গাজীপুরের শ্রীপুরে যাত্রীবাহী গাড়ি থামিয়ে ডাকাতির সময় চলন্ত গাড়ির চাপায় এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ডাকাতদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক সিএনজি অটোরিকশাচালকও।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা-বরমী আঞ্চলিক সড়কের সাতখামাইর গজারি বনের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সিএনজি অটোরিকশা চালকের নাম আবুল কালাম (৪০)। তিনি উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের বাসিন্দা মো.

গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। নিহত ডাকাত সদস্যের নাম মো. আরিফুল ইসলাম (২০), তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

শুক্রবার (২০ জুন) শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক জানান, ডাকাতির সময় স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের চার সদস্যকে আটক করা হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া অটোচালক আবুল কালাম ও ডাকাত সদস্য আরিফুল ইসলাম পরে মারা যান।

ওসি আব্দুল বারিক আরও জানান, আটককৃত চার ডাকাতের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

অটোচালক আবুল কালামের ছেলে রনি বলেন, ‘বাবা রাত ১টার কিছু পরে মাওনা থেকে বরমীর দিকে রওনা দেন। পথে সাতখামাইর এলাকায় ডাকাতরা তার গাড়িকে থামাতে সিগন্যাল দেয়। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বাবা গাড়ি না থামানোয় তারা তাকে এলোপাতাড়ি মারধর ও কুপিয়ে আহত করে।’

পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

একই ঘটনায় পিকআপচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকাতরা আমার গাড়িও থামিয়ে টাকা-পয়সা ও মোবাইল ফোন লুটে নেয়। এরপর একসঙ্গে পাঁচটি সিএনজি আসে, এর একটি ডাকাতদের সিগন্যাল উপেক্ষা করে দ্রুত চলে যায়। এতে এক ডাকাত গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হয়।’

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শারমিন আক্তার বলেন,  ‘আহত ডাকাত সদস্যের মাথায় মারাত্মক আঘাত ছিল এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান।’

ঢাকা/রফিক/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ক ত সদস য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ