ব্যাটারিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে বিতর্ক বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অলিগলি ছাড়িয়ে মূল সড়কে চলাচল শুরু করায় যান্ত্রিক বাহনটি বিশেষত যানবাহন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাফিক নিয়ম না মেনে চলায় তা ক্ষেত্রবিশেষে শহর-নগরের যানজটেও নতুন মাত্রা যোগ করছে। অন্যদিকে ভাড়া ও সময় কম লাগায় অনেকের কাছে এ বাহন সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী। কোনো ধোঁয়া না থাকায় অনেকে একে খুব পরিবেশবান্ধব বলেও মনে করেন।
আটোরিকশা নিয়ে আপত্তি জানাতে গিয়ে এর বিরোধিতাকারীরা বলেন, অটোগুলোর কোনো নির্দিষ্ট বা পরিকল্পিত ডিজাইন নেই। কোনোটা লম্বা, কোনোটা খাটো, কোনোটা বেশি চওড়া আবার কোনোটা কম। কোনোটার চাকা ও রিমের স্পোক চিকন আবার কোনোটার মোটা– এককথায় ‘যেমন খুশি সাজো’র মতো। অধিকন্তু এগুলোর বডি সম্পূর্ণ কাস্ট আয়রন বা লোহার শক্ত অ্যাংগেল দিয়ে তৈরি, যার কারণে বাহনটি দুর্ঘটনায় পড়লে যাত্রী ও চালকের মৃত্যু ত্বরান্বিত হতে পারে। এগুলোর ব্রেক বলতে শুধু সামনের চাকায়, চলেও বেশ ক্ষিপ্রগতিতে (৪০ কিমি/ঘণ্টা), ভরকেন্দ্র কোথায় অবস্থিত সম্ভবত প্রস্তুতকারক নিজেও জানেন না। চালকের না আছে রাস্তায় চলার কোনো সম্যক জ্ঞান, না কোনো প্রশিক্ষণ, লাইসেন্সের তো বালাই নেই। কখনও দুই পা সামনে, কখনও পেছনে আবার কখনও দুই পা একপাশে রেখে বিভিন্ন আয়েশি ভঙ্গিতে চালাতে দেখা যায়। এসব চালকের একটা অংশ আচরণে অত্যন্ত রূঢ়, প্রায়ই রাস্তার উল্টোপথে দম্ভের সঙ্গে চলাচল করে।
ট্রাফিক পুলিশ এদের কাছে নিতান্তই অসহায়। লাইসেন্স না থাকায় মামলা দেওয়ার সুযোগ নেই। আবার চালককে কিছু বললে সবাই একত্র হয়ে পুলিশের ওপরই চড়াও হয়। একটি ছোট সাইজের ও চিকন চাকার অটোরিকশায় প্রতিটি ১২ ভোল্টের কমপক্ষে চারটি ব্যাটারি থাকে এবং বড় ও মোটা চাকাগুলোর ক্ষেত্রে যার সংখ্যা ৬ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। গড়ে প্রতিদিন এগুলো ৯ ঘণ্টা করে চার্জ দিতে হয়। একটি বেসরকারি জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ৫০ লাখ অটোরিকশা চলাচল করে। যেগুলোর ব্যাটারি চার্জের জন্য দৈনিক ব্যবহৃত হয় ১৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার একটি বড় অংশ অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে নেওয়া। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে জনগণকে বহন করতে হচ্ছে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ও লোডশেডিংয়ের চাপ। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ কিনে রাষ্ট্রকে আবার উল্টো দিতে হয় ভর্তুকি। এতে লাভ হয় কার?
পরিবেশবান্ধব বলে যারা বুলি আওরান তাদের জন্য কয়েকটি কথা। কালো বা কোনো ধোঁয়া নেই সত্য; কিন্তু এটিই কি পরিবেশবান্ধব হওয়ার একমাত্র মানদণ্ড? এই বিপুলসংখ্যক ব্যাটারি যখন অকেজো হয়ে যায় সেগুলোর ডিসপোজাল হয় কীভাবে, কেউ কি বিষয়টি ভেবে দেখেছেন? ব্যাটারিতে থাকে ‘লেড’ ও ‘মার্কারি’র মতো পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর কিছু ধাতু। এগুলো কখনোই কোনো কিছুতে দ্রবীভূত হয় না, বরং যুগ যুগ ধরে রয়ে যায় অবিকৃত অবস্থায়। তদুপরি পরিবেশ থেকে খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকে মানবদেহে প্রবেশ করে কিডনি, ফুসফুস, লিভার ইত্যাদিকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রমে বহুলাংশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যারা এর পক্ষাবলম্বন করেন তাদের কথায় যুক্তি নেই তা নয়। যে কারণে শতচেষ্টার পরও প্যাডেল রিকশা উচ্ছেদ করা যায়নি, একই কারণ অটোরিকশার জন্যও প্রযোজ্য। এর সঙ্গে আর্থসামাজিক বিভিন্ন বিষয় জড়িত, বিশেষত বেকারত্ব তো একটি জলজ্যান্ত সমস্যা। তাই অটোরিকশা থাকবে, তবে তা হতে হবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি এবং অবশ্যই প্লাস্টিক বডির। চলবে শুধু নির্দিষ্ট আবাসিক এলাকায়, অন্তত মহাসড়ক ও শহরের মূল সড়কে কস্মিনকালেও নয়। এগুলোকে আনতে হবে রেজিস্ট্রেশনের আওতায়, চালকের প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স হবে বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি গ্রাম এলাকায় বিশেষত কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নকে উৎসাহিত করতে হবে, যা শহরের বহু অটোচালককে গ্রামমুখী করবে। লক্ষণীয়, এখনই বিশেষত বোরো মৌসুমে রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় শহরে রিকশার পরিমাণ কমে যায়। গ্রামে সারাবছরের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা গেলে ঢাকার ওপর মানুষের চাপ অনেকাংশে কমবে। বর্তমান অটোর সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করে রাষ্ট্র নির্ধারিত আধুনিক মানের অটো আমদানিতে উৎসাহ দিতে পারে। তাতে ওই ব্যবসায়ী/আমদানিকারকদের কোনো ওজর-আপত্তি থাকার কথা নয়। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক ও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের আগ্রহ ও সদিচ্ছা থাকলে আপাতত আপদ বলে বিবেচিত একটি যানকে দ্রুত নিরাপদ ও আরামদায়ক যানে পরিণত করা কঠিন কিছু নয়।
মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম জ র জন য পর ব শ চ লক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে ডায়েটে যে পরিবর্তন আনতে পারেন
মুখে লোম হলে কখনও থ্রেডিং করান, আবার কখনও ওয়াক্স করান? কিন্তু এই পদ্ধতিতে লোম দূর করতে হরে মুখে ব্যথা লাগে। কেউ কেউ ব্যথা এড়াতে রেজারের সাহায্য নেন। কিন্তু যা-ই করুন, এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। ত্বকে দেখা দেয় র্যাশ আর চামড়া সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। মূলত হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীদের দুই গালে লোমের ঘনত্ব বাড়ে।
নারীদের মুখে অবাঞ্ছিত লোক কেন হয়
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘‘ শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে, পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে দেখা দিলে, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে মুখে লোমের ঘনত্ব বাড়ে।’’
আরো পড়ুন:
‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি
পোশাক উৎপাদনের ফলে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর
সমস্যা এড়াতে করণীয়
মুখের লোম দূর করতে প্রতিবার তোলার তোলার দরকার নেই। বরং, ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনুন। এমন কিছু খাবার রয়েছে, যেগুলো ডায়েটে যোগ করলে মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর হতে পারে।
পুদিনা পাতার চা
শরীরে টেস্টোস্টেরন ও অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমাতে দিনে দুই বার পুদিনা পাতার চা খান। এই হারবাল টি হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে রোমের ঘনত্ব কমাবে। পাশাপাশি পিসিওএস-এ অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা কমাবে।
সাইট্রাস ফল
মুখের লোম দূর করার জন্য কমলালেবু, পাতিলেবু, মুসাম্বি লেবুর মতো সাইট্রাস ফল খেতে পারেন। লেবুজাতীয় ফল দেহে ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বজায় রাখে এবং টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমায়। সাইট্রাস ফল যেমন ত্বকের সমস্যা কমায়, তেমনই ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে তোলে।
দারুচিনি ভেজানো পানি
রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে পারে দারুচিনি ভেজানো পানি। খাবার খাওয়ার পরে এই পানি পান করলে মেটাবলিজমও বাড়ে। এই পানীয়ও নিয়মিত খেলে কমে যাবে অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যা।
মেথি ভেজানো পানি
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে মেথি ভেজানো পানিও পান করতে পারেন। এই পানীয় ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং অবাঞ্ছিত রোমের সমস্যা দূর করে। রোজ সকালে খালি পেটে এই পানীয়তে চুমুক দিতে পারেন।
হলুদ
দুইগালে হলুদ মেখেও রোম তুলতে পারেন। কিন্তু প্রতিদিন মুখে হলুদ মাখলে ত্বকের উপর হলদেটে দাগ দেখা দিতে পারে। এর চেয়ে প্রতিদিনের ডায়েটে হলুদ রাখুন। কাঁচা হলুদ খেলেও উপকার পাবেন। হলুদ খেলে ব্রণ, দাগছোপ, ত্বকের প্রদাহও কমাতে পারবেন।
ঢাকা/লিপি