মির্জাপুরে ২০ লাখ টাকার সয়াবিন তেলসহ ট্রাক ছিনতাই
Published: 30th, May 2025 GMT
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরে ২০ লাখ টাকার ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেলসহ ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মির্জাপুর বাইপাস আন্ডারপাসের পূর্বপাশে এই ছনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
ছিনতাইকারীরা ট্রাকের চালক ও হেলপারের হাত, পা ও মুখ বেধে মহাসড়কের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল এলাকায় ফেলে রেখে চলে যায়। মহাসড়কে টহলরত হাইওয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও ট্রাকের মালিক জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্রগ্রামের মিল্লাত ট্রান্সপোর্ট থেকে ২০ লাখ টাকার ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল (ঢাকা-মেট্রো-ট-২৪-৪৮২৯) ট্রাকে ভর্তি করে বগুড়ার দুপচাচিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর বাইপাস আন্ডারপাসে উঠতে চালক গাড়িটির গতি কমান। এসময় কয়েকজন ছিনতাইকারী একটি মিনি ট্রাক নিয়ে তেলভর্তি ট্রাকটির গতিরোধ করে। পরে ছিনতাইকারীরা তেলভর্তি ট্রাকের দুই পাশের গ্লাস ভেঙে চালক ও হেলপারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নামিয়ে মিনি ট্রাকে উঠিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যাত্রা করেন। অন্য ছিনতাইকারীরা তেলভর্তি ট্রাক নিয়ে চম্পট দেয়। ছিনতাইকারীরা চালক ও হেলপারকে মারপিট করে মহাসড়কের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল নামক স্থানে ফেলে রেখে চলে যায়। রাত চারটার দিকে মহাসড়কে টহলরত হাইওয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করেন।
ট্রাকের চালক নওগা সদরের আলাউদ্দিনের ছেলে আলআমিন ও হেলপার একই এলাকার বাবু মিয়ার ছেলে টিটু প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মির্জাপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রাকের মালিক সনি বলেন, চট্রগ্রামের মিল্লাত ট্রান্সপোর্ট থেকে ২০ লাখ টাকার ৬০ ড্রাম সয়াবিন তেল নিয়ে দুপচাচিয়া যাওয়ার পথে মির্জাপুর বাইপাস এলাকা থেকে তেলসহ ট্রাক ছিনতাই হয়েছে।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ট্রাক ও তেল উদ্ধারে পুলিশ কাজ করছেন। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ নত ই ২০ ল খ ট ক র
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]