মাগুরায় দাওয়াত খেতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন মীর শহীদুল ইসলাম ওরফে বাবু মীর (৫৫) নামে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।

শুক্রবার (২ মে)  দুপুরে পৌরসভার ভিটাসাইর গ্রামে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে তাদের সামনে ওই নেতার ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে বাবু মীরকে উদ্ধার করে।

আহত বাবু মীর মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। তিনি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।

আরো পড়ুন:

মধ্যরাতে রাবি রেজিস্ট্রারের বাসায় ককটেল হামলা

পহেলগাম হামলা: প্রতিশোধ নিতে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ জুমার নামাজের পর ভিটাসাইর গ্রামের জামাল মোল্লার বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসেন বাবু মীর। খাবার খেয়ে বের হওয়ার সময় ওই বাড়ির ভেতরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন কয়েকজন যুবক। তারা বাবু মীরের ওপর হামলা চালায়।

দৌঁড়ে বাবু মীর ঘরের মধ্যে ঢুকে রক্ষা পান। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যায়। পুলিশ যখন তাকে গাড়িতে তুলছিল তখন বাবু মীরের ওপর দ্বিতীয় দফা হামলা হয়। পরে মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গিয়ে বাবু মীরকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। 

বাবু মীর জানান, তার ওপর কে বা কারা কী কারণে হামলা করেছে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভিটাসাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ওই গ্রামের বাসিন্দা যুবদলের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ওই দিন হামলা চালান ওই এলাকার তৎকালীন কাউন্সিলর বাবু মীর ও তার লোকজন। যুবদলের ওই নেতাকে কুপিয়ে জখম করার পর তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি। হামলার প্রায় এক বছর পর মারা যান যুবদলের ওই নেতা। ওই হামলার প্রতিশোধ নিতেই যুবদলের ওই নেতার স্বজনেরা বাবু মীরের ওপর এ হামলা চালিয়েছেন বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে সূত্রে জানা যায়, হাতে ও পিঠে কয়েক জায়গায় জখম নিয়ে বাবু মীর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি সেখান থেকে চলে যান। 

মাগুরা সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে জুলাই–আগস্টের একটি মামলায় বাবু মীরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। তার নামে দুইটি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

মাগুরা সদর থানার ওসি মো.

আইয়ুব আলী আজ বলেন, ‍“আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে তিনি আগ্রহ দেখাননি।”

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর আহত আওয় ম ল গ র ওই ন ত য বদল র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ