ঈদের টানা ছুটিতে রাঙামাটির বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন দর্শণার্থীদের পদভারে মুখর। ঈদের পরদিন থেকেই প্রকৃতির রূপ দেখতে হাজারো পর্যটক আসতে শুরু করেছেন পার্বত্য এ জেলায়। এখানকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যতে ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকেই রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। দলে দলে পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। পর্যটকদের অনেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার করছেন। হ্রদ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করে যান্ত্রিক জীবন একঘেয়েমি দূর করছেন তারা।
পলওয়েল পার্কেও ছিল পর্যটকদের সরব পদচারণা। তারা পার্কের ভেতরে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। শিশুরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে চড়ে আনন্দ করে।
আরো পড়ুন:
কুয়াকাটায় কাঙ্ক্ষিত পর্যটক নেই
পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি
রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা নূর হোসেন বলেন, “ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে বন্ধুরা মিলে রাঙামাটি ঘুরতে আসলাম। চমৎকার জায়গা। শান্ত প্রকৃতি, হ্রদের জলও শান্ত ও স্বচ্ছ। এমন সৌন্দর্য বাংলাদেশের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।”
ঢাকা থেকে আসা এক নবদম্পতি বলেন, কয়েকদিন আগেই বিয়ে হয়েছে, ঈদের ছুটিতে তাই রাঙামাটি চলে আসলাম। শান্ত প্রকৃতি দেখে ভালো লাগছে। সুবলং ঘুরতে গিয়ে হ্রদের দুই পাশের পাহাড় খুব ভালো লেগেছে।
প্রিয়াংকা দে নামে এক পর্যটক বলেন, “আরণ্যক, পলওয়েল পার্ক এই জায়গাগুলো ঘোরা শেষ, এবার কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণে যাচ্ছি। হ্রদের সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করবে এমন আশাই করছি।”
পর্যটন নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো.
এদিকে, রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে বুকিং বেড়েছে। হোটেল হিল পার্কের সত্ত্বাধিকারী স্বপন শীল বলেন, “ঈদের ছুটিতে পর্যটক হবে সেটি আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। ঈদের আগে আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়। আগামী কয়েকদিনও ভালো পর্যটক হবে।”
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। আমাদের যে টার্গেট ছিল ঈদকে ঘিরে, আশা করছি, তা পূরণ হবে। সোমবার (৯ জুন) থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং আছে। আশা করছি এই মৌসুমে আমাদের বেশ ভালো ব্যবসা হবে।”
ঢাকা/শংকর/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর যটক স ন দর য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
নিস্তব্ধ পাহাড়ের পাদদেশে মুখরিত টাঙ্গুয়ার হাওর
একদিকে ঢল, বন্যা, ফসলহানি, বাঁধ ভাঙার কষ্ট। অন্যদিকে অবারিত জলরাশি, শস্যের মাঠ আর অতুল্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সম্ভার। নিজের কষ্ট আড়াল করে সেই সৌন্দর্যে অতিথিদের ক্লান্তি ভুলায় তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার অধ্যুষিত প্রাকৃতিক লীলাভূমি। ঈদ-পার্বণের ছুটিতে এই হাওরের পাড়ে ছুটে যান পর্যটকরা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ঈদুল আজহার ছুটিতে এরইমধ্যে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকা। ঈদের দিন সন্ধ্যার পর থেকে আশেপাশের পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে হাওর এলাকায়। রোববার সকাল থেকেই সেখানে ভিড় বাড়তে থাকে। পর্যটকরা সকাল থেকেই হাউজবোট ও কান্ট্রি বোট চড়ে টাঙ্গুয়ার হাওরের দিকে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নীল জল দ্যা প্রিমিয়াম হাউজ বোটের মালিক আবিকুল ইসলাম।
এই বোট মালিক আরো জানান, প্রতিটি হাউজবোট একদিন-এক রাতের জন্য ৮০ থেকে এক লাখ টাকায় বুকিং হয়। আর কাট্রি বোটগুলো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
হাউজবোটগুলো অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন নৌকা। আর কান্ট্রিবোট বলতে দেশীয় সাধারণ ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলোকে বোঝায়।
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। সারা বছরেই এই উপজেলার পর্যটন স্পটগুলো দেশ-বিদেশের সৌন্দর্য পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে।
তবে ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলন মেলায় পরিণত হয় টাঙ্গুয়ার হাওর, লাকমা ছড়া, নিলাদ্রি লেক, বারিক্ক্যার টিলা ও যাদুকাটা নদী। এখানে ঈদ উৎসব ছাড়াও ছুটির দিনে আসেন সহস্রাধিক পর্যটক। এই ঈদেও পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, ঈদের ছুটি কাটাতে পর্যটকদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এ উপজেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প নীলাদ্রী লেক, বারিক্ক্যা টিলা, লাকমাছড়া, রূপের নদী যাদুকাটা ও জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান। এ ছাড়াও রয়েছে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে ট্যাকেরঘাট পাহাড়ি ছড়া, রাজাই ঝর্ণা, লালঘাট ছড়া, লালঘাট ঝর্ণা।
তারা বলেন, পর্যটকরা সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে নৌকায় উঠে দুপুর ২টার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরে পৌঁছাতে পারেন। সেখানে হাওরের সচ্ছ পানিতে গোসল করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দুপুরের খাবারের বন্দোবস্ত রয়েছে হাওরেই। বিকেলে নৌকা নিয়ে ট্যাকেরঘাট নীলাদ্রি লেকে ঘোরার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া নিরাপদ রাত্রিযাপন করতে পারবেন হাওরেই।
নীলাদ্রী লেক থেকে পায়ে হেঁটেই সীমান্তের ছোট ছোট পাহাড়ে উঠে সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় মেঘালয়ের। এ ছাড়াও হাতে সময় থাকলে নীলাদ্রীর পাড়ে থাকা মোটরসাইকেলে করে বারিক্ক্যাা টিলা, রূপের নদী যাদুকাটা ও শিমুল বাগানসহ সবকটি পর্যটনস্পট ঘুরা যায় সহজেই।
তাহিরপুর ইউএনও আবুল হাসেন বলেন, তাহিরপুরে সারা বছরেই পর্যটক আসেন। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়বে।