সন্তান জন্মের আগে মৃত্যু কামনা করেন নবীর মা
Published: 31st, May 2025 GMT
হজরত ঈসা (আ.)-এর মাতা মরিয়ম (আ.) ছিলেন ইমরানের কন্যা। তাঁর মা হান্নাহ বিনতে ফাখরুজ ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার ও ইবাদতকারী। ইমরান ও হান্নাহ নিঃসন্তান ছিলেন। হান্নাহ একটি সন্তানের জন্য গভীরভাবে আকাঙ্ক্ষী ছিলেন এবং দিনরাত আল্লাহর কাছে সন্তান প্রার্থনা করতেন। তিনি মানত করেছিলেন, সন্তান জন্মালে তাঁকে মসজিদুল আকসার সেবায় উৎসর্গ করবেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, খণ্ড: ২)
একদিন হান্নাহ একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ততক্ষণে ইমরান মারা গিয়েছিলেন। সন্তানের নাম রাখা হলো মরিয়ম, যার সুরিয়ানি ভাষায় অর্থ ‘খাদেম’ বা ‘সেবক’। নামটি মানতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তবে হান্নাহ দুশ্চিন্তায় পড়লেন, কীভাবে একটি মেয়ে মসজিদুল আকসার খাদেম হবে? আল্লাহ এই সন্তানকে মসজিদের জন্য কবুল করলেন। (ফাতহুল বারি, ৬/৩৬৫)
সে সময় জাকারিয়া (আ.
মরিয়ম (আ.) মসজিদের পাশে একটি ছোট কক্ষে থাকতেন। দিনরাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না। তাঁর জন্য জান্নাতের খাবার আসত। জাকারিয়া (আ.) এসব দেখে বিস্মিত হতেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখনই জাকারিয়া ঘরে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেত, তার কাছে খাদ্যসামগ্রী দেখত। সে বলত, হে মরিয়ম, এসব তুমি কোথায় পেলে? সে বলত, তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অপরিমিত রিজিক দান করেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৭)
মরিয়মের ধর্মভীরুতা ও পবিত্র জীবনযাপন দেখে জাকারিয়া (আ.) গভীরভাবে প্রভাবিত হন। যৌবনে পা রাখার পর আল্লাহ মরিয়মের মাধ্যমে তাঁর ক্ষমতা প্রকাশের ইচ্ছা করেন। একদিন মরিয়ম মসজিদুল আকসার পূর্ব দিকে লোকচক্ষুর আড়ালে একাকী বসেছিলেন। জিবরাইল (আ.) যুবকের বেশে তাঁর কাছে আসেন। ভয় পেয়ে মরিয়ম আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন এবং যুবককে আল্লাহর কথা স্মরণ করান। জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর ফেরেশতা। আপনাকে পবিত্র পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিতে এসেছি।’ মরিয়ম বললেন, ‘কীভাবে সম্ভব? কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আমি বিবাহিত নই, অসতীও নই।’ জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘এটি আল্লাহর ইচ্ছা।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ১৬-৪০)
আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে মরিয়ম গর্ভবতী হলেন। প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে দুর্নাম ও অপবাদের ভয়ে তিনি মসজিদুল আকসা ত্যাগ করেন। মসজিদ থেকে ৯ মাইল দূরে সারাত পর্বতের একটি টিলায় চলে যান, যা বর্তমানে বেথেলহাম নামে পরিচিত। (কাসাসুল কোরআন, মাওলানা হিফজুর রহমান, অনুবাদ: আব্দুস সাত্তার আইনী, ১০/৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বিপদে পড়ে অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা না করে।’(বুখারি, হাদিস: ৫,৯৮৯)আরও পড়ুনবিশ্বাসীদের সাফল্যের সাত গুণ১১ মে ২০২৫সেখানে কোনো ঘরবাড়ি, মানুষ বা খাদ্য ছিল না। প্রসববেদনা শুরু হলে যন্ত্রণায় তিনি একটি মৃতপ্রায় খেজুরগাছের ডাল ধরে বসে পড়েন। আল্লাহ সেই গাছে তাজা ও পাকা খেজুর দেন এবং তাঁর পায়ের কাছে একটি নহর প্রবাহিত করেন। স্বামীর সংস্পর্শ ছাড়া সন্তান জন্মের বিষয়টি মরিয়ম মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি মৃত্যু কামনা করেন এবং মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যেতে চান। কোরআনে তাঁর এই অভিব্যক্তি বর্ণিত হয়েছে, ‘সে বলে উঠল, হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম আর মানুষের স্মৃতি থেকে পুরোপুরি মুছে যেতাম!’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২৩)
ইসলামে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন বিপদে পড়ে অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা না করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৮৯)
জিবরাইল (আ.) বলেন, ‘আমি আল্লাহর ফেরেশতা। আপনাকে পবিত্র পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিতে এসেছি।’ মরিয়ম বললেন, ‘কীভাবে সম্ভব? কোনো পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আমি বিবাহিত নই, অসতীও নই।’মুফাসসিরগণ বলেন, মরিয়ম (আ.) অপবাদ ও দুর্নামের ভয়ে এমন কথা বলেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য মৃত্যু কামনা নয়, বরং অধৈর্যের কারণে গুনাহ, দুর্নাম ও অপবাদ থেকে রক্ষা পাওয়া। (তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা মরিয়ম, আয়াত: ২৩)
একাকিত্ব, যন্ত্রণা ও দুশ্চিন্তার মাঝে ঈসা (আ.)-এর জন্ম প্রশান্তির ফল্গুধারা হয়ে আসে। সন্তানকে দেখে মরিয়মের আতঙ্ক ও উদ্বেগ দূর হয়। ফেরেশতারা তাঁকে বলেন, ‘লোকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না। বলবেন, রোজা রেখেছেন। তাদের জিজ্ঞাসা শিশুকে করতে বলুন।’ তখন রোজা রাখলে কথা বলা যেত না।
আরও পড়ুনহজের বিধান ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা১১ মে ২০২৫মরিয়ম সদ্যোজাত ঈসা (আ.)-কে কোলে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে ফিরলেন। শহরে পৌঁছালে লোকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে বললেন, ‘তুমি তো বিস্ময়কর কাণ্ড ঘটিয়েছ, মরিয়ম! তোমার পিতা মন্দ লোক ছিলেন না, তোমার মা–ও ব্যভিচারিণী ছিলেন না।’ মরিয়ম শিশুর দিকে ইঙ্গিত করলেন। লোকেরা অবাক হয়ে বলল, ‘এমন শিশুর সঙ্গে কীভাবে কথা বলব?’ তখন শিশু ঈসা (আ.) বললেন, ‘আমি আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং নবী করেছেন।’ (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৩০)
আল্লাহ মরিয়ম (আ.)-কে সম্মানিত করেছেন এবং জান্নাতে সর্বোত্তম নারীর মর্যাদা দিয়েছেন। আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতবাসীর মধ্যে সর্বোত্তম নারী হলেন খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ, মরিয়ম বিনতে ইমরান এবং আসিয়া বিনতে মুজাহিম।’ (মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস: ২,৯০৩)
প্রসঙ্গত, আল্লাহ পৃথিবীতে চার পদ্ধতিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন: ১. নারী-পুরুষের মাধ্যম ছাড়া, যেমন আদম (আ.)। ২. নারী ছাড়া পুরুষের মাধ্যমে, যেমন আদম (আ.) থেকে হাওয়া (আ.)। ৩. পুরুষ ছাড়া নারীর মাধ্যমে, যেমন মরিয়ম (আ.) থেকে ঈসা (আ.)। ৪. নারী-পুরুষ উভয়ের মাধ্যমে, যেমন উল্লিখিত তিনজন ছাড়া অন্য সব মানুষ।
লেখক: আলেম
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মসজ দ ল আকস র মসজ দ র আল ল হ কর ছ ন র জন য বলল ন ইমর ন ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, ‘‘বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এই অবস্থা বজায় থাকলে খুব ভালোভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।’’
সোমবার (৩ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ডরমেটরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমাতুল জান্নাত, পুলিশ সুপার শামসুল আলম সরকার, সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা আক্তার ও উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ উল্লাহ।
ঢাকা/রতন/রাজীব