শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের নেতারা। আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নেতারা এই দাবি জানান।

‘শ্রমিক বাঁচাও, শিল্প বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে জাতীয় প্রেসক্লাব-সংলগ্ন তোপখানা রোডে সমাবেশটি আয়োজন করে শ্রমিক জোট।

বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের হাওলাদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জোটের সাধারণ সম্পাদক বাদল খান, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, শ্রমিকনেতা আবদুল আজিজ, মিজানুর রহমান মিজান, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, বাংলাদেশে কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা লড়াই করে কিছু অধিকার আদায় করতে পারলেও ছোট, মাঝারি শিল্পকারখানা ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কর্মচারীরা ন্যায্য অধিকার আদায়ে অনেক পিছিয়ে আছেন। তাঁদেরও বৃহত্তর শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি আদায় করতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ সময় শ্রমিকদের পক্ষে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাদল খান। সেগুলো হলো শ্রমিকদের ন্যূনতম জাতীয় মজুরি ৩০ হাজার টাকা করা, রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, আইএলও কনভেনশন মেনে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করা, সব বন্ধ কলকারখানা খুলে দেওয়া, নারী শ্রমিকদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি অনুমোদন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, গ্রামীণফোন কর্মচারীদের বকেয়া লভ্যাংশ পরিশোধ করা।

আরও পড়ুননতুন বাংলাদেশ গড়তে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা৩ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত ও নিপীড়ন বন্ধের দাবি সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের

গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত ও শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ ও মিছিল করেছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেপ্তারকৃত শ্রমিকনেতাদের মুক্তির দাবিও জানায়।

মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার আলী, আইনবিষয়ক সম্পাদক বিমল চন্দ্র সাহা, নির্বাহী সদস্য আফজাল হোসেন, নির্বাহী সদস্য ও বোম্বে সুইটস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রতন মিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার চেষ্টার অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দিয়ে গার্মেন্টস উইংয়ের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, রবিনটেক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সীমা আক্তারসহ ৭ জনকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে এবং রিকশা শ্রমিকদের রুটি–রুজির আন্দোলনে সংহতি জানানোর অপরাধে চট্টগ্রামে রিকশা সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি আল কাদেরি জয়, মিরাজ উদ্দিন ও রোকন উদ্দিনকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। অথচ সরকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তারা শ্রমক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রমমান বাস্তবায়ন করবে।

এ সময় নেতারা শ্রম সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হচ্ছে কি না, তা জানতে চান। তাঁরা বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার চর্চায় বাধা দেওয়া বন্ধ না হলে, শ্রমিকের ওপর নিপীড়ন বন্ধ না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পরিচালনা বা বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতি শ্রমজীবী মানুষের কাছে প্রতারণা হিসেবে পরিগণিত হবে।

মে দিবসের ইতিহাস তুলে ধরে নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশের শ্রমজীবী মানুষের ৮৫ শতাংশ শ্রম আইনের সুরক্ষার বাইরে। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শ্রম খাতের দুর্দশার যে ভয়ানক চিত্র ফুটে উঠেছে, তা প্রমাণ করে স্বাধীনতা–পরবতী প্রতিটি সরকার শ্রম শোষণকে তীব্র থেকে তীব্রতর করার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

এ সময় গ্রেপ্তার সব শ্রমিকের মুক্তি, শ্রমিক নিপীড়ন বন্ধ এবং মে দিবসের প্রকৃত চেতনায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ