ইরানে ইসরায়েলের হামলায় ফিরে আসছে অপারেশন ব্যাবিলনের স্মৃতি
Published: 17th, June 2025 GMT
মিলটা সামান্য হলেও কাকতালীয় না পরিকল্পিত, তা বলা কঠিন। তবে এটা অনুমান করা যায়, সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনশাম বেগিনের নির্দেশে ৪৪ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি দিন-তারিখে চালানো অভিযানের সাফল্য ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে কিছুটা অনুপ্রাণিত করেছে।
সেটা ছিল ১৯৮১ সালের ৭ জুন, রোববার। চিন্তা করেই বেছে নেওয়া হয়েছিল দিনটা। দুপুরের পরপরই কয়েকটি ইসরায়েলি সিএইচ-৫৩ হেলিকপ্টারে চেপে বসেন দেশটির বিমান পাইলট উদ্ধারকারী দলের কয়েকজন সদস্য।
বেলা তিনটার দিকে জর্ডান সীমান্তের পশ্চিম দিকে ১০০ ফুট ওপরে হেলিকপ্টারগুলো শূন্যে ভাসতে থাকে। তখনো এর আরোহীরা জানেন না যে ঠিক কী হতে যাচ্ছে। তবে একটা নির্দেশ স্পষ্ট, খানিক পরেই যে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে যাবে, সেগুলোর কোনোটি বিধ্বস্ত হলে বা অন্য কোনো কারণে পাইলট ভূপতিত হলে তাঁকে উদ্ধার করার জন্য অন্য যেকোনো দেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে হবে।
ঠিক বিকেল চারটার দিকে সিনাই মরুভূমির (১৯৭৯ সালে মিসরের সঙ্গে শান্তিচুক্তি হলেও তখনো ইসরায়েল পুরো সিনাই উপত্যকার দখল ত্যাগ করেনি) এৎজায়ন বিমানঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আটটি এ-১৬ যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন শুরু করল।
প্রতিটিই দুটি করে এমকে ৮৪ বোমা, দুটি করে এআইএম-৯এল সাইডউইনডার মিসাইল, একটি করে ৩০০ গ্যালন ফুয়েল ট্যাংক এবং ডানার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ৩৭০ গ্যালন করে দুটি বাড়তি ফুয়েল ট্যাংক বহন করছিল। বিমানগুলোর গন্তব্য ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল-তুয়াতিয়াহ। আর এ যুদ্ধবিমানগুলোকে পথ দেখানো ও পাহারা দেওয়ার জন্য আরও কয়েকটি এফ-১৫ বিমান যোগ দেয়।
২.ইসরায়েলের সীমান্ত পেরিয়ে জর্ডানের আকাশসীমা প্রবেশকালে আকাবা উপসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় এটা চোখে পড়ে বাদশাহ হোসেনের। তিনি তখন তাঁর ইয়টে অবকাশ যাপন করছিলেন। একজন অভিজ্ঞ যুদ্ধবৈমানিক হিসেবে হোসেন মুহূর্তেই আঁচ করে ফেলেন, কী হতে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত ইরাকে একটি সতর্কতামূলক বার্তা পাঠান। তবে অজ্ঞাত কারণে তা আর পৌঁছায়নি।
উত্তর দিকে জর্ডানের ও দক্ষিণ দিকে সৌদি আরবের রাডার ফাঁকি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো মরুভূমির সমতল থেকে মাত্র ১৫০ ফুট ওপর দিয়ে ও এলোমেলোভাবে দ্রুত এগোতে থাকে। জর্ডান ও ইরাকের জঙ্গি বিমান তাদের বাধা দেবে, এটা ধরে নিয়েই অগ্রসর হচ্ছিল ইসরায়েলি বিমানগুলো। কিন্তু বিনা বাধায় তারা ইরাকের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।
দজলা (ইউফ্রেতিস) নদী অতিক্রম করার পর ইরাকি জঙ্গি বিমানের বাধা আসবে বলে যে ধারণা করা হয়েছিল, সেটাও ভুল প্রমাণিত হলো। ফোরাত (তাইগ্রিস) নদী অতিক্রমের সময় ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলোর দৃষ্টিসীমায় চলে এল আল-তুয়াতিয়াহতে নির্মাণাধীন ওসিরাক পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্রের গোলাকার গম্বুজ। এখানেই ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ফরাসি সহায়তায় পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজ চালাচ্ছিলেন।
এফ-১৫ বিমানগুলো ততক্ষণে ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে গেছে। মূল কাজটা করবে এফ-১৬ বিমানগুলো, যেখান থেকে তখন ছাড়া হলো শিখা ও তুষ। উদ্দেশ্য মিসাইল ও রাডারকে বিভ্রান্ত করে ফাঁকি দেওয়া। লক্ষ্যবস্তুর চার মাইল দূরে থাকতে এফ-১৬ জঙ্গি বিমানগুলো পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় খাড়া উঠে গেল। আর তারপরই দ্রুতগতিতে ধেয়ে এল ওসিরাকের রিঅ্যাক্টরের দিকে। একের পর এক মোট ১৪টি বোমা বর্ষিত হলো গোলাকার গম্বুজের ওপর। আর দুটি বোমা পরল লক্ষ্যবস্তুর বাইরে। মাত্র ৮০ সেকেন্ডে কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে গেল সাদ্দাম হোসেনের পারমাণবিক বোমা তৈরির সব প্রয়াস।
এদিকে ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানের হামলায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে দ্রুত ছুটে এলেন ওসিরাকের চারপাশে মোতায়েন করা বিমানবিধ্বংসী কামানের চালকেরা। তাঁরা তখন ক্যাফেটেরিয়ায় খাচ্ছিলেন। কামান থেকে যখন গোলা ছোড়া হলো, তখন ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানগুলো দ্রুত সরে যাচ্ছে। রাডার–ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় তা চালু না করে এলোমেলোভাবে ছোড়া গোলা কোনো ক্ষতিই করতে পারেনি এসব বিমানের। কোনো রকম বাধাবিঘ্ন ছাড়া আবার সৌদি আরব ও জর্ডানের আকাশসীমা অতিক্রম করে নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে এল বিমানগুলো। মোট ৩ ঘণ্টা ১০ মিনিট আকাশে উড্ডয়ন করতে হয়েছিল তাদের।
৩.এই বিমান হামলায় একজন ফরাসি কারিগর নিহত হন। খ্রিষ্টান হওয়ার কারণে ফরাসি ও ইতালির বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কারিগরেরা রোববার সাপ্তাহিক ছুটি পালন করবে বিবেচনায় বেগিন এদিন হামলার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, যেন তাঁদের কোনো ক্ষতি না হয়। তবে ইরাকের প্রচলিত সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবারেই তাঁদের ছুটি পালন করতেন, যা ইসরায়েলিদের জানা ছিল না। অবশ্য যখন হামলা হয়, তার আগে প্রায় সবাই কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করেছিলেন।
ক্ষিপ্ত-রাগান্বিত সাদ্দাম হোসেন আকাশ প্রতিরক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত কমান্ডার ও তাঁর অধীনস্থ মেজর পদের ওপরের সব কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আরও ২৩ জন কর্মকর্তা ও পাইলটকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ইরাকে হামলার ঘটনাটি পরদিন প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে বেশ হইচই পড়ে যায়। নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে একে ‘অমার্জনীয় ও অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে ইসরায়েলে এফ-১৬ সরবরাহ বন্ধ করে। জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডাহেইম একে ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করেন। নিরাপত্তা পরিষদ কঠোর ভাষায় এ হামলার নিন্দা জানায়।
আরও পড়ুনযে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে হামলা চালাল ইসরায়েল১৪ জুন ২০২৫৪.ওই হামলার ফলে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বেগিন রাজনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পান। জুন মাসেই ছিল ইসরায়েলের নির্বাচন, যেখানে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন লেবার পার্টির নেতা শিমন পেরেজ। নির্বাচনে লিকুদ পার্টির বেগিন জয়লাভ করেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এজার ওয়াইজম্যান এ রকম কোনো অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে বেগিন সমর্থন পান তাঁর মন্ত্রিসভার কৃষিমন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন (যিনি পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন), পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইজ্যাক শামির, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাফায়েল এইটান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান ডেভিড আইভরি। ওয়াইজম্যান পদত্যাগ করলে বেগিন নিজে কিছুদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে শ্যারনের হাতে এর ভার ছেড়ে দেন।
মূলত ১৯৭৮ সাল থেকেই ওসিরাকে হামলা চালানোর পরিকল্পনা শুরু করেন বেগিন। ১৯৮০ সালের অক্টোবরে গোপনে মন্ত্রিসভায় এ হামলা পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়। তার আগে জুলাই মাস থেকে জনপরিসরে ইরাকের পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়। এটাও বলা হতে থাকে যে ইসরায়েল প্রয়োজনে এই হুমকি মোকাবিলায় হামলা চালাবে। শেষ পর্যন্ত তা–ই হয়েছে; ‘অপারেশন অপেরা’ সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে এই অভিযান সম্পন্ন করা হয়, যা ‘অপারেশন ব্যাবিলন’ নামেও পরিচিত।
৫.৪৪ বছর পর বেগিনের মতোই কট্টরপন্থী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। ২০০টি জঙ্গি বিমান দুই দফা হামলা করে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কারখানাগুলো ধ্বংস করে দেয় এবং নাতানজ ও ফরদৌতে পারমাণবিক স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
এ ছাড়া ইরানের হামলায় দেশটির সেনাপ্রধান ও ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার নিহত হন। ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ছয়জন পরমাণুবিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। এরপর অবশ্য ইরান পাল্টা আঘাত হেনেছে ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল ছুড়ে। পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, যাতে ইরানের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশি।
কয়েক বছর ধরে এ হামলা চালানোর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন সময় হামলা করার হুমকি তো দেওয়া হয়। এবার ইসরায়েল তা বাস্তবে রূপ দিল।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলা: ট্রাম্প কি পাগল হয়ে গেছেন১৩ জুন ২০২৫৬.অপারেশন ব্যাবিলনের ২৬ বছর পর ২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ইসরায়েল একই রকম হামলা চালিয়ে সিরিয়ার আণবিক কর্মসূচি স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। তবে সিরিয়ার সরকার কখনোই স্বীকার করেনি যে কোনো ধরনের পারমাণবিক কর্মসূচি তারা নিয়েছিল। তবে ইসরায়েলি হামলায় সামরিক স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছিল। ইসরায়েল ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ায় এই হামলার কথা স্বীকার করে তা বিস্তারিত প্রকাশ করে।
আবার ইরাকের ওসিরাকে ইসরায়েলি হামলার বছরখানেক আগে ইরান ছোটখাটো হামলা চালিয়ে কিছু ক্ষতিসাধন করেছিল। বড়সড় হামলা চালালে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়তে পারে, আশঙ্কায় ওসিরাক রিঅ্যাক্টরে আঘাত করেনি ইরানি জঙ্গি বিমান। কাজটা পরে সম্পন্ন করে ইসরায়েল। আর ১৯৯১ সালে অপারেশন ‘ডেজার্ট স্ট্রর্ম’–এর সময় মার্কিন বাহিনী ওসিরাকে হামলা চালিয়ে ওখানে যা অবশিষ্ট ছিল, তা গুঁড়িয়ে দেয়।
ইসরায়েলের ইরাক অভিযানে সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত হয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের কাহুতায় অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনায় একই কায়দায় আঘাত হানার চিন্তা শুরু হয়। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার গড়ে তোলার প্রয়াসে ভারতের চেয়ে ইসরায়েলই বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। ১৯৭৯ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে লেখা চিঠিতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, পাকিস্তান ও লিবিয়া মিলে আণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে।
অপারেশন ব্যাবিলনের সাফল্য ইসরায়েলকে প্রবল আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সে ভারতকে পাকিস্তানে হামলার জন্য সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ভারত-ইসরায়েল যৌথভাবে এ হামলা করবে বলে ঠিক হয়। গুজরাটের জামনগর বিমানঘাঁটিকে প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয় অভিযানের জন্য জঙ্গি বিমান ওড়াতে। আর উদমাহপুর ঘাঁটিকে নির্ধারণ করা হয় জ্বালানি পুনর্ভরণের জন্য।
১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে ইন্দিরা এ বিষয়ে সম্মতি দেন; তার আগে অবশ্য বাতাসে কথা ছড়িয়ে পড়ে যে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করতে যাচ্ছে ভারত। সে সময় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পাকিস্তানের একজন পরমাণুবিজ্ঞানী ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের প্রধান রাজা রামান্নাকে এই বলে সতর্ক করেন যে ভারত কাহুতায় হামলা করলে পাকিস্তান ট্রমবেতে ভারতীয় পারমাণবিক কেন্দ্রে পাল্টা আঘাত হানবে। তারপরও ভারত সরকার তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে থাকে। হঠাৎ হামলা চালিয়ে যথাসম্ভব ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ধ্বংস করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। সে কারণে ইসরায়েলের সহযোগিতায় গোপনে প্রস্তুতি চলতে থাকে।
কিন্তু এ ধরনের খবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ভারতকে সতর্ক করেন হামলা–পরবর্তী পরিণতির জন্য। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ গোপনে পাকিস্তানকে ভারতের পরিকল্পনা সম্পর্কে আভাস দেয়। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি টেলিভিশনে প্রচারিত এক খবরে কাহুতায় ভারতীয় হামলার পরিকল্পনার কথা ফাঁস করা হয়। পরিস্থিতি গুরুতর আঁচ করতে পেরে পাকিস্তান কাহুতার আশপাশে সামরিক প্রতিরক্ষা জোরদার করে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া এফ-১৬ দিয়ে ভারতে পাল্টা হামলা চালাবে বলে জানান দেয়।
আরও পড়ুনইরানে ইসরায়েলের হামলার আসল যে কারণ১৬ জুন ২০২৫এমতাবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী কাহুতা অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটেন। এর কিছুদিন পর তিনি দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর। ভারতীয়দের কেউ কেউ বিশেষত বিজেপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মনে করেন, ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা মারাত্মক ভুল করেছেন। তাঁরা এটাও মনে করেন যে মোদির উচিত হবে ইসরায়েলি সহযোগিতায় পাকিস্তানের আণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো। ইসরায়েল গত শুক্রবার থেকে ইরানে হামলা চালানো শুরু করার পর তাঁদের মধ্যে এ দাবি ও উত্তেজনা জোরদার হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, ১৯৮৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় এক চুক্তিতে উপনীত হয়; যার মূলকথা হলো, এক দেশ অন্য দেশের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করবে না। এই চুক্তির অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রতিবছর ১ জানুয়ারি ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লি নিজ নিজ দেশের পারমাণবিক স্থাপনার তালিকা পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করে আসছে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারত–পাকিস্তানের এ রকম ‘সমঝোতা’ কত দিন বহাল থাকবে, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে।
(তথ্যসূত্র: এয়ারফোর্স ম্যাগাজিন, এপ্রিল ২০১২; দ্য ওয়ারফেয়ার হিস্ট্রি নেটওয়ার্ক, দ্য ইকোনমিক টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়া)
আসজাদুল কিবরিয়া সাংবাদিক
*মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র জন য হয় ছ ল ইন দ র মন ত র আণব ক
এছাড়াও পড়ুন:
৫৫০ শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সশরীরে আবেদন করার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাবি প্রশাসন জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপে মেধাতালিকা প্রকাশ করে ভর্তি নেওয়ার পরো ৫৫০টি আসন শূন্য থাকায় নতুন করে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ভর্তি শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধীন ইউনিটভিত্তিক ছেলেদের ২৮৭টি ও মেয়েদের ২৬৩টিসহ মোট ৫৫০টি আসন শূন্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে ১৬৫টি, ‘বি’ ইউনিটে ৯০টি, ‘সি’ ইউনিটে ১৮৪টি, ‘সি১’ ইউনিটে পাঁচটি, ‘ডি’ ইউনিটে ৮১টি এবং ‘ই’ ইউনিটে ২৫টি আসন শূন্য রয়েছে।
এসব আসনে ভর্তির জন্য মেধা ও উপস্থিতির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের নতুন করে পছন্দক্রম ফরম পূরণ করে আবেদন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শূন্য আসনের বিপরীতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বুধবার (১৮ জুন) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিট অফিস কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে আবেদন করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সশরীরে আবেদন না করলে, পরবর্তীতে আর কোনো ধাপে ভর্তির জন্য বিবেচনা করা হবে না।
আবেদনের সময় শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও পছন্দক্রমের ফরমের কপি সঙ্গে আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। আবেদন জমা নেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুসারে পরবর্তী ধাপে ভর্তির জন্য মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী