কৃষিকে লাভজনক ও টেকসই করতে হলে কেবল কৃষকের নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদের শ্রমেরও অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, কৃষকের পরিবারের সদস্যরা যে সময় ও শ্রম দেন, সেটাও অর্থনীতির অংশ। যদি তাঁরা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হতেন, তাহলে সেখান থেকেও আয় হতো। সুতরাং কৃষিকাজে তাঁদের অবদানকে হিসাবের বাইরে রাখা যাবে না। কৃষিকে লাভজনক দেখাতে হলে এই শ্রমের অর্থমূল্য নির্ধারণ জরুরি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এক কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি।

কর্মশালার আয়োজন ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের বৃহৎ প্রকল্প 'পার্টনার'—এর আওতায়। কৃষি সচিব বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকারসহ অনেক খাতে কমিশন থাকলেও কৃষিতে আজও কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। অথচ কৃষি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখনই সময় কৃষি খাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠনের।

তিনি জানান, সরকার ২০৫০ সাল পর্যন্ত কৃষির জন্য একটি ২৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উঠে এসেছে। সেই বৈঠক ২০ মিনিট নির্ধারিত থাকলেও তা দেড় ঘণ্টা ধরে চলে, যা থেকেই কৃষি খাত নিয়ে সরকারের আগ্রহ স্পষ্ট।

পার্টনার প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা, বাকিটা বিদেশি ঋণ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে দেশের ৮ বিভাগের ১৪টি কৃষি সম্প্রসারণ অঞ্চলের ৪৯৫টি উপজেলায়।

সচিব বলেন, প্রকল্পে কোনো কোনো গবেষকের পেছনে গড়ে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। অথচ একজন সরকারি কর্মকর্তার পুরো বছরের বেতন-ভাতা এর চেয়ে অনেক কম। এই অনুপাতে প্রকল্পের ফলাফল নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ঋণের অর্থ শোধ করতে হবে বাজারমূল্যে।’

তিনি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের প্রায় ৭০ শতাংশই যাচ্ছে সারে ভর্তুকিতে। অথচ মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই জানেন না, বর্তমানে কোন সারে কত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। সচিব বলেন, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে তথ্যনির্ভর ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পার্টনার প্রকল্পের পরিচালক মো.

আবুল কালাম আজাদ জানান, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষিতে বৈচিত্র্য আনা, উদ্যোক্তা তৈরি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, গ্যাপ (উত্তম কৃষি চর্চা) ভিত্তিক চাষে ১৫টি ফসল নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ৭টি ফসলে কৃষকদের গ্যাপ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৩ লাখ হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতিতে উৎপাদনের কথা থাকলেও জনবল সংকটে তা ব্যাহত হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব

শিক্ষা বঞ্চিত ৬ বছর বয়সী ছোট্ট নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে পাশে দাঁড়িয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্রিকেট ক্লাব। তাকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে দেয় সংগঠনটি। 

জানা যায়, নাঈমের বাবা অন্তর দ্বিতীয় বিয়ে করে অনত্র চলে যান। নাইমের মা নুপুর গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

নাইমকে লালন-পালন করছেন তার নানী হাজেরা খাতুন। তিনি ক্যাম্পাসের একটা দোকানে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন।

আরো পড়ুন:

তরুণদের শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে: জবি উপাচার্য

শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার

বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকে সংগঠনটির সভাপতি শেখ সাকলাইন ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সুশিক্ষার উদ্দেশ্যে নাঈমকে স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন।

পরে নাঈমকে ব্লু বার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্লে শ্রেণিতে ভর্তি করে সংগঠনটি। এছাড়া নাঈমের পড়াশোনার জন্য আনুষঙ্গিক বই, পোশাক এবং ১ মাসের অগ্রিম বেতন প্রদান করা হয়।

নাঈমের নানী হাজেরা খাতুন বলেন, “অর্থের অভাবে নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। পরে ক্যাম্পাসের এই মামাদের জানালে তারা আমাকে আশ্বস্ত করেন এবং নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। এতে আমি খুশি। আমি চাই নাঈম ঠিকমতো পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হোক।”

ছোট্ট নাঈম জানায়, বড় ভাইয়েরা তাকে স্কুলে ভর্তি করাইছে। এতে সে অনেক খুশি। সে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে চায়।

ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, তাদের প্রতি সমাজের অনেক প্রত্যাশা থাকে শুধু জ্ঞানে নয়, মানবিকতাও। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমাদের ক্লাব একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এক অসহায় ও দরিদ্র শিশুর শিক্ষা জীবনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য তাকে কেবল একটি শিক্ষার সুযোগ দেওয়া নয়, বরং একটি সম্মানজনক জীবনের পথে এগিয়ে নেওয়া। আমরা বিশ্বাস করি, সমাজের প্রতিটি শিশুরই সম্ভাবনা আছে ভালো কিছু করার, শুধু দরকার একটি সুযোগ। আর সেই সুযোগটা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। এটা শুধু একটি শিশুর গল্প নয়, এটা আমাদের ক্লাবের ভবিষ্যতের গল্প।”

ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি শেখ সাকলাইন বলেন, “ইবি ক্যাম্পাসে ক্রিকেটারদের খুব আদরের নাঈম। ছোট থেকেই সে তার নানীর কাছে থাকে। তার নানী আমাদের ক্যাম্পাসে একটা দোকানে কাজ করে। আমরা ইবি ক্রিকেট ক্লাব যখন মাঠে খেলি, তখন ছোট নাঈম আমাদের দেখলেই ছুটে আসে। আমরা আদর করে তাকে অনেক কিছু কিনে দেই।”

তিনি বলেন, “একদিন তার নানী আমাকে জানান, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, নাঈমকে স্কুলে ভর্তি করব। ইবি ক্রিকেট ক্লাব, শুধু ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা সুযোগ পেলে অসহায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। খেলাধুলা মানুষের উন্নত মন মানসিকতার বিকাশ ঘটায়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে নাঈম একদিন অনেক বড় হবে এবং সে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, ইনশাআল্লাহ।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ