স্বজনের লাশ দেখে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত
Published: 29th, May 2025 GMT
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভায় স্বজনের লাশ দেখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় (ইজিবাইক) বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভার পাকুড়িতলা এলাকায় দেবীগঞ্জ-বোদা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী-সরকার পাড়া এলাকার তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী শ্যামলী রানী (৩০), দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজারহাট-কালীগঞ্জ এলাকার হরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে দেবশ্রী রানী (৭) এবং পামুলী ইউনিয়নের জোতভুবন পাড়া এলাকার অরুণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ভরসা রানী (৩৫)।
আহত ব্যক্তিরা হলেন দেবীগঞ্জের জোতভুবন পাড়া এলাকার অজয় কুমার রায় (৫৫), পার্বতী রানী (৩৭), খোকা বাবু (৫০), বিমলা (৫০), দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজার হাট কালীগঞ্জ এলাকার সৌরভ (১১) এবং ইজিবাইকচালক প্রভাত কুমার (৪০)। তাঁদের মধ্যে অজয় কুমার রায় ও পার্বতী রানীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। হতাহতরা একে অপরের আত্মীয়স্বজন বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে অজয় রায় তাঁর স্বজনদের নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ এলাকায় মারা যাওয়া এক স্বজনের লাশ দেখে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় তাঁরা দেবীগঞ্জ পৌরসভার বোদা-দেবীগঞ্জ সড়কের পাকুড়িতলা এলাকায় পৌঁছালে বোদা থেকে দেবীগঞ্জগামী একটি ট্রাক ইজিবাইকটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইকটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং যাত্রীরা ছিটকে সড়কের পাশে পড়ে গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে যান।
পরে স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শ্যামলী রানী, দেবশ্রী রানী, ভরসা রানী, পার্বতী রানী ও অজয় কুমার রায়কে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরে রংপুরে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার কিছুক্ষণ পরেই শ্যামলী রানী মারা যান। রংপুরে নেওয়ার পথে শিশু দেবশ্রী রানী ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভরসা রানী মারা যান।
দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার সরকার ট্রাকের ধাক্কায় ইজিবাইকের তিনজন যাত্রী নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দেবীগঞ্জে মারা যাওয়া শ্যামলী রানীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরে মারা যাওয়া অপর দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র এল ক র স বজন
এছাড়াও পড়ুন:
আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।
আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।