মেলবোর্নে থাকেন মোহাম্মদ শামীম। সেখান থেকে গাড়ি হাঁকিয়ে যাচ্ছেন প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরের ব্রিসবেনে। পথে যেতে যেতে ক্যানবেরা আর সিডনির ৪০টি সাবওয়ে আউটলেট পরিদর্শন করছেন। সে কাজ করতে করতেই সিডনিতে যাত্রাবিরতি নিয়েছেন। ১৫ মে সকালে দক্ষিণ সিডনির ক্যাম্পবেল টাউনের একটি ক্যাফেতে তাঁর মুখোমুখি হলাম। পরনে সাদামাটা পোশাক। চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। আলাপচারিতায় ফুটে উঠল বিনয় আর সংযম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ছিলেন শামীম। স্নাতক শেষ করার পর থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় আসার চেষ্টা করছিলেন। ২০০৭ সালে সেই সুযোগ পেলেন। তত দিনে স্নাতকোত্তর শেষ। অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটিতে আবার স্নাতকোত্তরেই ভর্তি হলেন, তবে বিভাগ আলাদা—অ্যাকাউন্টিং ও ফাইন্যান্স। পড়াশোনার পাশাপাশি মেলবোর্নেই সাবওয়ের একটি দোকানে খণ্ডকালীন কাজ নেন।

‘সাবওয়ে’ বহুজাতিক ফাস্টফুড চেইন রেস্তোরাঁ। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এটি একটি সাধারণ স্যান্ডউইচের দোকান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। ‘ইট ফ্রেশ, ফিল গুড’ স্লোগান নিয়ে সাবওয়ে এখন শতাধিক দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। তবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অঞ্চলে এটি এখন সবচেয়ে বড় কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ ব্র্যান্ড। যা পরিচালিত হয় ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মাধ্যমে।

এমনই একজন ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাধীন আউটলেটে ‘স্যান্ডউইচ আর্টিস্ট’ হিসেবে গ্রাহকের অর্ডার নেওয়া, টেবিল মোছা, মেঝে পরিষ্কারসহ নানা কাজ করতেন শামীম। কয়েক মাস যেতেই মালিকের আস্থা অর্জন করেন তিনি। বললেন, ‘দোকানের মালিক একদিন আমাকে পুরো দায়িত্ব দিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন। সব দিক সামাল দিতে গিয়ে মনে হয়েছিল, কাজটা তো আমি পারি।’

সে বিশ্বাস থেকেই সাবওয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। যে মালিকের অধীন কাজ নিয়েছিলেন, তাঁর বেশ কয়েকটি সাবওয়ে দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল। দিনে দিনে স্টোর ম্যানেজার হলেন শামীম, তারপর এরিয়া ম্যানেজার। তাঁর কাঁধে তখন বেশ কয়েকটি দোকান পরিচালনার দায়িত্ব।

কর্মীদের সঙ্গে মোহাম্মদ শামীম.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ