শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন।
মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে।
আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা
সময় বোধহয় আর ধোনির সঙ্গী নয়। একদিন যিনি ছিলেন আইপিএলের গর্ব, তার চেন্নাই সুপার কিংস আজ দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে বিদায়ের মুখে। ঘরের মাঠে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে হারের পর ২০২৫ আইপিএলে প্লে-অফের সব আশা শেষ হয়ে গেল সিএসকের। ১০ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট—এ এক এমন ফলাফল, যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং একটা অধ্যায়ের মলিন পরিসমাপ্তি।
চেন্নাইয়ের এই হার ছিল কেবল একটি ম্যাচের পরাজয় নয়, ছিল হৃদয়ের গভীরে ঢুকে যাওয়া একটা কান্নার মতো। সেই কান্নায় ঝরে পড়লো মাহি নামের এক নীরব সৈনিকের অনেক না বলা কথা।
চাপা হতাশা নিয়েই মাঠে নামা চেন্নাই ব্যাটিংয়ে ভরসা রাখতে পারেনি। স্যাম কারানের ৮৮ রানের দাপটে চাহালের দুরন্ত হ্যাটট্রিকের কবলে পড়ে তারা গুটিয়ে যায় ১৯০ রানে। সেই লক্ষ্যে ব্যাট হাতে নামে পাঞ্জাব। যেখানে শ্রেয়াস আয়ার আর প্রবসিমরান সিংয়ের ব্যাটে খেলে গেল বিদায়ের রাগিণী।
আরো পড়ুন:
ধোনি ম্যাজিকে পাঁচ ম্যাচ পর চেন্নাইয়ের জয়
ধোনির কাছেই ফিরল চেন্নাই
ম্যাচ শেষে নম্র মুখে ধোনিকে দেখা গেল সিএসকের সিইও কাশী বিশ্বনাথনের পাশে। দুজনের মুখে না ছিল কোন উত্তেজনা, না হতাশার প্রকাশ। যেন বুঝে গেছেন— সময়ের নিয়ম মেনে সবকিছুরই শেষ আছে।
আইপিএলের ইতিহাসে এই প্রথমবার টানা দুই মৌসুম প্লে-অফের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ চেন্নাই। এমনটা কখনও ঘটেনি। এমনটা কখনও কল্পনাও করেনি মাহির ভক্তরা। একসময় যেখানে চেন্নাইয়ের নাম মানেই ছিল ফাইনালের ঘ্রাণ, আজ সেখানে শূন্যতার সুর।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ও বেদনাদায়ক চিত্র উঠে আসে তাদের ঘরের মাঠের পারফরম্যান্সে। ছয় ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে হেরেছে চেন্নাই, যা তাদের ১৭ বছরের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধঃপতন। যে মাঠে একসময় ধোনির নেতৃত্বে জয় ছিল অভ্যাস, আজ সেখানে ভর করেছে দীর্ঘশ্বাসের সুর।
ধোনির বয়স বাড়ছে, গতি হয়তো আগের মতো নেই। চোটের কারণে অধিনায়ক ঋতুরাজ ছিটকে যাওয়ায় আবার কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে দলের ভার। কিন্তু সেই কাঁধে আর আগের মতো শক্তি নেই— আছে কেবল দায়িত্ববোধ আর বিদায়বেলার ঘন ধূসর আভাস।
ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। এই আইপিএলের শেষ চার ম্যাচ কি হবে তার অন্তিম অধ্যায়? না কি আরেকবার ফিরে আসবেন চুপচাপ, তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়? হয়তো মৌসুম শেষে মৃদু হেসে কিছু বলবেন। অথবা বলবেনই না কিছু— যেমনটা ধোনি করে থাকেন।
এই আইপিএল, এই হার, এই নীরবতা— সব মিলিয়ে চেন্নাইয়ের হৃদয়ে লেখা হলো এক বিষণ্ন কবিতা। একটি গৌরবময় অধ্যায়ের শেষ লাইন যেন নিজেই লিখে ফেলেছেন ধোনি, শব্দ ছাড়াই।
ঢাকা/আমিনুল