‘প্রতারক’ ইসাহাক আলী মনির শাস্তি দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
Published: 1st, July 2025 GMT
বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী ‘প্রতারক’ ইসাহাক আলী মনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও পাওনা টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ‘ইসহাক আলী মনি একজন মহা প্রতারক। কখনও কর্পোরেট হাউজের মালিক, কখনও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, কখনও হাসপাতালের মালিক, আবার কখনও সংবাদপত্রের মালিক সেজে অফিস ডেকোরেশনের নামে আসবাবপত্র, এসি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ অফিস সাজানোর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাকিতে নিয়ে আর টাকা দেয় না। টাকা চাইলে নানান টালবাহানা করতে থাকেন। মামলা করতে বলেন। তার এই প্রতারণার ফাঁদে অনেক ব্যবসায়ী আজ নিঃস্ব হয়ে বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।’
ব্যবসায়ীরা জানান, ইসাহাকের গ্রামের বাড়ি কখনও কুষ্টিয়া, কখনও পাবনা, কখনও সিরাজগঞ্জ বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বলে থাকেন। প্রকৃত ঠিকানা কখনোই ব্যবসায়ীদের উল্লেখ করেন না। ঢাকায় নিজ কার্যালয়ের ঠিকানা কাউকে দেন না। তবে মাঝেমধ্যে বড় ফ্ল্যাট নিয়ে অফিস সাজানোর নামে এসব প্রতারণা করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার প্রতারণার ফাঁদে ছোট ব্যবসায়ীরাই শুধু নয়, বড় কর্পোরেট হাউস গ্রামীণ ফোন, অটবি, ফ্রিজ এসি সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরাও সর্বস্বান্ত। তার চটকদার কথায় সকলেই মুগ্ধ হয়ে যায়। আর এ সুযোগেই প্রতারণা করে আসছেন ইসাহাক আলী মনি। এ প্রতারকের কাছে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা পাওনাদার। অবিলম্বে এই প্রতারককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ব যবস য হ ক আল
এছাড়াও পড়ুন:
সদ্য জন্ম দেওয়া সন্তানসহ ক্লিনিকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থ
অদম্য ইচ্ছাশক্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শরীয়তপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সন্তান জন্মের দুই দিন পর রবিবার (২৯ জুন) ক্লিনিকেই এইচএসসি’র দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
শিক্ষার্থীর পরিবার জানায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাশার গ্রামের ইশা আলম নামে এই শিক্ষার্থীর বিয়ে হয় গত বছরের ২৮ জুন। তার বাবার নাম মো. শাহআলম সিকদার। স্বামী একই উপজেলার কাশাভোগ এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে মাহবুবুর রহমান তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলেন ইশা। গত বৃহস্পতিবার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিয়েছিলেন ইশা। শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার নিপুণ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল তার বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা।
ইশার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজে। তবে শারীরিক অবস্থার কারণে কলেজের শিক্ষক মো. মাসুম মিয়ার পরামর্শে কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ক্লিনিকেই পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অধ্যক্ষের অনুমতি পাওয়ার পর রবিবার সকালে একজন মহিলা শিক্ষক ও একজন মহিলা পুলিশ উপস্থিত থেকে নিপুণ ক্লিনিকের বিছানাতেই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
ইশা আলম বলেন, ‘‘আমি আইন পড়তে চাই, বিচারক হয়ে নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়াতে চাই। সন্তান জন্মের পরও পরীক্ষা দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আল্লাহ, শিক্ষক, পরিবার, সহকর্মী ও চিকিৎসকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘গর্ভকালীন সময়েই পরীক্ষার সময় চলে আসে। তবে আমি মনোবল হারাইনি। পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগিতায় এই অবস্থাতেও পরীক্ষায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। আমি বিশ্বাস করি, মনোবল ধরে রাখলে প্রত্যেক মেয়েই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।’’
ইশার মা সুহাদা বেগম বলেন, ‘‘মেয়ের এমন সাহস আর মনোবল দেখে গর্বিত। এমন অবস্থায়ও যে সে পরীক্ষা দেবে, তা কখনও ভাবিনি। সবাই দোয়া করবেন আমার মেয়ে ও নাতনির জন্য।’’
ইশার স্বামী তুষার বলেন, ‘‘ইশা সবসময় পড়াশোনার বিষয়ে আমাকে পাশে থাকতে বলেছে, আমি চেষ্টা করেছি সাপোর্ট দিতে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরপরই পরীক্ষা দেবে তা কখনও ভাবিনি। পরে আমি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই। এরপরেই স্যারসহ সকলে ওকে সহযোগিতা করেছেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। আল্লাহ ওদের সুস্থ রাখুক।’’
ক্লিনিকের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে আরা বেগম রোজী বলেন, ‘‘২৭ জুন রাতে প্রসববেদনা নিয়ে ইশা আমাদের কাছে এসেছিলেন। তার প্রবল ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা দেওয়ার। তার মনের শক্তির কারণে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা দিয়েছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছেন।’’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেন্দ্র সচিব ও সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওয়াজেদ কামাল বলেন, ‘‘শিক্ষকরা সবসময় মানবিক। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা প্রকাশ করে ইশা আলম। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে এক নারী শিক্ষক ও নারী পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। ইশার হাতের লেখা ছিল সুন্দর, পরীক্ষাও দিয়েছে ভালো। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর কাছে প্রার্থণা, একদিন এই শিশুকন্যাও গ্র্যাজুয়েট হয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।’’