাজারটি ‘তোহা বাজার’ (গন্ডি বাজার) নামে উল্লেখ থাকলেও সেখানে পশুর হাট বসানোর কোনো অনুমোদন ইজারাদারকে দেওয়া হয়নি। চুক্তিপত্রেও পশুর হাট/গরু বাজারের কথা উল্লেখ নেই। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি ইজারাদার সেখান পশুর (গরু-ছাগল) হাট পরিচালনা করছে যা চুক্তিপত্রের বিরোধী। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।”

তিনি আরো বলেন, “হাজী মমতাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষ দাবি করছে তাদের ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে বাজার পরিচালনা হচ্ছে। বিষয়টি তারা আমাদের নজরে এনেছেন। আমরা এ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব জ র ইজ র ইজ র দ র দরপত র র জন য আম দ র ইজ র র উল ল খ সরক র উপজ ল তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধুদের সঙ্গে ঝর্ণার কূপে নেমে প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ঝর্ণার কূপে বন্ধুদের সঙ্গে গোসলে নেমে আসিফ উদ্দিন (২৪) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বড়দারোগার হাটের পূর্বে পাহাড়ের ভেতর রূপসী ঝর্ণায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

আসিফ উদ্দিন চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ির কামাল গেট এলাকার মো. গোলাপের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

আফিসের বন্ধু মেহেদী হাসান জানান, তারা ৫ বন্ধু মিলে রোববার চট্টগ্রাম থেকে রূপসী ঝর্ণায় বেড়াতে যান। বেলা ১১টার দিকে ঝর্ণা এলাকায় পৌঁছান। কিছুক্ষণ আনন্দ করার পর সবাই মিলে ঝর্ণার একটি কূপে গোসলে নামেন। এ সময় আসিফ ডুবে যায়। বন্ধুরা মিলে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন তারা। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে কূপ থেকে আসিফের মরদেহ উদ্ধার করেন। 

আরেক বন্ধু নাফিজ আহম্মেদ জানান, আসিফ সাঁতার জানতো না। 

ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই পর্যটকের মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিজামপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ জাহিদুল হোসেন আরমান বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবাকেন্দ্র থেকে পর্যটক নিখোঁজের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ