বিদেশিদের বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে
Published: 1st, November 2025 GMT
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শুরু হওয়া অনশন চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সকালে শতাধিক শ্রমিক প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হন। একে একে বক্তব্য দেন শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী। তাঁরা দাবি করেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব সক্ষমতায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বিদেশি অপারেটরের প্রয়োজন নেই।
স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই ভালোভাবে চলছে। বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে এই প্রতিষ্ঠান। এমন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ফলে সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়েও নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়া চর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ কোনোভাবেই এটি সফল হতে দেবে না। বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া মানে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কাউকে না জানিয়ে বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চুক্তি করেছিল। বর্তমান সরকারও সেটি পর্যালোচনা না করে বাস্তবায়ন করছে। এটি দেশের মানুষের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই প্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্কপ। সমাবেশ শেষে বন্দর এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই কর্মসূচি থেকেই আজকের গণ–অনশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত, বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। চলতি মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গড়ে দৈনিক ৫ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। ২০২২ সালের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি তাদের সর্বোচ্চ তেল আমদানি।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘাত এড়াতে ভারত যে কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে, এটি তারই অংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বাড়িয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যঘাটতি–সংক্রান্ত উদ্বেগও আমলে নিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তেল আমদানি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কেপলারের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত তেল আমদানি বাড়িয়েছে, কেননা সেখান থেকে তেল আমদানি করা ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। এর নানা কারণ আছে। প্রথমত, ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের মধ্যে দামের যে ব্যবধান, সেই কারণে ডব্লিউটিআই ক্রুড কেনা ভারতের জন্য লাভজনক হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে থেকে চীনের তেল কেনা কমেছে। ফলে মার্কিন তেল কেনা ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলোর জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে।
কেপলারের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দৈনিক তেল আমদানির পরিমাণ গড়ে প্রায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ব্যারেলে উত্তীর্ণ হতে পারে। আগামী নভেম্বর মাসের জন্য যে পূর্বাভাস, তাতে এই পরিমাণ ৪ লাখ থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের মধ্যে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অক্টোবর মাসের আগপর্যন্ত দৈনিক গড়ে প্রায় ৩ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ভারত, সেই তুলনায় এই বৃদ্ধি যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য।
ভারতের সরকারি ও বাণিজ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বাড়াতে মার্কিন অপরিশোধিত তেল কেনা বাড়িয়েছে। এই তেলের মধ্যে আছে মিডল্যান্ড ডব্লিউটিআই ও মার্স। তবে অর্থনৈতিক কারণ যতই বলা হোক না কেন, এর পেছনে আছে মূলত রাজনৈতিক কারণ। সেটা হলো, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়ানো।
এই কৌশলগত পরিবর্তন এমন সময়ে এল, যখন রুশ তেল কোম্পানি রুজনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও তীব্র হচ্ছে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়ানোর এ ঘটনা বাণিজ্যিক টানাপোড়েন দূর করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যখন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, তখন থেকেই এই পরিবর্তন দেখা গেছে। ভারতের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, ভারত নিজের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও রুশ তেল কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ প্রশমনের কৌশলগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বলেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা বন্ধ করবে। যদিও ভারত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানি বাড়লেও রাশিয়া এখনো ভারতের প্রধান অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী, দেশটির মোট আমদানির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আসে রাশিয়া থেকে। সরবরাহের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইরাক, তৃতীয় স্থানে সৌদি আরব।
কেপলারের বিশ্লেষক ঋতোলিয়া এই প্রবণতার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মার্কিন তেল কেনা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে ভারতীয় তেল পরিশোধনাগারগুলো তেলের উৎস বহুমুখী করেছে, তা ঠিক। এর মধ্য দিয়ে তারা দেখিয়েছে, স্বল্পমেয়াদি সুযোগ কাজে লাগানোর সক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু বিষয়টি কাঠামোগত নয়, শুধু দামের পার্থক্যের কারণে তা হয়েছে। দীর্ঘ পরিবহন সময়, বাড়তি ভাড়া ও ডব্লিউটিআই তেলের গড়নের কারণেও ভারতের পক্ষে এই তেল কেনা তেমন একটা সম্ভব হবে না।
ঋতোলিয়া আরও বলেন, ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের তেলের হিস্যা বৃদ্ধির বিষয়টি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের জ্বালানি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পাশাপাশি ভারতের জ্বালানি সরবরাহের বহুমুখীকরণ কৌশল শক্তিশালী হচ্ছে। দেশটি সরবরাহ নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য সমানভাবে বিবেচনায় নিচ্ছে বলেই মনে হয়।