রাজনৈতিক সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসন খাতে বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছে। তবে আগের থেকে করহার কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি শর্ত দিয়েছে, বেআইনি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের অর্থে এ সুযোগ মিলবে না। শুধু বৈধ উপার্জন অতীতে কর দেওয়ায় অপ্রদর্শিত হয়ে থাকলে, সে টাকা বিনিয়োগ করে সাদা করা যাবে।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও অর্থনীতিবিদরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্ববিরোধী ও দুর্নীতিপরায়ণ নীতির প্রতিফলন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 
নতুন বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, কালো টাকা আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে সাদা করার ক্ষেত্রে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ে ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের জন্য প্রতি বর্গফুট ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এখন যা প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা; অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে কর সোয়া ৫ গুণ বাড়ানো হয়েছে।
একইভাবে ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ এবং পাঁচলাইশ, খুলশীবাদ, নওগ্রামে (চট্টগ্রাম) অনুরূপ সম্পত্তির জন্য প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এই এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের ভবনের জন্য প্রতি বর্গফুট দেড় হাজার টাকা এবং ৬০০ টাকা কর দিতে হবে।
বাজেট ঘোষণার পর টিআইবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমালোচনা করে বলেছে, এটি সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত

অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাশাপাশি ভবনের নির্মাণের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে আগের চেয়ে করের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এলাকাভেদে আয়তন অনুসারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই টাকার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

আজ সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। সেখানে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেন।ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা; ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার অনধিক ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৮০০ টাকা; ঢাকার ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিদ্ধেশ্বরী, কারওয়ান বাজার, বনশ্রী, বিজয়নগর, ওয়ারী, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ২ হাজার বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ব্যতীত সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৭০০ টাকা; ওপরের উল্লেখিত এলাকা ব্যতীত সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৬০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ৩০০ টাকা; জেলা সদরের পৌর এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১৫০ টাকা; দেশের অন্য এলাকায় ১৫০০ বর্গফুটের অনধিক প্লিন্থ আয়তন বিশিষ্ট ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ১০০ টাকা।

এ ছাড়া একই সুবিধা পেতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে ৫০ থেকে ৯০০ টাকা কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার ক্ষেত্রে দুটি শর্তও দেওয়া হয়েছে। যদি আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনের অধীনে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম হতে উদ্ভূত হয় এবং কোনো বৈধ উৎস হতে উদ্ভূত না হয়, তাহলে এই আইনের এই ধারার আওতায় কালোটাকা সাদা করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা এসে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করে। কিন্তু এবারের বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা নতুন করে কর হার বাড়িয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিলেন।

শেখ হাসিনার সরকারের দেওয়া চলতি বাজেট এক বছরের জন্য নগদ টাকার পাশাপাশি জমি, ফ্ল্যাট-প্লটসহ স্থাবর সম্পদ কেনার মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। সর্বোচ্চ করহারের চেয়ে কম কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার এই সুবিধার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তীব্র সমালোচনা ছিল। এই সুযোগকে অনৈতিক ও সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় হিসেবে বর্ণনা করেন বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কালোটাকা সাদা করার এই বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আয়কর আইনের তফসিলে রাখা কালোটাকা সাদা করার সুবিধা বহাল রাখা হলো।

প্রায় সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর এই সুযোগ দেওয়া হলেও অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থসম্পদ বৈধ করায় কখনোই তেমন সাড়া মেলেনি।

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অপ্রদর্শিত প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা ঘোষণায় এসেছে অর্থাৎ সাদা হয়েছে। তবে বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ ছিল না।

সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হলেও কেউ এই সুযোগ নেননি। এর এক বছর পরেই আবারও কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল, সমালোচনা 
  • প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত
  • ফ্ল্যাট কেনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত
  • রাজশাহীর আম কোথা থেকে এল, কীভাবে সুখ্যাতি ছড়াল