এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজ পাতাকা হাতে কেঁদেছি: শাকিল
Published: 1st, June 2025 GMT
ঘনকালো মেঘে ঢাকা আকাশ। বৃষ্টি কখনও নামছে ঝুমঝুমিয়ে, কখনও গুঁড়িগুঁড়ি। এরই মধ্যে বিরামহীন বয়ে চলছিল দমকা হাওয়া। তবে এসব কিছুই বাধা হতে পারেনি হাজারো মানুষের জন্য। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো ইকরামুল হাসান শাকিলের জন্মভিটায় ফেরার সংবাদে তারা ভিড় করেন।
শনিবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাগচালা গ্রামে দেখা যায় এ দৃশ্য। আশপাশের সব গ্রামের মানুষের গন্তব্য ছিল শাকিলের বাড়ির দিকে। তাদের কারও হাতে তাজা ফুলের তোড়া, কারও হাতে মালা। কেউ আবার নিয়ে এসেছিলেন নানা জাতের মৌসুমি ফল। অগণিত মানুষের সঙ্গে জ্যৈষ্ঠের প্রকৃতিও যেন ছুটে এসেছিল শাকিলকে স্বাগত জানাতে। মানুষের এই ভালোবাসার সামনে এভারেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি।
ইকরামুল হাসান শাকিল বলেন, ‘এভারেস্টের চূড়ায় দাঁড়িয়ে লাল-সবুজের পাতাকা হাতে নিয়ে আমি কেঁদেছি। এই কান্না ছিল কৃতজ্ঞতার, আনন্দের আর দায়িত্ববোধের। এই পথ সহজ ছিল না।’
বাগচালা গ্রামের প্রয়াত খবির উদ্দিন ও শিরিন আক্তার দম্পতির তিন ছেলে। সবার বড় ইকরামুল হাসান শাকিলকে বিদ্যালয়জীবনেই আকর্ষণ করে কবিতাচর্চা। পরবর্তী সময়ে পাহাড়-পর্বতের চূড়া ছোঁয়ার নেশায় পেয়ে বসে তাঁকে। ভারতের নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিংয়ে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। পরে আরোহণ করেছেন গ্রেট হিমালয়, ৬ হাজার ১৮৬ মিটার উঁচুর মাউন্ট কায়াজো রি পর্বত, ৭ হাজার ১২৭ মিটার উঁচু হিমলুং, ৬ হাজার ৩৩২ মিটারের দোলমা খাংসহ বেশ কিছু পর্বত।
তবে এভারেস্টের শীর্ষ ছোঁয়ার আগে তাঁকে পাড়ি দিতে হয় দুর্গম পথ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তাঁর এই যাত্রা শুরু হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। এদিন দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানী থেকে হাঁটতে শুরু করেন। হেঁটে ৮৪ দিনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছান গত ১৯ মে নেপালের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে। সেখান থেকে শাকিল দেশে ফিরেছেন বৃহস্পতিবার বিকেলে। ঢাকায় দু’দিন বিশ্রামের পর শনিবার সকালে জন্মভিটায় ছুটে যান। ঢাকা থেকে মাওনা চৌরাস্তা, ফুলবাড়িয়া রোড হয়ে শালদহ সেতু পেরিয়ে বাগচালা গ্রামের ভিটায় পৌঁছান। শুরুতেই মা শিরিন আক্তারকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চারদিক ফুলের বৃষ্টিতে তাঁকে স্বাগত জানায় এলাকাবাসী।
এ অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে শাকিল সমকালকে বলেন, ‘গ্রামের মানুষ আমাকে বিরল ভালোবাসা দিয়েছে। আমাকে আপ্লুত করেছে। আমাকে ঋণী করে ফেলেছে। আমাকে দায়বদ্ধ করে ফেলেছে। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আমার আর কিছুই দেওয়ার নেই। বাবা বেঁচে থাকলে আজকে অনেক খুশি হতেন। তাঁকে খুব মিস করছি।’
এভারেস্ট অভিযানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাকিল বলেন, ‘হিমালয়ের অতল গভীর বরফের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে আমাদের জীবনবিন্দু। প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য ছিল। যমুনা নদীর উত্তাল খরস্রোতা ঢেউ, অনিশ্চয়তার দীর্ঘ পথ, খুম্বু আইসফল, লোৎসে ফেস, সাউথ কল, হিলারি স্টেপ– একেকটা জায়গা যেন একেকটা মানসিক যুদ্ধক্ষেত্র ও মৃত্যুর চোখ রাঙানি।’
অক্সিজেনশূন্য উচ্চতা উঠে কৃত্রিম অক্সিজেনের মাস্ক মুখে তাঁর প্রতিবারই মনে হয়েছে, ‘আর পেরে উঠবো না।’ কিন্তু হৃদয়ে বাজতে থাকা বাংলাদেশের নাম আর ‘সি টু সামিট’ অভিযানের অঙ্গীকার তাঁকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
শাকিল বলেন, ‘আমি তখন দাঁড়িয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়। মাথার ওপরে বিশুদ্ধ নীল আকাশ থাকার কথা ছিল, কিন্তু প্রকৃতি সেটা চায়নি। চেয়েছিল চরম পরীক্ষা। পায়ের নিচে ছিল অসীম শূন্যতা। ৮৮৪৮.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা