পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভায় স্বজনের লাশ দেখে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় (ইজিবাইক) বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার দেবীগঞ্জ পৌরসভার পাকুড়িতলা এলাকায় দেবীগঞ্জ-বোদা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী-সরকার পাড়া এলাকার তাপস কুমার রায়ের স্ত্রী শ্যামলী রানী (৩০), দেবীগঞ্জ উপজেলার দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজারহাট-কালীগঞ্জ এলাকার হরেন্দ্র নাথ রায়ের মেয়ে দেবশ্রী রানী (৭) এবং পামুলী ইউনিয়নের জোতভুবন পাড়া এলাকার অরুণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী ভরসা রানী (৩৫)।

আহত ব্যক্তিরা হলেন দেবীগঞ্জের জোতভুবন পাড়া এলাকার অজয় কুমার রায় (৫৫), পার্বতী রানী (৩৭), খোকা বাবু (৫০), বিমলা (৫০), দণ্ডপাল ইউনিয়নের রাজার হাট কালীগঞ্জ এলাকার সৌরভ (১১) এবং ইজিবাইকচালক প্রভাত কুমার (৪০)। তাঁদের মধ্যে অজয় কুমার রায় ও পার্বতী রানীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। হতাহতরা একে অপরের আত্মীয়স্বজন বলে জানা গেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে অজয় রায় তাঁর স্বজনদের নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ এলাকায় মারা যাওয়া এক স্বজনের লাশ দেখে বাড়িতে ফিরছিলেন। এ সময় তাঁরা দেবীগঞ্জ পৌরসভার বোদা-দেবীগঞ্জ সড়কের পাকুড়িতলা এলাকায় পৌঁছালে বোদা থেকে দেবীগঞ্জগামী একটি ট্রাক ইজিবাইকটিকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ইজিবাইকটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং যাত্রীরা ছিটকে সড়কের পাশে পড়ে গুরুতর আহত হন। ঘটনার পরপরই ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে যান।

পরে স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শ্যামলী রানী, দেবশ্রী রানী, ভরসা রানী, পার্বতী রানী ও অজয় কুমার রায়কে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরে রংপুরে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার কিছুক্ষণ পরেই শ্যামলী রানী মারা যান। রংপুরে নেওয়ার পথে শিশু দেবশ্রী রানী ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভরসা রানী মারা যান।

দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রবীর কুমার সরকার ট্রাকের ধাক্কায় ইজিবাইকের তিনজন যাত্রী নিহতের তথ্য নিশ্চিত করে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দেবীগঞ্জে মারা যাওয়া শ্যামলী রানীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরে মারা যাওয়া অপর দুজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র এল ক র স বজন

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা

অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।

ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।

সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।

স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা