আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে—এমন এক দিনে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে শত শত মানুষ বিশাল এক খোলা মাঠে জড়ো হয়েছে। তাদের চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা, যেন কৌতূহল আর চেপে রাখতে পারছে না। একই সঙ্গে মুখগুলো যেন আনন্দে ঝিলমিল করছে।

তাদের এই উত্তেজনা, কৌতূহল আর আনন্দের কারণ স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী এক খেলা—ষাঁড়দৌড়। অন্যান্য দেশ বা অঞ্চলের ষাঁড়দৌড় থেকে এটি খানিকটা আলাদা। এই দৌড়ে প্রথমে দুটি তাগড়া ষাঁড়ের কাঁধে জোয়াল সেগুলোকে একসঙ্গে বেঁধে জুড়ে দেওয়া হয়। এরপর জোয়ালের মাঝবরাবর একটি লম্বা দড়ি বেঁধে দড়ির আরেক প্রান্তে বাঁধা থাকে একটি পাতের মতো গোল বস্তু।

একজন জকি ওই পাতের ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে এক হাতে একটি লম্বা দড়ি ধরে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করেন, অন্য হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ছুটন্ত ষাঁড় দুটোকে নিয়ন্ত্রণ করেন।

বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এ খেলায় জকি নিজের অভিজ্ঞতা এবং সহজাত প্রবৃত্তির ওপর ভরসা করে প্রতিযোগিতায় নামেন। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার ঝুঁকি সব সময় থাকে। মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, ষাঁড়গুলো জকিকে পাত থেকে ফেলে দিয়েছে। জকি যদি সময়মতো হাতে ধরা দড়ি ছাড়তে না পারেন, তবে ষাঁড় দুটি তাঁকে মাটির ওপর দিয়েই টেনে নিয়ে যায়।

পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চলের আটাক জেলায় বহু বছর ধরে ষাঁড়দৌড়ের প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। এটি সেখানে শুধু একটি খেলা নয়, বরং ওই অঞ্চলের জীবন্ত ঐতিহ্যের অংশ।

যেসব অঞ্চলে ষাঁড়দৌড়ের জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ, তার একটি মালাল গ্রাম। প্রতিবছর শত শত মানুষ দৃষ্টিনন্দন এ প্রতিযোগিতা দেখতে সেখানে জড়ো হন।

সরদার হাসিবের পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বিনোদন নয়, এটা ঐতিহ্য। আমরা আমাদের প্রাণীগুলোকে নিয়ে গর্ব করি। কৃষক ও জমির মালিকেরা সারা বছর তাঁদের ষাঁড়গুলো যত্ন নিয়ে লালন-পালন করেন শুধু এই দিনের জন্য। মানুষ একটি বিজয়ী ষাঁড়ের জন্য উচ্চ মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকে। এটি গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

এশিয়া কাপে আজকের রাত যেন এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবুধাবির মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া এই লড়াই কেবল দুই দলের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভাগ্যও। কোটি টাইগার সমর্থক তাই আজ তাকিয়ে থাকবে টিভি পর্দায়। কারণ, এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সুপার ফোরে উড়াল দেবে, নাকি গ্রুপ পর্বেই শেষ হবে স্বপ্নযাত্রা।

গ্রুপের সমীকরণ এখন টানটান নাটকের মতো। তিন ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ঝুলিতে আছে ২ পয়েন্ট; এক জয় ও এক হারের ফল। হংকং অবশ্য তিন ম্যাচেই হেরে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

আরো পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

এখন হিসাবটা এমন—
আফগানিস্তান হেরে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান জিতলে সমীকরণ জটিল হবে। তখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে স্পষ্ট এগিয়ে থাকবে আফগানরা (২.১৫০)। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে -০.২৭০-তে।

অর্থাৎ আফগানিস্তান যদি জেতে, তবে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে এক অসম্ভব সমীকরণের দিকে। সেটা হলো- লঙ্কানদের অন্তত ৭০ রানের ব্যবধানে হারতে হবে এবং তা করতে হবে ৫০ বল হাতে রেখে। অন্যথায় রান রেটের খেলায় পিছিয়েই থাকতে হবে টাইগারদের। তবে বৃষ্টি যদি হানা দেয় কিংবা ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দু’দলই নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সুপার ফোরে।

ম্যাচকে ঘিরে দুই শিবিরেই চাপ-উত্তেজনার আবহ। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব মনে করেন, চাপটা আসলে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি, “আমরা এসব টুর্নামেন্ট খেলতে অভ্যস্ত, আমাদের কোনো চাপ নেই। শ্রীলঙ্কা ভালো দল ঠিকই, তবে তারাও চাপে থাকবে। আমার মনে হয় দারুণ একটা ম্যাচ হবে।”

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমর্থকরা আমাদের জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”

হংকংয়ের বিপক্ষে জিতলেও শ্রীলঙ্কাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা বলছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা সহজ হবে না তাদের জন্যও। শেষ পর্যন্ত কারা হাসবে জয়ের হাসিতে, আর কোন সমীকরণে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ভাগ্য; এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে আজকের আবুধাবির রাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ