‘সবচেয়ে ভয়ংকর’ ২০২৪, এক বছরে নিহত ৪৫ হাজার রুশ সেনা
Published: 6th, May 2025 GMT
ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরটি ছিল রুশ বাহিনীর জন্য সবচেয়ে মারাত্মক। বছরটিতে কমপক্ষে ৪৫ হাজার ২৮৭ রুশ সেনা নিহত হয়। আক্রমণের প্রথম বছরের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেশি। এমনকি দ্বিতীয় বছর ২০২৩ সালের তুলনায়ও বেশি। ওই বছরটিতে ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলবে– এমন একটা পর্যায়ের দিকে বাঁক নিয়েছিল।
গতকাল সোমবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর দিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর জন্য লড়াই হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে রুশ বাহিনী ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে। প্রতি মাসেই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছিল। এ সময় রুশ ও তাদের সমর্থিত বাহিনীকে প্রত্যেক কিলোমিটার ভূমি জয় করতে ব্যাপক লড়াই করতে হয়েছে। এতে গড়ে প্রতি কিলোমিটারে রুশ বাহিনীর ২৭ জন নিহত হয়েছে।
স্বাধীন গণমাধ্যম মিডিয়াজোনা, স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দলের সহযোগিতা, বিবিসি রাশিয়ান সার্ভিস, রুশ কবরস্থান, সামরিক স্মারক ও মৃত্যুবার্ষিকী থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৭৪৫ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলেও ধারণা করা হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ২২৩ থেকে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২১১ জন।
২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ছিল রুশ বাহিনীর জন্য বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। ওই দিন চারটি ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার এইচআইএমএআরএস ক্ষেপণাস্ত্র অধিকৃত দোনেৎস্কের ভলনোভাখা শহরের কাছে একটি প্রশিক্ষণস্থলে আঘাত হানে। পদক বিতরণকে কেন্দ্র করে তারা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ইউক্রেনের হামলায় কমান্ডার কর্নেল মুসায়েভসহ ৬৫ জন সেনা নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েক ডজন।
এদিকে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, ইউরোপের ‘কিছু লোক’ রেড স্কয়ারে আরও ভালো আসনের জন্য তাঁর দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদের পথ আটকে দিয়েছেন। গত রোববার চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগে দেশটির প্রেসিডেন্ট পিটার পাভেলের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপের কিছু ব্যক্তি এ প্রক্রিয়া (ইইউর সদস্য) বাধাগ্রস্ত করছেন। তাদের নিজ দেশের স্বার্থের জন্য নয়, বরং রেড স্কয়ারের মঞ্চে আরও ভালো আসন পাওয়ার জন্য তারা এটা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার জন্য ইউরোপীয় মূল্যবোধকে সত্যিকার অর্থে প্রাধান্য দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’ রাশিয়ার রাজধানীতে আসন্ন কুচকাওয়াজের বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, একতরফা যুদ্ধবিরতি নিয়ে মস্কোর প্রতিশ্রুতিতে তাঁর ‘বিশ্বাস নেই’।
ক্রেমলিনের সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার এএফপি জানিয়েছে, চলতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখ রাশিয়া সফর করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ সময় তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনীর ঐতিহাসিক বিজয় উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বেইজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে শি এ সফর করছেন।
১৯৪৫ সালের ৯ মে ইউরোপের ‘বিজয় দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর এক দিন আগে জার্মান বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। তবে এদিন ইউরোপে যুদ্ধের অবসান হলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্রন্টে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র জন য ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ
ইরান বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ দেখা দিয়েছে।
ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনার প্রেক্ষাপটে তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দের তালিকা থেকে সরে গেছেন বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এমনটাই জানিয়েছেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ৪৩ বছর বয়সী তুলসীকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে মনোনীত করেন ট্রাম্প। আলোচনা-সমালোচিত এই মনোনয়ন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন পাওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তুলসী দায়িত্ব নেন। আগে গোয়েন্দা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুই দশকের বেশি সময় মার্কিন বাহিনীতে সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তুলসীর।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান হলেন তুলসী গ্যাবার্ড১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতে তুলসীকে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
তুলসীর ঘনিষ্ঠরা জোর দিয়ে বলছেন, ইরান ইস্যুতে হোয়াইট হাউসে কিছুটা টানাপোড়েন আছে। তবে জনপরিসরে যে প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তার অনেকটাই অতিরঞ্জিত।
২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ৪৩ বছর বয়সী তুলসীকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে মনোনীত করেন ট্রাম্প। আলোচিত-সমালোচিত এই মনোনয়ন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন পাওয়ার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তুলসী দায়িত্ব নেন। আগে গোয়েন্দা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও দুই দশকের বেশি সময় মার্কিন বাহিনীতে সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তুলসীর।অবশ্য এনবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলা কেউই এটা মনে করেন না যে ট্রাম্পের ইরান নীতির কারণে তুলসী প্রশাসন ছাড়বেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়েও পড়ে।
রাজনৈতিকভাবে তুলসীর নাজুক অবস্থানটি চলতি সপ্তাহে প্রকাশ্যে আসে, যখন ট্রাম্প গত মার্চ মাসে কংগ্রেসে দেওয়া তাঁর (তুলসী) সাক্ষ্য নিয়ে তাঁকে একপ্রকার আক্রমণ করেন।
কংগ্রেসে তুলসী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, যা ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
আরও পড়ুনতুলসী গ্যাবার্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান, ট্রাম্পের আরেক বিজয়১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী উড়োজাহাজ এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘সে (তুলসী) কী বলেছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি মনে করি, তারা (ইরান) পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর খুব কাছাকাছি রয়েছে।’
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি বলেছেন, গত মার্চে কংগ্রেসে তুলসীর সাক্ষ্যের পর থেকে এ পর্যন্ত ইরান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
কিন্তু একজন প্রেসিডেন্ট যদি প্রকাশ্যে তাঁর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের বক্তব্য অস্বীকার করেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই ইস্যুতে তুলসী কি এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়েছেন?
এনবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলা কেউই অবশ্য এটা মনে করেন না যে ট্রাম্পের ইরান নীতির কারণে তুলসী প্রশাসন ছাড়বেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়েও পড়ে।তা ছাড়া এই বিরোধের বিষয়টি ট্রাম্পের ‘মেগা’ (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) জোটের মধ্যকার একটি বিভাজনও প্রকাশ করে। মেগার কিছু সমর্থক ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যেকোনো সামরিক পদক্ষেপে পাশে থাকার পক্ষপাতী। আর অন্যরা বলছেন, এ ধরনের হস্তক্ষেপ ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতির পরিপন্থী হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ আলোচনা থেকে তুলসীকে কার্যত দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
ইসরায়েল-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা নিয়ে আলোচনার জন্য ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিডে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকে যোগ দেননি তুলসী। এতে করে প্রশাসনে তাঁর অবস্থান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে ট্রাম্প মনোনীত তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক১৫ নভেম্বর ২০২৪তবে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেছেন, ক্যাম্প ডেভিডের বৈঠকটিতে তুলসী উপস্থিত থাকতে পারেননি। কারণ, ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য হিসেবে তখন তাঁকে পূর্বনির্ধারিত প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হচ্ছিল।
গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, তুলসী একজন সাবেক সেনাসদস্য, একজন দেশপ্রেমিক, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক। ২০২৪ সালে ট্রাম্প যে জোট গড়েছেন, তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিনি। তুলসী যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা দলের অবিচ্ছেদ্য সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি হুমকি থেকে নিরাপদ রাখতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাঁরা কৃতজ্ঞ।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক কে এই তুলসী গ্যাবার্ড১৮ মার্চ ২০২৫তবে তুলসীর সাম্প্রতিক ইরান-সংক্রান্ত মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন কিছু রিপাবলিকান। তাঁদেরই একজন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর জন কেনেডি। গত সপ্তাহে তিনি তুলসীকে কটাক্ষ করে মন্তব্য দেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা বলেন, তুলসী অনেক দিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুনট্রাম্পের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসীকে নিয়ে ১০০ সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও কর্মকর্তার উদ্বেগ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪