যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে বোমা: ‘সন্ত্রাসী হামলা’ বলেছে এফবিআই
Published: 2nd, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে একদল বিক্ষোভকারীর ওপর পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ফিলিস্তিনের গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ করছিলেন। এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে তদন্ত শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই।
এফবিআই কর্মকর্তা মার্ক মিশালেক বলেছেন, আহত ছয়জনের বয়স ৬৭ থেকে ৮৮ বছরের মধ্যে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে এটা পরিষ্কার, এটি একটি পরিকল্পিত সহিংসতা এবং এফবিআই একে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধরে নিয়ে তদন্ত করছে।’
সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে পুলিশ মোহাম্মদ সোলিমান নামের ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। হামলার পরপরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এফবিআইয়ের প্রধান ক্যাশ প্যাটেল বলেন, ‘আমরা কলোরাডোর বোল্ডারে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে অবগত এবং ঘটনাটির আদ্যোপান্ত তদন্ত করে দেখছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভরত একদল লোকের দিকে ঘরোয়াভাবে তৈরি মলোটভ ককটেল (পেট্রলবোমা) সদৃশ কিছু ছুড়ে মারেন এক ব্যক্তি।
স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার কিছু আগে হামলার ঘটনাটি ঘটে। বোল্ডার পুলিশপ্রধান স্টিভ রেডফার্ন বলেছেন, তাঁদের ধারণা, এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত ছিল না।
স্টিভ রেডফার্ন বলেন, ‘আমরা মোটামুটি নিশ্চিত, একমাত্র সন্দেহভাজনকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি।’
হামলার সময়ের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গায়ে জামা (শার্ট) না থাকা এক ব্যক্তি দুই হাতে স্বচ্ছ স্প্রে বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর তাঁর সামনে ঘাসে আগুন জ্বলছে।
ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘জায়নবাদীরা নিপাত যাক’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘তারা খুনি’। লাল টি-শার্ট পরা কয়েকজনের দিকে তাকিয়ে তিনি কথাগুলো বলছিলেন, যাঁরা মাটিতে পড়ে থাকা একজনের শুশ্রূষা করছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বলে জানান বোল্ডার পুলিশপ্রধান স্টিভ রেডফার্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে পৌঁছানোর পর একাধিক আহত ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যাঁদের শরীরে আগুনে পোড়া ও অন্যান্য ধরনের জখমের চিহ্ন ছিল।’
স্টিভ রেডফার্ন বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ তাৎক্ষণিক ওই সন্দেহভাজনের মুখোমুখি হয়। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই তাঁকে আটক করা হয়েছে।
কলোরাডোর অ্যাটর্নি জেনারেল ফিল ওয়েইসার বলেছেন, ‘যে গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করা হয়েছে, সে বিবেচনায় এটিকে ঘৃণাজনিত অপরাধ বলে মনে হচ্ছে।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, কয়েকজন আহত৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা: নির্দোষ দাবি করে অভিযুক্তের ফেসবুক লাইভ
ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
সোমবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফেসবুক লাইভে এসে সাগর কাজী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে দায় চাপান বিএনপির নগরকান্দা উপজেলা যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার ওপর। লাইভের পরপরই তিনি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন।
ফেসবুক লাইভে সাগর কাজী বলেন, ‘এখানে রাজনীতি করতেছেন বদিউজ্জামান তারা মোল্যা। তিনি রাজনৈতিক ইস্যু করে ফেলছেন। তিনি নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন, নিজে সালিশ করেছেন, তাকে অমান্য করে বৈশাখী।’
তারা মোল্যাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে এখন চিনে না, আমাকে জড়িয়ে দিচ্ছে। আরে মিয়া আমারে চিনেন না, আপনার সাথে ব্যানার করলাম, বিএনপির যখন ব্যানার করলাম, আপনি তখন চিনেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এখন আমি বিপদে পড়েছি, আমাকে চিনেন না। আমার ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন কেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা মোল্যা সেদিন বলেছেন, বিএনপির কোনো লোক ছিল না ওখানে, কিন্তু সব তারা মোল্যার লোকজন ছিল। তারা মোল্যা শেল্টার দিয়ে সবকিছু করাইছে।’
এ সময় সাগর কাজী মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আর আব্বু নাকি পিটাইছি, একটা মানুষকে যদি ২০ থেকে ২৫ মিনিট পেটানো হয় তাহলে তার এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকা উচিত। আমাদের পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড নষ্ট করার জন্য মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিদিন আমার বাড়িতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব আসতেছে।’
সাগর আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলে নিজে ছিলেন তারা মোল্যা। নিজেই সালিশ করেছেন। এখন বলেন তিনি ছিলেন না। আমি তো তার নির্দেশ অমান্য করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সে এখন বলছে, বিএনপির কেউ ছিল না। অথচ তার লোকজনই তো ছিল।’
ফেসবুক লাইভের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান তারা মোল্যা বলেন, ‘ওতো (সাগর কাজী) আমাকে আর বৈশাখী নিয়ে যেসব কথা বলছে, তাহলে বোঝেন কেমন লোক। কারণ, সাগর যুবলীগ নেতা ফরহাদের লোক। ওরা এখনও চাচ্ছে যে বিএনপিকে কীভাবে হেনস্তা করা যায়। আমার দল করলে অবশ্যই চিনতাম। ওদের আমার দলে মিশিয়ে তো আমি দল থেকে বহিষ্কার হতে চাই না।’
গত ৩০ মে বিকেলে ফরিদপুরের নগরকান্দার ভবুকদিয়া গ্রামে বৈশাখীকে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে সাগর কাজী, তার বাবা সেকেন কাজী, স্থানীয় বিএনপি নেতার সমর্থকদের নাম উঠে আসে।
বৈশাখীর দাবি, তার ছোট বোনকে স্থানীয় শরিফ ব্যাপারী উত্ত্যক্ত করেছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করলে উত্তেজিত হয়ে সাগর ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে রাত ১০টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। বৈশাখী দুটি মামলার বাদী, আর একটি করেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে শরিফ বেপারীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পর নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে তাৎক্ষণিকভাবে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
মারধরের শিকার বৈশাখী বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি। তার মাথা ও গলায় আঘাতের কারণে তিনি চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার নেতৃত্বে আমার ওপর সাগর কাজী ও তার বাবা সেকেন্দার কাজীসহ বিএনপির নেতারা হামলা চালায়।
বৈশাখী বলেন, এ হামলায় যারা অংশ নিয়েছেন তারা এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল, এখন বিএনপি করে। আমার ওপর হওয়া হামলায় যারা জড়িত তারা সন্ত্রাসী, এদের কোনো দল নেই। আমি দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এই সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।