১৮ বছর সাপের কামড় খাওয়া ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিভেনম
Published: 3rd, May 2025 GMT
দুই দশক ধরে টিম ফ্রিড নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সাপের বিষে আক্রান্ত করেছেন। কখনও সরাসরি সাপের কামড় খেয়ে, আবার কখনও ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন তিনি। এতে ওই ব্যক্তির রক্তে একটি বিস্ময়কর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় টিম ফ্রিডের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি সাপের বিস্তৃত প্রজাতির গুরুতর বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর ফল দিয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। ফ্রিডের ১৮ বছরের এই দুঃসাহসিক যাত্রা ভবিষ্যতে সব ধরনের বিষাক্ত সাপের কামড়ের চিকিৎসায় একটি সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাম্বা, কোবরা, তাইপান, ক্রেইটসহ বিশ্বের ভয়ংকর প্রাণঘাতী কিছু সাপের একাধিক প্রজাতির ২০০টিরও বেশি কামড় সহ্য করেছেন টিম ফ্রিড। এ ছাড়া এসব সাপের বিষের ৭০০টিরও বেশি ইনজেকশন শরীরে পুশ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সেন্টিভ্যাক্সের প্রধান নির্বাহী এবং গবেষণাপত্রের লেখক জ্যাকব গ্ল্যানভিল বলেন, ‘ফ্রিড ১৮ বছর ধরে নিজের শরীরে সাপের বিষ প্রয়োগ করে চলেছেন। বিষধর এসব সাপের বিষ একটি ঘোড়াকেও মেরে ফেলতে পারে। এটি এককথায় বিস্ময়কর! তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্রিড যা করেছেন, তা কেউ করার চেষ্টা করবেন না। সাপের বিষ অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
গবেষণা অনুযায়ী, ফ্রিডের রক্ত থেকে সংগৃহীত দুটি সুরক্ষা অ্যান্টিবডি ও একটি ক্ষুদ্র আণবিক বিষ প্রতিরোধক একত্র করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এই অ্যান্টিভেনম ককটেল। এটি ১৯টি মারাত্মক প্রজাতির মধ্যে ১৩টির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আংশিক সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ঘোড়া বা ভেড়াকে বিষ দিয়ে বর্তমানের প্রচলিত অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়। এতে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রথমে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে বিষাক্ত সাপ নাড়াচাড়ার সময় নিজেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ফ্রিড। সাবেক এই ট্রাক মেকানিক জানান, প্রথমদিকে তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন, যখন পরপর দুটি কোবরার কামড় তাঁকে কোমায় পাঠিয়ে দেয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মরতে চাইনি। আমি একটি আঙুলও হারাতে চাইনি। তবে এখন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি। আমি এতে গর্বিত।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
এক চিলতে রোদ্দুরে...
নাটকের আকাশে উজ্জ্বল এক তারার নাম তানিয়া বৃষ্টি। ২০১৫ সালে অভিনয়ের জগতে পা রেখেছেন। একটানা পথচলার দশ বছর পেরিয়ে আজ তিনি এক পরিপক্ব শিল্পী। এই এক দশকে তাঁর অভিনয়ের পরিধি ছুঁয়েছে বিভিন্ন ধরনের চরিত্র– নরম-কোমল প্রেমিকা, প্রতিবাদী নারী, প্রান্তিক জনপদের নারী, পরিবারের দায়িত্বশীল কন্যা কিংবা ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের গল্প বলা এক মানুষ। প্রতিটি ভূমিকায় তিনি নিজেকে ভেঙে গড়েছেন, প্রতিবার যেন নতুন এক তানিয়া বৃষ্টিকে খুঁজে পাওয়া যায়।
তানিয়া বৃষ্টির অভিনয়ে একটি অনাড়ম্বর সৌন্দর্য আছে, যা সহজে দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাঁর হাসি যেমন মিষ্টি, তেমনি চোখের ভাষায় খেলা করে এক অনুচ্চারিত বেদনা। অভিনয়ের ভেতরে যে আত্মনিবেদন, তা হয়তো খুব বেশি উচ্চকিত নয়, তবে গভীর। কখনও কখনও ক্যামেরার সামান্য এক দৃষ্টি বিনিময়েই বোঝা যায় দৃশ্যের ভেতরে তাঁর অনুরণন।
ঈদ মানেই উৎসব, আর সে উৎসবে তানিয়া বৃষ্টির নাটক যেন দর্শকের জন্য এক পরম প্রাপ্তি। গত ঈদেও তাঁর সরব উপস্থিতি ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ‘তাসের ঘর’, ‘মানুষ’, ‘ভালোবাসা অন্তহীন’, ‘পাষাণী’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’ ও ‘ক্যাফেতে ভালোবাসা’– এই নাটকগুলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রচার হয়েছে ইউটিউব ও টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে। প্রতিটি নাটকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে, ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন। একটি নারীর মনের প্রতিটি স্তর যেন খুলে ধরেছেন তিনি অভিনয়ের পরতে পরতে।
এই জনপ্রিয়তার পথে কেবল ফুল বিছানো ছিল না। কিছু কাজ হয়তো তাঁকেও তৃপ্ত করেনি, কিছু চিত্রনাট্যে হয়তো গভীরতা ছিল না, তবু তিনি বলছেন, এখনকার দিনে গল্প বাছাইয়ে তিনি অনেক বেশি সচেতন। তাঁর কথায়, ‘গল্পের প্রতি আগের চেয়ে বহুগুণ বেশি মনোযোগী আমি। এখন মনে হয়, নিজেকে বারবার ভাঙার মতো চরিত্রই আমাকে টানে। শুধু ক্যামেরায় মুখ দেখানোর জন্য কাজ করতে রাজি নই। এখন যেকোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্পটা ভালো হওয়া জরুরি মনে করি। কারণ দর্শক গল্পটাই আগে খোঁজেন। এরপর চরিত্রে নিজের অভিনয় করার সুযোগটা কেমন আছে তাও ভেবে দেখি।’ এই আত্মঅনুসন্ধানী মনোভাবই তাঁকে করে তুলছে আরও পরিণত, আরও আবেগপ্রবণ শিল্পী।
শুধু কাজের মাধ্যমে নয়, তানিয়া বৃষ্টি প্রায়ই থাকেন আলোচনায় ব্যক্তিগত নানা প্রসঙ্গেও। প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক সবকিছুতে থাকে ভক্তদের কৌতূহল। তবে তিনি নিজেই জানিয়েছেন, আপাতত ব্যক্তিগত জীবনের এসব পরিকল্পনা থেকে দূরে তিনি। বর্তমানে নিজের সব মনোযোগ অভিনয়ে, নিজেকে আরও শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলায়।
বরাবরই নাটকের ছোটপর্দা থেকে সিনেমার বড়পর্দার প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারের শুরুতে সুযোগ পেয়ে যান আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’ ছবিতে। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার প্রস্তাব পেলেও নিয়মিত হননি বড়পর্দায়। ছোটপর্দাকে ঘিরে যাঁর স্বপ্ন। এখন তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
২০১২ সালে ‘ভিট চ্যানেল আই টপ মডেল’ দ্বিতীয় রানারআপের মধ্য দিয়ে শোবিজে আসেন তানিয়া বৃষ্টি। এরপরই রচিত হয় শুধুই তাঁর এগিয়ে চলার গল্প।