নারীর চুল কেটে নির্যাতন, থানা ঘেরাও করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
Published: 11th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।
ওই মামলায় আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে তিন নারী আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে আসামিদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে বেলা ১১টায় থানা ঘেরাও করেন শতাধিক গ্রামবাসী। থানা চত্বরে বেলা ১১টা ৩৫ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ।
আসামিরা হলেন উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।
বেলা ১১টার দিকে থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। পুলিশ আসামিদের গাড়িতে তুলছে। আর লোকজন আসামি নিয়ে যেতে বাধা দিচ্ছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা রিপন বলেন, ‘ওই নারী আমার বাড়ি থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। আর পুলিশ চোরের পক্ষ নিয়ে আমার স্ত্রীসহ তিনজনকে ধরে এনেছে। আমরা চোরের শাস্তি এবং আটককৃতদের ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেছি।’
একই এলাকার আমিরুলসহ আরও কয়েকজন বলেন, ‘ওই নারী এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছেন। সেদিন লোকজন ধরে বিচার করেছেন। আর পুলিশ আমাদের লোক ধরে এনেছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।’
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে রেফ্রিজারেটর থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাঁকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারাগাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। একপর্যায়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান তাঁর স্বামী।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত আটটার দিকে ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর করে তাঁকে তুলে আবার প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেন। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসীকে নিয়ে সালিস বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ সম্পর্কে ভুক্তভোগী নারী মামলার বাদী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে চুরির নাটক সাজিয়ে আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন গ্রামের লোকজন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। কিন্তু মামলা তোলার জন্য সকলেই হুমকি দিচ্ছে।’
ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) আবদুর রশিদ বলেন, শারীরিক নির্যাতন, চুল কর্তন, ভাঙচুর, লুটপাটসহ বিভিন্ন অভিযোগে এক নারী মামলা করেছেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে কুমারখালী থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, আসামিদের আদালতে নেওয়ার সময় গ্রামের লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তবু কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আস ম দ র কর ছ ন ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
চোখে আলো ফেলা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে কৃষককে হত্যা
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় চোখে টর্চলাইটের আলো পড়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ছুরিকাঘাতে এরশাদ আলী (৩৫) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত এরশাদ আলী উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম সোহাগীপাড়া গ্রামে মানিক মিয়ার মুদিদোকানে যান এরশাদ আলী। এ সময় এরশাদ আলীর চোখে টর্চলাইটের আলো ফেলে বিরক্ত করেন একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সাকিব মিয়া। এ নিয়ে দুজন বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালে স্থানীয় লোকজন মিটমাট করে দেন। পরে এরশাদ আলীসহ সবাই যে যার মতো বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে এরশাদ আলীকে ডেকে নিয়ে আবার কথা-কাটাকাটি ও মারামারিতে জড়ান সাকিব ও তাঁর সঙ্গে আসা কয়েকজন। একপর্যায়ে এরশাদ আলীকে ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয় লোকজন আহত এরশাদ আলীকে উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে অভিযুক্ত সাকিব মিয়াসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন সরকার বলেন, পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। নিহত এরশাদ আলীর শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।