দিনে খাবারে চেতনানাশক রাতে স্বর্ণালংকার লুট
Published: 20th, May 2025 GMT
দিনে কৌশলে খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হয় চেতনানাশক ও ঘুমের ওষুধ। এ খাবার খেয়ে রাতে অঘোরে ঘুমান পরিবারের সবাই। সকালে জেগে দেখেন, ঘরের সব তছনছ করা। স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী নেই। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এভাবে একের পর এক ‘ঘুমপাড়ানি’ লুট চক্রের হানায় কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও পুলিশের দাবি, অপরাধীরা শনাক্ত হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চক্রটি এক মাসে ৪০ থেকে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ কয়েকটি পরিবারের অন্তত দুই কোটি টাকার মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল রাতে চক্রটি প্রথম হানা দেয় উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের সুবোধ কুমার বিশ্বাস ও হাসিবুল হোসেন অপুর বাড়িতে। তারা পরিবারের সদস্যদের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করিয়ে সাড়ে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা লুট করে চলে যায়। কীভাবে খাবারে চেতনানাশক আসছে, বলতে পারেননি কেউ। কয়েকজনের ধারণা, কোনো প্রতিবেশী এগুলো খাবারে মেশাতে পারেন।
গৃহবধূ দেবী দাসের ভাষ্য, সকালে তিনি ভাত ও তরকারি রান্না করলে সবাই সে খাবার খান। এরপর প্রথমে তাঁর মেয়ে বমি করেন। শ্বশুর-শাশুড়িরও একই অবস্থা হয়। দিনভর তাদের অসুস্থতা ও ঘুম ঘুম ভাব ছিল। ঘটনাটি তাঁর স্বামী খুলনার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে কর্মরত স্বপন বিশ্বাসকে জানালে তিনি বাড়িতে আসেন। সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙলে দেখেন, কাপড় দিয়ে তাদের মশারি ঘেরা। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখেন, আলমারিসহ দুটি ঘরের সব এলোমেলো পড়ে আছে। কক্ষের বাইরে থেকে সিটকিনি লাগানো। তিনি মোবাইল ফোনে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। দেবী দাস বলেন, তারা ঘটনার পর দেখেন, বিয়েসহ বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা অন্তত ১০ ভরির বেশি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গেটের তালা ও গ্রিল ভেঙে চক্রটি তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে।
একই গ্রামের গৃহবধূ মিম আক্তারের স্বামী হাসিবুল দুপুরে তাঁকে জানান, তাঁর মাথা ঘুরছে, ঘুম আসছে ও শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি চরিয়ারবিল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। একটু সুস্থ হলে রাত ১১টার দিকে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন অন্যরা। এরপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। গৃহবধূর ভাষ্য, রাত ১টা ৫৫ মিনিটে দরজা ভেঙে অস্ত্রসহ চার ব্যক্তি প্রবেশ করে চুপচাপ বসে থাকতে বলে। এরপর আলমারি থেকে আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। চুপ না থাকলে তারা হত্যার হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। গাড়াগঞ্জ এলাকার জিহাদ হোসেন জানান, গত ২২ এপ্রিল রাতে একই এলাকায় তাঁর ফুপুর বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট হয়েছে। ২৩ এপ্রিল রাতে চক্রটি আবার হানা দেয় চরগোলকনগর গ্রামের প্রবাসী টিপু সুলতানের বাড়িতে। সেখান থেকে চক্রটি আট ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকের কিছু কাগজ নিয়ে পালিয়ে যায়। শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ধরা পড়েনি চক্রের কেউ।
গত শুক্রবার রাতে দুধসর গ্রামের আব্দুল গফুর মোল্যাসহ তিনজনের বাড়িতে হানা দেয় চক্রটি। রাতভর তারা আসবাব তছনছ করে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। গফুর মোল্যার পুত্রবধূ নাহিদা আক্তার বলেন, শুক্রবার রাতে তিনি ও তাঁর স্বামী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কোনো এক সময় চক্রটি বাড়ির গেটের তালা ভেঙে প্রবেশ করে তাদের কক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। চারটি কক্ষের আলমারিসহ আসবাব তছনছ করে ১০ ভরির বেশি স্বর্ণালংকারসহ নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সকালে শাশুড়ি ঘুম থেকে জাগালে তারা বিষয়টি টের পান।
রাতে এভাবে একের পর এক বিভিন্ন বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটের বিষয়ে ঝিনাইদহ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ইশারত হোসেন খোকন বলেন, তারা শৈলকুপার এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার কথা শুনেছেন। তাঁর পরামর্শ, ভুক্তভোগীদের প্রতিবেশী কারও প্রতি যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে পুলিশকে জানিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে। এতে দ্রুত চক্রটি আইনের আওতায় আসবে।
পুলিশ চক্রটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান বলেন, বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। দ্রুত তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টপ ট স বর ণ ল ক র ও শ লক প পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
হায়দরাবাদের তাণ্ডবে লক্ষ্ণৌর স্বপ্নভঙ্গ
ঘরের মাঠে জয়ই ছিল শেষ ভরসা। কিন্তু হায়দরাবাদের ব্যাটিং তাণ্ডবে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের প্লে-অফ স্বপ্ন। ২০৫ রানের বিশাল স্কোর করেও শেষরক্ষা হলো না তাদের, ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।
লক্ষ্ণৌর ইনিংসটি ছিল যেন এক অদ্ভুত সমীকরণ। ৯ ব্যাটারের মধ্যে ছয় জনই পার হতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘর। অথচ স্কোরবোর্ডে উঠে গেল ২০৫ রান! মূল কারিগর ছিলেন মিচেল মার্শ ও এইডেন মার্করাম। দুজনের ব্যাটে জমে ওঠে ১১৫ রানের বিধ্বংসী ওপেনিং জুটি। মার্শ ৩৯ বলে ৬৫ এবং মার্করাম ৩৮ বলে করেন ৬১ রান।
এরপর নিকোলাস পুরান ঝড়ো ৪৫ রানের ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন দুইশর দোরগোড়ায়। ইনিংসের শেষ বলে আকাশ দীপের ছক্কায় পূর্ণ হয় ২০৫ রানের চূড়া।
আরো পড়ুন:
মরুর বুকে বিজয়ানন্দ
এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে ‘গুজব’ বলল বিসিসিআই
জবাবে হায়দরাবাদ ইনিংসের শুরুতেই হারায় ওপেনার অথর্ব তাইদেকে। তবে এরপর যা হলো, তা যেন এক পেশাদার চিত্রনাট্য। অভিষেক শর্মা ও ইশান কিষাণ গড়েন ৮২ রানের দুর্দান্ত জুটি। মাত্র ২০ বলে ৫৯ রান করে ম্যাচের গতি পাল্টে দেন অভিষেক। বিশেষ করে রবি বিষ্ণইয়ের এক ওভারে টানা চার ছক্কায় আসে তার বিধ্বংসী ফিফটি।
ইশান কিষাণ আউট হলে হাল ধরেন দুই বিদেশি হেনরিখ ক্লাসেন ও কামিন্দু মেন্ডিস। চাপের মুহূর্তে লঙ্কান ব্যাটার মেন্ডিস ১৪তম ওভারের প্রথম তিন বলে মেরে দেন তিনটি চার। সেখান থেকেই হায়দরাবাদের রানের চাকা ঘুরতে শুরু করে দুরন্ত গতিতে।
জয়ের মাত্র তিন রান দূরে ক্লাসেন ৪৭ রানে আউট হলেও কাজ শেষ করে দেন নিতিশ রেড্ডি। ১৮.২ ওভারে জয়সূচক রান তুলে ২০৬ রানে পৌঁছে যায় হায়দরাবাদ।
এই জয়ে ১২ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম স্থানে উঠে এলো হায়দরাবাদ। আর ১০ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে থেকেই বিদায় নিতে হলো লক্ষ্ণৌকে। প্লে-অফের শেষ টিকিট এখন কেবল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে কার হাতে উঠবে—সে দিকেই তাকিয়ে ক্রিকেটভক্তরা।
ঢাকা/আমিনুল