Samakal:
2025-08-03@22:43:38 GMT

সুফলা এক বাংলাদেশ

Published: 19th, June 2025 GMT

সুফলা এক বাংলাদেশ

দেশে ফলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত দুই দশক ধরেই ফল উৎপাদনে টেকসই ও ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। ছোট দেশ, জমি কম। তবুও বিশ্বের শীর্ষ ১০ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল উৎপাদনকারী দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। একসময় মানুষ বাড়ির আশপাশের ছোট বাগানে সীমিত পরিমাণ ফল উৎপাদন করত। এখন দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফলের চাষ ছড়িয়ে পড়ছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত ১৮ বছরে ফল উৎপাদন গড়ে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ করে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশের মানুষের ফল বেশি খাওয়ারও তথ্য দিচ্ছে। বিবিএসের খানা জরিপে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দেশের একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৯৫ দশমিক ৪ গ্রাম ফল খেয়েছেন। ২০১০ সালে এই গড় ছিল ৪৪ দশমিক ৭ গ্রাম। এর মধ্যে ২০১৬ সালে অবশ্য ফল খাওয়া কমে গিয়েছিল, জনপ্রতি গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ গ্রাম। 

একসময় দেশে কাঁঠাল ও আম ছিল প্রধান ফল। এখন অন্তত ২২ প্রজাতির ফল বাংলাদেশের মানুষ নিয়মিত খাচ্ছে। বার্ষিক কাঁঠাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়। আম উৎপাদনে সপ্তম। পেয়ারা উৎপাদনেও সপ্তম। এখন জাম, বরই, কামরাঙা, কতবেল, লেবু, আনারস, লটকন, আতা, সফেদার মতো স্থানীয় ফলের পাশাপাশি স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুট, মাল্টা, রামবুটান ইত্যাদি বিদেশি ফলের চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে।

এক দশক আগে দেশে প্রায় ৫৬ ধরনের ফল চাষ হতো। এখন ৭২ ধরনের ফল চাষ হচ্ছে। ফল চাষে বৈচিত্র্যের পাশাপাশি নতুন বাজারও তৈরি হয়েছে। রপ্তানি বাড়ছে। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম, লিচু, পেয়ারার চাহিদা রয়েছে।

আয়তনে বিশ্বে ৯৪তম, জনসংখ্যায় অষ্টম বাংলাদেশ। সবচেয়ে কম জমি আর বেশি মানুষের এই দেশে বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা 

দ্বিগুণের বেশি, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। চার-পাঁচ বছর নতুন ফল ড্রাগন ও অ্যাভোকাডো এবং দেশি ফল বাতাবিলেবু, তরমুজ, খরমুজ, লটকন, আমড়া ও আমলকীর উৎপাদনও বেড়েছে।

বছর পাঁচেক আগেও ড্রাগন ছিল বড় সুপারশপের ফল। দাম বেশি থাকায় কেবল অবস্থাপন্ন ক্রেতারা কিনতেন বিদেশ থেকে আসা এ ফল। এখন ফুটপাতের দোকান কিংবা ভাসমান ভ্যানেও শোভা পাচ্ছে ড্রাগন। খুচরা বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ড্রাগন ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড.

সাত্তার মণ্ডল বলেন, দেশে আশাব্যঞ্জক হারে বিদেশি ফল উৎপাদন হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে আমদানিনির্ভরতাও কমছে। এ খাতে উৎপাদন বাড়াতে এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে কিছু নীতি-সহায়তা দিতে হবে সরকারকে। এটি আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি, মূলধন জোগানসহ বিভিন্নভাবে হতে পারে। তিনি বলেন, এখনও ফল সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও প্যাকেজিং ব্যবস্থা আধুনিক হয়নি। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

একসময় বেশির ভাগ স্থানীয় ফল গ্রীষ্মের তিন মাস পাওয়া যেত। মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করত মে, জুন ও জুলাই মাসের জন্য। এ সময় আম, লিচু, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফল বাজারে আসে। দৃশ্যপট এখন পাল্টেছে। অনেক ফল এখন সারা বছর উৎপাদন হয়, পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ বলেন, আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারাসহ অনেক ফলের নতুন জাত এসেছে। কিছু জাত আগাম এবং দেরিতে ফলন দেয়। ফলে সারা বছর ফলের সরবরাহ থাকে। 

ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম সমকালকে বলেন, দেশি ফলের উৎপাদন বেশ ভালো। অনেক বিদেশি ফলও এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় মৌসুমি ফলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে এবং দামও স্থিতিশীল থাকে। 
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফলের আমদানি খরচ বেড়েছে। আগে ২০ কেজি আপেলের প্যাকেটে শুল্ক দিতে হতো ৩০০ টাকা। এখন সেটা ১ হাজার ৪০০ টাকা। এক কেজি আঙুরে দিতে হতো ৩০ টাকা, এখন ১০০ টাকা। আবার ডলারের দাম বেশি। আবার বিদেশি ফল সবুজ মাল্টা, ড্রাগন এগুলো দেশে উৎপাদন হচ্ছে। তাই বিদেশি ফলে ওপর নির্ভরতা কমছে, আমদানিও কমছে।

ফল উৎপাদনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংরক্ষণ একটি বড় সমস্যা। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, সরকারের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী আধুনিক কোল্ডস্টোরেজ স্থাপনের কাজ চলছে। দীর্ঘমেয়াদি ফল সংরক্ষণের জন্য নতুন প্রযুক্তি ও গবেষণায় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। কাঁঠাল, আম ও আনারস শুকিয়ে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যাতে সারা বছর ফল পাওয়া যায় এবং খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় থাকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফল ফল চ ষ দশম ক সরক র আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদন জটিলতায় আটকে আছে জবির মিলনায়তন সংস্কারের কাজ, ভোগান্তি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র মিলনায়তনের সংস্কারকাজে ধীরগতিতে ভোগান্তি পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মিলনায়তনটি দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ কিংবা মুক্তমঞ্চে। তবে কাজের ধীরগতির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনজনিত জটিলতাকে দুষছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে, মিলনায়তনের নতুন কাঠামো ও শৌচাগার নির্মাণের প্রকল্পটি এখনো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদন পায়নি। কাজের গতি কম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দুইবার চিঠি পাঠানো হয়েছে, এরপরও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন সংস্কার ও নতুন শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এককালীন প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ‘সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে শর্তসাপেক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘স্থাপতিক’ সংস্কার কাজের অনুমোদন পায়।

তবে টাকা বরাদ্দের দেড় বছর পরও সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করতে পারেনি। ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে মিলনায়তনের নতুন কাঠামো প্রণয়ন, শৌচাগার নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণে সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সংস্কারকাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও দীর্ঘ জটিলতার পর ৭ ফেব্রুয়ারি মিলনায়তনের সংস্কারকাজ শুরু হয়। কিন্তু গত সাত মাসে মিলনায়তনের ২০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন দেখা যায়, মিলনায়তনে প্রতিদিন দুই থেকে তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকেরা বলছেন, সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হলে এই সংস্কারকাজ অনেক আগেই শেষ করা যেত। কিন্তু, কোম্পানি কাজটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। তারা পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে না এবং বারবার নির্দেশনা পরিবর্তনের ফলে কাজের অগ্রগতি বাড়েনি। আগামী চার মাসের মধ্যে মিলনায়তন সংস্কার ও নতুন শৌচাগার নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তিনবার শৌচাগার নির্মাণের জায়গা পরিবর্তন হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র মিলনায়তন দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকায় সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে সংস্কারকাজ চলায় একাডেমিক, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান স্থগিত বা সময় পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ কিংবা মুক্তমঞ্চে আয়োজিত হচ্ছে।

কাজের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থাপতিকের কর্ণধার আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নগরভবনে চলা আন্দোলনের ফলে নাগরিক সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। ফলে সংস্কারকাজ সংশ্লিষ্ট কিছু অনুমোদন আটকে গেছে। তাই কাজ যথাযথভাবে আগানো যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদন হয়ে গেলে কাজের গতি বাড়বে এবং তিন মাসের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংস্কার কাজে কিছু পরিকল্পনা পরিমার্জন করেছে। পরিমার্জিত প্রকল্পের অনুমোদন নিতে হবে নগরভবন থেকে। কিন্তু আন্দোলনের ফলে নগরভবন বন্ধ থাকায় অনুমোদন নেওয়া যাচ্ছে না। তাই সংস্কার কাজ ধীর গতিতে হচ্ছে।

সংস্কারকাজ সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গঠিত মনিটরিং টিম সদস্য হিসেবে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজের অগ্রগতির জন্য ইতিমধ্যে আমরা দুইবার চিঠি পাঠিয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবে বলে জানিয়েছে।’

মিলনায়তনটি চালু না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা-সেমিনার আয়োজন করতে পারছে না বলে জানান উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংস্কারকাজ আমাদের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে না। তবুও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য আমরা তাগাদা দিচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ