দিনে কৌশলে খাবারে মিশিয়ে দেওয়া হয় চেতনানাশক ও ঘুমের ওষুধ। এ খাবার খেয়ে রাতে অঘোরে ঘুমান পরিবারের সবাই। সকালে জেগে দেখেন, ঘরের সব তছনছ করা। স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী নেই। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এভাবে একের পর এক ‘ঘুমপাড়ানি’ লুট চক্রের হানায় কয়েকটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। চক্রের সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও পুলিশের দাবি, অপরাধীরা শনাক্ত হয়েছে। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, চক্রটি এক মাসে ৪০ থেকে ৫০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ কয়েকটি পরিবারের অন্তত দুই কোটি টাকার মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল রাতে চক্রটি প্রথম হানা দেয় উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের সুবোধ কুমার বিশ্বাস ও হাসিবুল হোসেন অপুর বাড়িতে। তারা পরিবারের সদস্যদের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করিয়ে সাড়ে ১২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা লুট করে চলে যায়। কীভাবে খাবারে চেতনানাশক আসছে, বলতে পারেননি কেউ। কয়েকজনের ধারণা, কোনো প্রতিবেশী এগুলো খাবারে মেশাতে পারেন।
গৃহবধূ দেবী দাসের ভাষ্য, সকালে তিনি ভাত ও তরকারি রান্না করলে সবাই সে খাবার খান। এরপর প্রথমে তাঁর মেয়ে বমি করেন। শ্বশুর-শাশুড়িরও একই অবস্থা হয়। দিনভর তাদের অসুস্থতা ও ঘুম ঘুম ভাব ছিল। ঘটনাটি তাঁর স্বামী খুলনার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে কর্মরত স্বপন বিশ্বাসকে জানালে তিনি বাড়িতে আসেন। সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। দেড়টার দিকে ঘুম ভাঙলে দেখেন, কাপড় দিয়ে তাদের মশারি ঘেরা। সেখান থেকে বেরিয়ে দেখেন, আলমারিসহ দুটি ঘরের সব এলোমেলো পড়ে আছে। কক্ষের বাইরে থেকে সিটকিনি লাগানো। তিনি মোবাইল ফোনে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। প্রতিবেশীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। দেবী দাস বলেন, তারা ঘটনার পর দেখেন, বিয়েসহ বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা অন্তত ১০ ভরির বেশি স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গেটের তালা ও গ্রিল ভেঙে চক্রটি তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে।
একই গ্রামের গৃহবধূ মিম আক্তারের স্বামী হাসিবুল দুপুরে তাঁকে জানান, তাঁর মাথা ঘুরছে, ঘুম আসছে ও শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি চরিয়ারবিল বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। একটু সুস্থ হলে রাত ১১টার দিকে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন অন্যরা। এরপর গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। গৃহবধূর ভাষ্য, রাত ১টা ৫৫ মিনিটে দরজা ভেঙে অস্ত্রসহ চার ব্যক্তি প্রবেশ করে চুপচাপ বসে থাকতে বলে। এরপর আলমারি থেকে আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যায়। চুপ না থাকলে তারা হত্যার হুমকি দেয়।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। গাড়াগঞ্জ এলাকার জিহাদ হোসেন জানান, গত ২২ এপ্রিল রাতে একই এলাকায় তাঁর ফুপুর বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট হয়েছে। ২৩ এপ্রিল রাতে চক্রটি আবার হানা দেয় চরগোলকনগর গ্রামের প্রবাসী টিপু সুলতানের বাড়িতে। সেখান থেকে চক্রটি আট ভরি স্বর্ণালংকার ও ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংকের কিছু কাগজ নিয়ে পালিয়ে যায়। শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও ধরা পড়েনি চক্রের কেউ।
গত শুক্রবার রাতে দুধসর গ্রামের আব্দুল গফুর মোল্যাসহ তিনজনের বাড়িতে হানা দেয় চক্রটি। রাতভর তারা আসবাব তছনছ করে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায়। গফুর মোল্যার পুত্রবধূ নাহিদা আক্তার বলেন, শুক্রবার রাতে তিনি ও তাঁর স্বামী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কোনো এক সময় চক্রটি বাড়ির গেটের তালা ভেঙে প্রবেশ করে তাদের কক্ষের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেয়। চারটি কক্ষের আলমারিসহ আসবাব তছনছ করে ১০ ভরির বেশি স্বর্ণালংকারসহ নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সকালে শাশুড়ি ঘুম থেকে জাগালে তারা বিষয়টি টের পান।
রাতে এভাবে একের পর এক বিভিন্ন বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী লুটের বিষয়ে ঝিনাইদহ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ইশারত হোসেন খোকন বলেন, তারা শৈলকুপার এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার কথা শুনেছেন। তাঁর পরামর্শ, ভুক্তভোগীদের প্রতিবেশী কারও প্রতি যদি সন্দেহ থাকে, তাহলে পুলিশকে জানিয়ে তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে। এতে দ্রুত চক্রটি আইনের আওতায় আসবে।
পুলিশ চক্রটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান বলেন, বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। দ্রুত তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট স বর ণ ল ক র ও শ লক প পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের খোঁজে ৪৮ বছর পর চুনারুঘাটে

৬ বা ৭ বছর বয়সে হারিয়ে যান হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে। এরপর ৪২ বছর কেটে গেছে। হারিয়ে যাওয়া শিশুটির বয়স এখন ৪৮ বছর। সুনামগঞ্জে বেড়ে ওঠা এই ব্যক্তি জানেন না, তাঁর আসল নাম-পরিচয়। শুধু এটুকু মনে আছে, তাঁর জন্মভূমি চুনারুঘাট।
জাহাঙ্গীর নামের এই ব্যক্তি এখন 
চুনারুঘাটে খুঁজছেন তাঁর হারিয়ে যাওয়া শিকড়। বৃহস্পতিবার তিনি সুনামগঞ্জ থেকে চুনারুঘাট এসে ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম শ্যামলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর বাবা-মাকে খুঁজে পেতে সহায়তা চান।
জাহাঙ্গীর জানান, ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাতগাঁও গ্রামের এক ব্যক্তির হাতে পড়েন। তাঁর নাম জারু মিয়া। তিনিই তাঁকে ‘ছেলে’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে লালন-পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে (জাহাঙ্গীর) বিয়ে দেন। বর্তমানে তাঁর চার সন্তান। তবে জারু মিয়া মৃত্যুর আগে তাঁর দুই সন্তানকে সম্পদ দিয়ে গেলেও তাঁকে (জাহাঙ্গীর) কিছুই দেননি। এতে তাঁর মনে সন্দেহ দেখা দেয়, জারু মিয়া হয়তো তাঁর প্রকৃত বাবা ছিলেন না। এরপর এলাকার মানুষের মুখে শুনে তিনি জানতে পারেন, তাঁর শৈশবকাল কেটেছে চুনারুঘাটে।
বর্তমানে জাহাঙ্গীর অবস্থান করছেন  মিরাশী ইউনিয়নের চামলতলী গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে। তিনি চুনারুঘাটবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, যদি ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে কোনো পরিবার তাদের ৬/৭ বছর বয়সী ছেলে সন্তান হারিয়ে থাকে, তারা যেন যোগাযোগ করেন।
ট্রাভেলস ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম শ্যামল বলেন,  তিনি চেষ্টা করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাতে, যাতে জাহাঙ্গীরের পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪০ মিনিটেই তুর্কমেনিস্তানের জালে বাংলাদেশের সাত গোল
  • ঘুম থেকে উঠে শিশুটি দেখল, ঘরের মেঝেতে মা আর সামনের রাস্তায় পড়ে আছে বাবার লাশ
  • জুলাই বিপ্লব নিয়ে ‌কটূক্তি করা পুলিশ সদস্য বরখাস্ত  
  • বিয়েটা ভেঙে দিলেই কী আমি রাজার আসন পেয়ে যাবো: অঞ্জনা
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার
  • গ্রামের বাড়ির পুকুর জলে!
  • চুয়াডাঙ্গায় মালবাহী ট্রেনের লাইনচ্যুত গার্ড রেক উদ্ধার, ট্রেন চলাচল শুরু
  • বাংলাদেশ অভিজ্ঞ দল, কামব্যাক করতেই পারে: জয়সুরিয়া
  • এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কিসের, কী নির্বাচন হবে: জামায়াত আমির
  • পরিবারের খোঁজে ৪৮ বছর পর চুনারুঘাটে