দেড় যুগ পর বিএনপির মঞ্চে খুলনার সাবেক এমপি লবী
Published: 29th, May 2025 GMT
দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পর আবারও সক্রিয় হয়েছেন খুলনা-২ আসনের (খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা) সাবেক সংসদ সদস্য, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বিসিবি’র সাবেক সভাপতি আলী আসগার লবী। প্রায় দেড় যুগ পর আজ বৃহস্পতিবার আবার তাকে দেখা গেছে মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভার মঞ্চে। আগামী নির্বাচনে খুলনার যে কোনো একটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ধণাঢ্য এই ব্যবসায়ী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে মহানগর ও জেলা বিএনপি। এই সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন পর রাজনীতির মঞ্চে দেখা যাওয়ায় তাকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
এ ব্যাপারে আলী আসগার লবী সমকালকে বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলায় জেলা বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভা রয়েছে। ওই সভায় যোগদান করবো।
সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও তো আমি কিছু জানি না। দলের কর্মী, দল যদি বলে; তাহলে করবো। না বললে করবো না। কোনো সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত নয়। দল মনোনয়ন দিলে তো নিশ্চয়ই নির্বাচন করবো, যেখান থেকে দেবে সেখান থেকেই করবো।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, এর আগে গতবছর ২৪ নভেম্বর খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের খুলনা পর্বের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা পর্বের এই খেলা আয়োজনে সাবেক সাংসদ লবীর আর্থিক সহযোগিতা ছিল। টুর্নামেন্ট ঘিরে স্টেডিয়াম এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড টানানো হয়। এছাড়া তিনি নিজে ওই দিন ঢাকা থেকে এসে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে যান। ওই দিন থেকে তাকে নিয়ে আবারও খুলনায় আলোচনা শুরু হয়।
সাবেক সাংসদ লবীর অনুসারীরা জানান, তিনি আবারও খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন। দল থেকে যদি আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী। এজন্য তিনি তৎপরতা চালাচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের দিকে আলী আসগার লবী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। ওই বছর ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার ছেড়ে দেওয়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে আলী আসগার লবী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি খুলনা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে তাকে আহ্বায়ক করে দেন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আলী আসগার লবী খুলনায় ছিলেন দোর্দণ্ড প্রভাবশালী। তখন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরগরম থাকতো নগরীর বড় মির্জাপুর এলাকায় তার বাড়িটি। সরকারি কর্মকর্তা, দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিড় লেগে থাকতো সেখানে। ওই সময় তিনি বিসিবির সভাপতিও হন।
কিন্তু দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে ২০০৭ সালে ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে প্রভাবশালী নেতা লবীর। ওই বছর ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে তাকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। তার সবগুলো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্থাবর-অস্থাবর অনেক সম্পদ এবং কয়েকটি গাড়ি জব্দ করে তৎকালীন সরকার। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে একটি মামলায় আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে তিনি জামিনে বের হন। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় তিনি দেশের বাইরে এবং ঢাকায় ছিলেন। আর মাঝেমাঝে দু-একবার খুলনায় এলেও দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেননি। নগরীর বড় মির্জাপুর এলাকায় তার বাড়ি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
হবিগঞ্জে কনসার্টে বিশৃঙ্খলার পর নারীদের হেনস্তা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ
হবিগঞ্জ শহরের জালাল স্টেডিয়ামে গত শনিবার রাতে আয়োজিত এক কনসার্টে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। সে সময় ভিড়ের মধ্যে নারী দর্শকদের সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে পুলিশ বলছে, নারীদের হেনস্তার বিষয়টি সত্য নয়। আয়োজকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের একটি পক্ষ অপপ্রচারে নেমেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শহরের জালাল স্টেডিয়ামে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত শনিবার দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই রজতজয়ন্তীর কনসার্টে সন্ধ্যার পর থেকেই বিপুল দর্শকের ভিড় জমে। রাত আটটার দিকে মঞ্চে প্রথমে কণ্ঠশিল্পী আশিক, বাঁধন ও ইপা গান পরিবেশন করেন। এরপর জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লালন’ চারটি গান পরিবেশন করে। এর কিছুক্ষণ পরেই সাউন্ড সিস্টেমের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সাউন্ড ঠিক করার আগেই উৎসুক দর্শকদের মধ্যে থেকে এক তরুণ একটি বোতল ছুড়ে মারেন মঞ্চের দিকে। সেই বোতল মঞ্চে না গিয়ে অপর এক দর্শকের মাথায় লাগে। এ ঘটনায় একপর্যায়ে দর্শকসারিতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ার ভাঙচুর, বোতল নিক্ষেপ, ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান অনেকে। এই সুযোগে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী কিছু নারীর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ, গলার চেইন ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃন্দাবন সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা গান শুনতে গিয়েছিলাম, ভয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছি।’
কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ‘আমরা পরিবারসহ অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ভয়ানক অবস্থা হয়। ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন আমার গলার চেইন ছিঁড়ে নেয়। আমি চিৎকার করেও কাউকে পাইনি।’
মেয়েদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ছিল না অভিযোগ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, যখন দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়, তখন সবাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেন। সে সময় অনেক মেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
চেয়ারের ধাক্কা ও ভিড়ে পিষ্ট হওয়া অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনার পর হবিগঞ্জে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বেশির ভাগ মানুষ বলছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আনন্দের জায়গা, ভয়ের নয়। তাঁরা ভবিষ্যতে বড় কোনো আয়োজনে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা, নারী দর্শকদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও সিসিটিভি মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন।
ফেসবুকে শরীফ আহমেদ নামের এক ব্যক্তি লিখেছেন, এ দায় এড়ানো যায় না। যত বড় আয়োজনই হোক, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে অনুষ্ঠান করে একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন আয়োজকেরা।
সুকোমল রায় নামে আরেকজন ফেসবুকে লিখেন, জালাল স্টেডিয়ামের কনসার্টে নারীদের প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের এই ঘটনা সামাজিকভাবে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা উচিত।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শাহ রাজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দর্শকদের মাঝখান থেকে একজন বোতল ছুড়ে মারেন মঞ্চের দিকে। সেই বোতল এক দর্শকের ওপর পড়লে এ বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। কোনো নারী হেনস্তার শিকার হননি। একটি পক্ষ অনুষ্ঠানের সফলতা নষ্ট করতে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বাস্তবতার সঙ্গে যার মিল নেই বলে তিনি দাবি করেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহবুদ্দীন শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, আয়োজকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের একটি পক্ষ এ অপপ্রচার করছে। নারীদের হেনস্তার বিষয়টি সত্য নয়। পুরো এলাকা পুলিশ ঘিরে ছিল। মাঠ থেকে তাড়াহুড়া করে বের হতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা ভুয়া, কোনো সত্যতা নেই।