শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। আকাশে হঠাৎ মেঘ– একটু পরেই রোদের খেলা। ভ্যাপসা গরম, আবার একটু পরেই এক পশলা বৃষ্টি। কখনও একটানা ঝরঝরে বৃষ্টি। গরম হোক কিংবা বৃষ্টি– ঘরে তো আর বসে থাকা যায় না। অফিস, বন্ধুদের আড্ডা কিংবা দাওয়াত থাকলে তো বের হতেই হয়। যারা ফ্যাশনপ্রেমী তারা মেঘাচ্ছন্ন কিংবা বৃষ্টিমুখর দিনেও নিজেদের স্টাইলের ব্যাপারে থাকেন সচেতন। তাদের কাছে বর্ষা মানে শুধু বৃষ্টি নয়, বরং আরাম, রং আর বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলা। এ সময়ের উপযোগী, ব্যবহারিক এবং স্টাইলিশ পোশাক নিয়েই লিখেছেন আশিকা নিগার
আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে–/আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে।/এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বর্ষা এলেই প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে ওঠে। আকাশ থাকে মেঘে ঢাকা, হঠাৎ নেমে আসে ঝমঝম করে বৃষ্টি। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে ভেজা মাটির ঘ্রাণ, যা মনকে করে তোলে স্মৃতিকাতর। কারও হাতে চায়ের কাপ, কেউ জানালার ধারে বসে বাদল দিনের গান শোনে, আবার কেউ বৃষ্টিতে ভেজে পরম আনন্দে।
ষড়ঋতুর এই দেশে প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় সাজগোজের ধরনও। অনেক ফ্যাশনপ্রেমীর কাছে বর্ষা প্রিয় ঋতু। কারণ এ সময়টায় পোশাক পরার ক্ষেত্রে আবহাওয়ার দিক থেকে অনেকটা স্বস্তি মেলে। তবে বর্ষার দিনে পোশাক নির্বাচন শুধুই স্টাইলের জন্য নয়, দরকার ব্যবহারিক দিকটাও মাথায় রাখা। এ সময় ভেজা রাস্তা, কাদা ও হঠাৎ বৃষ্টি যেন সবসময়ই প্রস্তুত আমাদের চমকে দেওয়ার জন্য। তাই প্রয়োজন এমন পোশাক, যা আরামদায়ক, সহজে শুকায়, আবার দেখতেও ফ্যাশনেবল।
বর্ষায় কেন ভিন্ন পোশাক দরকার?
বর্ষাকাল মানেই কখনও ঠান্ডা, কখনও ভ্যাপসা গরম আর মাঝেমধ্যে টানা বৃষ্টি। সকালে রোদ থাকলেও বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি এসে সব ভিজিয়ে দেয়। ভারী কাপড় ভিজে গেলে তা শুকাতে সময় নেয় এবং পরতেও অস্বস্তি হয়। আবার হালকা পোশাক না হলে গা ঘামে বা কাদা লেগে যায়। তাই বর্ষার জন্য এমন পোশাক দরকার, যা হালকা ও আরামদায়ক, দ্রুত শুকায়, সহজে পরিষ্কার হয়, দাগ লুকাতে পারে এবং দেখতে ট্রেন্ডি।
কোন ধরনের কাপড় সবচেয়ে ভালো?
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার কাপড়ের গঠনে। সুতি কাপড় খুব আরামদায়ক হলেও বর্ষায় এড়াতে পারলে ভালো। কারণ এ কাপড় ভিজে গেলে সহজে শুকায় না। বরং এ সময় পলিয়েস্টার, সিনথেটিক, রেয়ন, নাইলন বা ব্লেন্ডেড ফেব্রিক সবচেয়ে কার্যকর। এ কাপড়গুলো হালকা, দ্রুত শুকায় এবং শরীরেও আরামদায়কভাবে বসে যায়।
ফিটিং ও রঙের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
বর্ষায় একদম টাইট পোশাক না পরাই ভালো। কারণ ভিজলে তা শরীরে লেপ্টে যায়। আবার অতিরিক্ত ঢিলেঢালা পোশাক রাস্তায় চলতে গেলে কাদায় আটকে যেতে পারে। তাই মাঝারি ফিট বা আধা আঁটসাঁট পোশাকই বেশি আরামদায়ক।
রঙের দিকেও নজর দিন। হালকা রঙে দাগ পড়লে তা সহজে ওঠে না। ভিজলে হালকা রঙের পোশাক স্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। তাই বর্ষায় ডার্ক শেড যেমন– গাঢ় নীল, ধূসর, বাদামি, কালো, গাঢ় সবুজ ইত্যাদি রং বেশি মানিয়ে যায়।
নারীর জন্য বর্ষার ফ্যাশন
বর্ষায় মেয়েদের ফ্যাশন মানেই স্বস্তি আর স্টাইলের মিশেল। কুর্তি-লেগিংস, পালাজো, শর্ট টপস অথবা ফিউশন পোশাক এ সময় আরামদায়ক ও ট্রেন্ডি। পাতলা সিনথেটিক ওড়না বেছে নিন, যা দ্রুত শুকায়।
অফিসে যাতায়াত করা নারীর জন্য হালকা রেইনকোট বা ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট অত্যন্ত কার্যকর। যারা শাড়ি পরতে পছন্দ করেন, তারা জর্জেট, সফট সিল্ক, আর্টিফিশিয়াল শিফন পরতে পারেন। এ শাড়িগুলো হালকা ও সহজে শুকায়। তবে কটন বা তাতের শাড়ি ভিজে গেলে খুব ভারী হয়ে যায়। তাই সেগুলো বর্ষায় এড়িয়ে চলাই ভালো।
ছেলেদের জন্য বর্ষার পোশাক
পুরুষের জন্য বর্ষায় হালকা এবং দ্রুত শুকানো যায় এমন পোশাক বেশি উপযোগী। হাফহাতা শার্ট, টি-শার্ট, ট্র্যাক প্যান্ট, পলিয়েস্টার পোলো শার্ট বা হালকা ট্রাউজার পরা ভালো। জিন্স বর্ষায় না পরাই ভালো। কারণ তা একবার ভিজে গেলে শুকাতে অনেক সময় লাগে এবং ভারী হয়ে যায়।
ফ্যাশন হাউস ‘কে ক্র্যাফট’-এর স্বত্বাধিকারী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশের বর্ষা ঋতুর দিনগুলো কখনও উষ্ণ, কখনও আরামের, আবার কোনো কোনো দিন থাকে বর্ষণমুখর। যার কারণে এ সময়ের পোশাকের ফেব্রিক নির্বাচনে আরামের জন্য সুতি, দ্রুত বৃষ্টিতে ভিজে গেলে জর্জেট বা এ জাতীয় কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। রং হিসেবে প্রাধান্য নীল এবং নীলাভ নানা শেড। পাশাপাশি প্যাস্টেল নানা শেডের পোশাক এই সময়ের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের চাহিদা মাথায় রেখে আমরা ঋতুভিত্তিক উপযোগী পোশাকের আয়োজন করে থাকি।’
‘রঙ বাংলাদেশ’-এর কর্ণধার সৌমিক দাস জানান, ‘বর্ষায় পোশাক নির্বাচন করতে হলে দেখতে হবে কাপড়টি কেমন, রং কেমন এবং ব্যবহারিক দিক কী। এমন কাপড় নিতে হবে, যা দ্রুত শুকায়, দাগ লুকাতে পারে এবং আরামদায়ক হয়। কাপড়ের রঙে ডার্কশেড হলে বর্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্যাটার্ন হালকা, স্টাইল মিনিমাল এবং লেয়ারে কম– এই হলো বর্ষার ফ্যাশনের চাবিকাঠি।’
কোথায় পাবেন
দেশীয় ফ্যাশন হাউসসহ রাজধানী এবং জেলা শহরের প্রতিটি মার্কেটেই পাওয়া যাচ্ছে বাদল দিনের বাহারি পোশাকের সমাহার ৷
বর্ষা উপযোগী ফিউশন ড্রেস, কুর্তি, টপস, রেইন ফ্রেন্ডলি ফেব্রিক ব্যবহার করে তৈরি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ‘কে ক্র্যাফট’, ‘রঙ বাংলাদেশ’, ‘বিশ্ব রঙ’ ইত্যাদিতে।
‘আড়ং’-এ পাওয়া যাচ্ছে হালকা সিল্ক, শিফন, জর্জেটের শাড়ি ও পোশাকের সব কালেকশন, যা বর্ষার জন্য উপযোগী।
‘ইয়েলো’, ‘টুয়েলভ’, ‘সেইলর’, ‘লারিভ’, ‘সারা’তে আধুনিক কাস্টম-কাট পোশাক, স্নিগ্ধ রেইন ওয়্যার, তরুণ-তরুণীদের জন্য বর্ষাকালীন ক্যাজুয়াল কালেকশন তো আছেই। তাছাড়া তুলনামূলক কম দামে রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, বঙ্গবাজার, উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে পাওয়া যাচ্ছে সব ধনের সংগ্রহ। ঘরে বসে কেনাকাটা করতে চাইলে অনলাইন শপ তো আছেই।
বর্ষায় কিছু বাড়তি পরামর্শ
বর্ষাকালে শুধু পোশাক নয়, কিছু বাড়তি সচেতনতাও জরুরি। বাইরে বের হলে ছাতা বা রেইনকোট রাখুন। ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ ব্যবহার করুন। প্লাস্টিক বা পানি সহনশীল জুতা পরুন। ভিজে গেলে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করুন। মাথা ও পা শুকনো রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষা শুধু ভিজে যাওয়া নয়, অনুভব করার ব্যাপার। তেমনি এ সময়ে পোশাক শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, আরাম, যত্ন ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্যও জরুরি। ভেজা জামাকাপড় থেকে সর্দি-কাশি বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। তাই এমন পোশাক নির্বাচন করুন, যা আরাম দেয়, সহজে শুকায় আর দেখতে সুন্দর। আপনি যেমন থাকবেন স্বস্তিতে, তেমনি স্টাইলও থাকবে বজায়। v
মডেল: আলিশা শরীফ; মেকওভার: শোভন’স মেকওভার; পোশাক: কে ক্র্যাফট;
ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ য শন এমন প শ ক ব যবহ র ক ষ র জন য বর ষ ক ল মন প শ ক স বস ত বর ষ র বর ষ য় এ সময় সবচ য় সময় র দরক র উপয গ
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা